পটুয়াখালীঃ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগর এর সাময়িক অব্যাহতির পর থেকেই একরের পর এক তার অপকীর্তি প্রকাশিত হচ্ছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর চাঁদাবাজি, নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মারধর, প্রাণনাশের হুমকি এবং ৩ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা নেওয়ার ভিডিও প্রকাশিত হলে পবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগরকে স্বীয় পদ থেকেও সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
সম্প্রতি, ইউনুস আলী নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীরকে সাগর কতৃক একটি মারধরের ভিডিও ক্লিপ প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌছেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো সাগরের। গভীর রাতে সেই নারীকে হল থেকে বের করতে গেলে সেই কর্মচারী বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর শুরু করেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কর্মচারী
ইউনুস আলী বলেন, অনেক রাত হওয়ায় আমি তাদের বলি নিয়ম অনুযায়ী ডুকতে হয়। এটা বলায় খারাপ ব্যবহার করে। "
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে দুর্ব্যাবহারের একাধিক রেকর্ড রয়েছে তার। এমনকি উপাচার্যের বাসভবনে আম চুরি করে ধরাও পড়েন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ল্যাপটপ আটকে রাখার ঘটনাও বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল।
পবিপ্রবি'র টিএসসি বন্ধের পিছনেও তার হাত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিচালকের হিসাব মত প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা বাকি রয়েছে। এই বিপুল টাকা বাকি থাকায় টিএসসি চালু রাখা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
তাছাড়া গত ১ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কতৃক আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য ব্যাবহৃত বাসের তেল নিয়ে পাম্পের টাকা পরিশোধ না করারও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পাম্পের ম্যানেজার জামাল বলেন," পবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগর সমাবেশের দিন ৩৩ হাজার টাকার তেল নেন। কিন্ত তিনি সে টাকা পরিশোধ না করেই চলে যান। পরে একাধিকবার সে টাকা পাওয়ার চেষ্টা করা হলেও তা পাওয়া যায় নি।
এছাড়াও ২০২১ সালে সাদিয়া আক্তার দোলা নামের এক মহিলাকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনারও অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমান সাময়িক অব্যাহতির পূর্বেও দলিয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ২০১৭ সালে বহিষ্কার হয়েছিলেন পবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগর । ২০১৮ সালে তৎকালিন পবিপ্রবি শাখা ছাত্রলিগের সভাপতি মোসাহেদুল ইসলাম সাদির সাথে বেয়াদবি করায় লাঞ্ছিত ও গণপিটুনির মাধ্যমে তাকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করা হয়। ২০২০ইং সালে বিশ্বিবদ্যালয়ের ২য় সমাবর্তনের সময় রাষ্ট্রপতির পতাকা চুরি করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল।
শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বর্তমানে তিনি অব্যহতি প্রাপ্ত হলেও অনুসন্ধানে জানা যায়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক মোঃ আসিফ ইকবাল অনিক তার সম্পর্কে দুলাভাই, যার সাহায্যে অর্থ লেনদেনের
মাধ্যমে সভাপতি পদ ভাগিয়ে নেন। বর্তমানে গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থের মধ্যেমে তিনি আবারও বহিষ্কারাদেশ তোলার চেষ্টা করছেন।
এ অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আরাফাত ইসলাম খান সাগর বলেন," এগুলো মিথ্যাও ভিত্তিহিন। ভিন্ন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। "
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে পবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেক বলেন, আমি এবিষয়ে কিছু জানি না। "
এবিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও যোগাযোগ সম্ভব হয় নাই ।
কয়েকটি অপরাধের সাথে তার সংশ্লিষ্টটার রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন," তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে, তার আপরাধের ধরন ও মাত্রা অনুযায়ী শৃঙ্খলা বোর্ড সিদ্ধান্ত নিবেন। "
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, " কয়েকটি তদন্ত কমিটি করেছি, তদন্ত কমিটি রিপোর্ট আসলে শৃঙ্খলা বোর্ডের মাধ্যমে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
সাব্বির হোসেন/এমআইসি