টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুয়াজানী গ্রামের মৃত আজগর আলীর ছেলে মো. বাদশা মিয়া ১টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূর্যোগ সহনীয় ঘর বরাদ্দ পেয়েছে। কিন্তু এই ঘরের নির্মান সামগ্রী (ইট, বালি, সিমেন্ট, কাঠ, টিন, দরজা, জানালা ইত্যাদি) সকল নির্মান সামগ্রী পাকা রাস্তা থেকে ঘর নির্মান স্থানে বাদশা মিয়ার নিজ খরচে বহন করে আনতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে বাদশা মিয়া এর বাড়িতে গিয়ে তার সাথে কথা বলে জানা যায়, নাগরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তারা মিয়া এর নির্দেশে গৃহ নির্মান সামগ্রী ইট, বালি, সিমেন্ট, কাঠ, টিন, দরজা, জানালা ইত্যাদি নাগরপুর- সলিমাবাদ রোডের কাঠুরি চৌরাস্তা থেকে বাদশা মিয়ার বাড়িতে নিজ খরচে নিতে হয়েছে। আর এ সব গৃহ নির্মান সামগ্রী প্রধান রাস্তা থেকে নিজ বাড়িতে নিতে কায়িক শ্রম ছাড়াই তাকে গুনতে হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, ১ টাকা দরে ১০ হাজার ইট, গাড়ি প্রতি ১ হাজার টাকা দরে ৫ গাড়ি বালু, ১০ টাকা বস্তা দরে ৮৫ বস্তা সিমেন্ট পরিবহন খরচ দিয়ে পাকা রাস্তা থেকে তার বাড়িতে আনতে হয়েছে। এছাড়াও কাঠ, টিন, দরজা, জানালা সহ সকল নির্মান সামগ্রী তাকে নিজ দায়িত্বে বহন করে নির্মান সাইটে আনতে হয়েছে। এতে করে তার প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, বলে জানিয়েছেন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার এর কড়া নির্দেশেই দরিদ্র রিকশা চালক বাদশা মিয়ার একমাত্র অবলম্বন ১টি বাছুর বিক্রি করে জোগান দিতে হয়েছে নির্মান সামগ্রী পরিবহনের টাকার, এমনটিই জানিয়েছেন বাদশা মিয়ার স্ত্রী। তিনি আরো বলেন, ঘরে ৯ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য অনেক কষ্টে ১টি ষার বাছুর পালন করছিলাম। মেম্বারের নির্দেশে ঘরের মালপত্র আনতে গিয়ে বাছুরটি বিক্রি করতে হয়েছে। তখন জানতাম না, যে আমাদের এসব টাকা দিতে হবে না। কিন্তু পরে যখন জানতে পেরেছি তখন আমার স্বামী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে নাগরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তারা মিয়া বলেন, আমি শুনছি বাদশা মিয়া ৩ লাখ টাকার একটি ঘর পেয়েছে। আমি, হুমায়ুন মেম্বার, নুরু মেম্বার ও এ কে এম কামরুজ্জামান মনি চেয়ারম্যান মিলে ঐ ঘরটির কাজ তদারকি করি। আমরা বাদশা মিয়াকে মালামাল পরিবহনের জন্য কোন নির্দেশ দেইনি। এসব ঘরের কাজ আমরা পিআইও সাহেবের নির্দেশেই করেছি। একটা দিনও তার তদারকি ছাড়া কাজ হয়নি। আমরা ঘরের কাজ শেষ করেছি, বিলও আমরা পাইছি। বিল যা রাখার রাইখা পিআইও সাহেব আমাদের বাকি টাকা দিয়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে নাগরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম কামরুজ্জামান মনি এর সাথে তার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে কথা বলতে গেলে, তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে এবং সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমি কোন সাক্ষাৎকার দেই না। তোমার যা ইচ্ছে, যে ভাবে ইচ্ছে লিখে দিও। তাতে আমার কিছু যায়, আসে না। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাগরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের উল্লেখযোগ্য ইউপি সদস্য (মেম্বারগণ)।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) আবু বকর বলেন, ঘর গ্রহীতার কায়িক শ্রম ছাড়া কোন প্রকার অর্থনৈতিক লেনদেন বা খরচের কোন নির্দেশনা আমাদের কাছে নেই। আমরা এমন বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে যদি কেউ আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় তবে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এছাড়া যদি কেউ এ ধরনের কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আগামীনিউজ/জাহিদ/জেএস