ঢাকাঃ ‘জালিয়াত’ করে নিয়োগ, সেই শিক্ষক তাবিউরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ।
নিয়োগ বাছাইবোর্ডের জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সেই শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধানের বিরুদ্ধে চাকরী স্থায়ীকরণ স্থগিত ও সাময়ীক বরখাস্ত সহ আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একই বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হক।
গত ২০ সেপ্টেম্বর মাহমুদুল হক এ লিখিত অভিযোগ দেন। আজ রবিবার এ সংক্রান্ত একটি কাগজ সাংবাদিকদের হাতে এসেছে।
অভিযোগ পত্রে তিনি জানান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এ ১৩ জানুয়ারি ২০১২ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে বিজ্ঞাপিত প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক দুইটি পদের জন্য নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২২জন প্রার্থীর মধ্যে নিয়োগ বাছাইবোর্ড অপেক্ষামান তালিকার প্রথম মোহা. মাহামুদুল হক এবং নিয়ামুন নাহারকে দ্বিতীয় হিসেবে সুপারিশ করে। উক্ত নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সুপারিশে বলা হয়: “চূড়ান্তভাবে মনোনয়নপ্রাপ্ত আবেদনকারী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করতে অপারগ হলে অপেক্ষমান তালিকা থেকে প্রথম জনকে নিয়োগ করার সুপারিশ করা হলো। অপেক্ষমান তালিকার প্রথমজন যোগদানে অপারগ হলে অপেক্ষমান তালিকার দ্বিতীয় জনকে নিয়োগ করার জন্য সুপারিশ করা হলো।”
মেধা তালিকা থেকে চূড়ান্তভাবে মনোনয়নপ্রাপ্ত একজন যোগদান না করায় অপেক্ষমান তালিকার প্রথম হিসেবে আমাকে (মোহা. মাহামুদুল হক) যোগদান করানোর কথা। কিন্তু আমাকে নিয়োগ না দিয়ে বাছাইবোর্ডের সুপারিশবিহীন প্রার্থী তাবিউর রহমান প্রধান জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে নিয়োগ পায়।
অভিযোগপত্র তিনি উল্লেখ করেন, নিয়োগ বাছাইবোর্ডের সুপারিশপত্রে অপেক্ষমান তালিকায় তৃতীয়জনের কোন সুপারিশ না থাকা সত্বেও তাবিউর রহমান জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পায়। বাছাইবোডের্র সুপারিশ ও ২২তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অমান্য করাসহ জালিয়াতি করে তাবিউর রহমান নিয়োগ পায়। ২২তম সিন্ডিকেটেও তাবিউর রহমানের নিয়োগ অনুমোদিত হয়নি। কেননা অপেক্ষমান তালিকায় (প্রিন্টটেড কপি) কলম দিয়ে হাতে জালিয়াতি করে লেখা “যে কাউকে” শব্দটি বাতিল করা হয়। এরপরেও তাবিউর রহমানের নাম লেখা হয় “যে কাউকে” অনুসারে ২২তম সিন্ডিকেটের কার্যবিবরণীতে অবৈধভাবে। এসব বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৯-এর ৩৪ (৩) ধারা এবং দেশের বিদ্যামান সংশ্লিষ্ট আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। উক্ত নিয়োগ বাছাইবোর্ডের সুপারিশপত্রে (প্রিন্টটেড কপি) “মেধাক্রম” শব্দটি কলম দিয়ে কেটে “যে কাউকে” শব্দটি বসিয়ে এবং সিরিয়াল নম্বর ৩ লিখে জালিয়াতি করা হয়েছে। জালিয়াতি করে তাবিউর রহমান নিয়োগ নিশ্চিত করেছে। এমনকি, তাকে অবৈধভাবে সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে পরে পদোন্নতিও দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ বাছাইবোর্ড এবং সহযোগী/অধ্যাপক নিয়োগ বাছাইবোর্ড দুটি পৃথক বোর্ড। তাবিউর রহমান প্রধান দরখাস্ত করেছিল প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক (দুইটি শুন্য পদ) এর বিপরীতে প্রভাষক পদে। অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদ বিজ্ঞাপিত হলেও এ পদে কোন নিয়োগ বাছাইবোর্ড অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে বিজ্ঞাপিত অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদও ব্লক থেকে যায়। তাবিউর রহমান অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে কোন দরখাস্তও করেননি। অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদ বিজ্ঞাপিত থাকা অবস্থায় এবং উক্ত পদে কোন বাছাইবোর্ড অনুষ্ঠিত না হওয়া সত্বেও তাবিউর রহমান প্রধান (যদিও প্রভাষক পদে আবেদন করেছিল) প্রভাব বিস্তার করে অবৈধভাবে অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে নিয়োগ পায়। এটাও আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
অভিযোগে তিনি আরো বলেন, গত ০৯ মার্চ ২০১৯ অনুষ্ঠিত ৬০তম সিন্ডিকেট সভায় ১৩ জানুয়ারি ২০১২ অনুষ্ঠিত ওই নিয়োগ বাছাইবোর্ডের সুপারিশ এবং মহামান্য হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী আমাকে (মোহা. মাহামুদুল হক) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রভাষক (স্থায়ী) শুন্য স্থায়ী পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। তাবিউর রহমানের জলিয়াতির কারণেই আমি প্রভাষক পদে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হই এবং পরে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ে উক্ত পদে যোগদান করি। জালিয়াতির জন্য তাবিউর রহমানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এবং আমাকে জ্যেষ্ঠতা ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রদান না করায় আমি আবার মহামান্য হাইকোর্টে আরেকটি মামলা করি। সর্বশেষ গত ১৪ মার্চ ২০২২ তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট এক আদেশে তাবিউর রহমানের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এবং আমাকে কেন জ্যেষ্ঠতা ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রদান করা হবে না মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি রুল জারি করেছেন।
অভিযোগপত্রে তিনি আরো উল্লেখ করেন, সিন্ডিকেটের ৯৪তম (বিশেষ) সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী মামলা চলমান অবস্থায় কারো চাকরি স্থায়ীকরণ ‘চাকরি স্থায়ীকরণ কমিটির-২০২২’ এর মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। বর্তমানে তাবিউর রহমান প্রধান-এর বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে মামলা চলমান। তাবিউর রহমান বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদন্নোতি পেয়ে স্থায়ীকরণের অপেক্ষায় আছেন এবং তিনি বিভাগে জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী আগামীতে বিভাগীয় প্রধান ও প্লানিং কমিটির সভাপতি হবেন যাতে করে আমি আশংকা করছি একজন অবৈধ শিক্ষকের মাধ্যমে আমি আবারও ভিকটিম বা বঞ্চিত হতে পারি। এছাড়া একজন অবৈধ শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় থাকতে পারেনা কারণ বিশ্ববিদ্যালয় একটি নীতিচর্চার পবিত্র স্থান।
তাবিউর রহমানের জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগ তদন্তপূর্বক তাকে উক্ত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পযর্ন্ত তার সহযোগী অধ্যাপক পদে স্থায়ীকরণ স্থগিত করে, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করাসহ তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান মাহমুদুল হক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘একটি অভিযোগপত্র আমি হাতে পেয়েছি।’
শিহাব মন্ডল/এমআইসি