ঢাকাঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে বারবার অস্ত্র ঠেকিয়ে ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ছাত্র ইউনিয়ন। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগের আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ছাত্র সংগঠনটি।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টম্বর) দুপুরে সংগঠনটির দপ্তর সম্পদক মাহমুদুল হাসান হৃদয় স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত এবং মওলানা ভাসানী হলে ছাত্র নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানানো হয়।
‘ছাত্রলীগ নিপীড়নকারীকে বাঁচাতেই তৎপর’ বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আবাসিক হলগুলোতে আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি এখন দৈনন্দিন ঘটনায় পরিনত হবার পথে। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী হয়েও আবাসিক হলে টর্চার সেল পরিচালনা করার মতো ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকিস্বরূপ। এগুলো ক্ষমতার অসুস্থ বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়।’
‘আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণ, ক্ষমতার অসুস্থ বহিঃপ্রকাশ’ শীর্ষক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বিচারহীনতার দীর্ঘ সংস্কৃতি ছাত্রলীগকে দিনকে দিন আরো বেপরোয়া করে তুলছে। ক্ষমতাকাঠামো টিকিয়ে রাখতে ছাত্রলীগ ও প্রশাসন আজ যৌথ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, যার ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।’
আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ছাত্র নিপীড়নের ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়, ‘গত ১৬ ও ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম বরকত হলে শিক্ষার্থী সায়েম হাসানকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে নিপীড়ন করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে প্রশাসনের নীরবতায় বাধ্য হয়ে সায়েম আদালতে মামলা করেন।’
এদিকে শাখা ছাত্রলীগের উপ তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জাহিদ হাসান ইমনকে মারধরের বিষয়ে বলা হয়, ‘গত ১৩ আগস্ট মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা ইমনের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে ৪১ ব্যাচের সাবেক ছাত্র আরমান খান যুবোর বিরুদ্ধে। নির্যাতনের সময় তার পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নিজ দলীয় নেতা হওয়ার পরেও ছাত্রলীগ নিপীড়নকারীকে বাঁচাতেই তৎপর ভূমিকা পালন করছে।’
নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘অবিলম্বে শহীদ সালাম-বরকত এবং মওলানা ভাসানী হলে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
যুক্ত বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি ইমতিয়াজ অর্ণব এবং সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় বলেন, ‘প্রশাসনের কার্যক্রম এখন শুধুই লোকদেখানো এবং অকার্যকর ‘তদন্ত কমিটি’ গঠনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কাজেই, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ।’
তাঁরা আরো বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনোরকম সহিংসতার আশঙ্কায় আমরা শঙ্কিত।’
বিবৃতিতে ছাত্র ইউনিয়ন ক্যাম্পাস থেকে আগ্নেয়াস্ত্র অপসারণের দাবি জানিয়ে বলে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক হল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র অপসারণ করে ক্যাম্পাসকে সুরক্ষিত করতে হবে। সেইসাথে অছাত্রদের হল থেকে বহিস্কার করতে হবে এবং গণরুম-গেস্টরুম প্রথা বাতিল করতে হবে।’
সৈকত ইসলাম /এমআইসি