সিরাজগঞ্জঃ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে দ্বিতীয় দফায় আবারও আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার (২৪ অক্টোবর) বিকেল ৪টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও তদন্ত কমিটির প্রধানসহ ৩৩ জন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ১১টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা অবরুদ্ধ রয়েছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও রবীন্দ্র অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল ও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী আবু জাফর হোসাইন রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আবু জাফর হোসাইন বলেন, শিক্ষার্থীরা বিকেল ৪টার দিকে অনশন ভাঙলেও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনে তালা দিয়ে ভেতরে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তবে এই আন্দোলন স্থগিত করার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও রবীন্দ্র অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারসহ আমরা ৩৩ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা বিকেল ৪টা থেকে একাডেমিক ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে আছি। আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা বুঝছে না।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে লায়লা ফেরদৌস হিমেল বলেন, যেহেতু সিন্ডিকেট সভায় সদস্যরা তদন্ত প্রতিবেদন খুলেছেন এবং আমার জানা মতে এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই এখন এ বিষয়ে বলার অবকাশ নেই। তবে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে গণমাধ্যমকে কেউ কিছু বলেনি।
এর আগে দুপুরে অনশন চলাকালে প্রকাশ্যে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন রফিকুল ইসলাম শামীম নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি অভিযুক্ত শিক্ষিকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে তাকে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে আন্দোলন থেকে বক্তব্য দেওয়ার সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রকাশ্যে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন শামীম হাসান (২৪) নামে এক শিক্ষার্থী।
এর আগে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় শুক্রবার (২২ অক্টোবর) পূর্বনির্ধারিত নোটিশ ছাড়াই সিন্ডিকেট সভা বসে বিশ্ববিদ্যালয়টির। চুল কাটার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি হয় সেই সভা।
তারই ধারাবাহিকতায় অভিযুক্ত শিক্ষিক ফারহানার ইয়াসমীন বাতেনের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে গত শনিবার থেকে আমরণ অনশনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, গত ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের প্রথম বষের্র ফাইনাল পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় ১৪ জন শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা সব পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
আগামীনিউজ/বুরহান