প্রতিষ্ঠার ১৬ বছরে এসেও সমৃদ্ধ একটি লাইব্রেরী তৈরি করতে পারেনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। স্বল্প পরিসর, পর্যাপ্ত বইয়ের অভাবসহ নানা সংকটে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী। ফলে লাইব্ররী সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীর বিভিন্ন দুর্দশার। প্রশাসনিক ভবনের পঞ্চম তলার একটি ব্লকে দুইটি রুম নিয়ে গঠিত এ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী। লাইব্রেরির করিডোরে সারি সারি থাক। আর দুই রুমে মাত্র ৮০টি আসন। এছাড়া লাইব্রেরির বাইরে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ রাখার থাক, পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে ভর্তি। লাইব্রেরি কর্মকর্তাদের জন্য সুপেয় পানি ও পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলেও সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা। লাইব্রেরিতে ২০১২ সালে বঙ্গবন্ধু কর্ণার উদ্বোধন করা হলেও ৯ বছরে মাত্র ৩৮৫টি বই এই কর্ণারে স্থান পেয়েছে।
লাইব্রেরি সূত্রে জানা যায়, লাইব্রেরিতে বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা ২৩ হাজার। শিক্ষার্থীদের মনোরম পরিবেশ নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষ। সকাল ৯ থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে লাইব্রেরি।
যদিও এই সময়গুলোতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস আর পরীক্ষা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। জ্ঞান চর্চার এমন পরিসরে লাইব্রেরীকে সপ্তাহের বাকি দুই দিন খোলা রাখার বিষয়ে দাবী তুলে আসছে বহুদিন থেকে। শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়ালেখা করার মত পর্যাপ্ত সুযোগ সময় কোনটিই পাচ্ছে না।
আবার খোলা থাকলেও লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত পরিমানে বইয়ের সংকুলান নেই। আবার যে সামান্য সংখ্যক বই রয়েছে, নেই ফটোকপি করার মতো কোনো মেশিন। সময় স্বল্পতার কারনে প্রয়োজনীয় বিষয়টি ফটোকপি করে নিয়ে যাবে এর কোন উপায় নেই। এছাড়া পর্যাপ্ত আসন না থাকায় অনেকসময় জায়গা পাওয়া যায়না। নেই নামাজের ব্যবস্থা, পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। যার ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। এসব ভোগান্তির কারণে অনেকে আগ্রহ হারাচ্ছে লাইব্রেরিতে আসতে।
লোকপ্রসাশন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আহাদ আলী বলেন, ক্যাম্পাসকে ঘিরে হল ও ভাড়া মেসে বিভিন্ন জায়গায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বাস করেন। লাইব্রেরীটা কমপক্ষে রাত ৯ টা পর্যন্ত এবং সপ্তাহে ৭ দিন খোলা থাকলে আমরা সেখানে পড়ালেখা করতে পারি। তাছাড়া লাইব্রেরীতে প্রয়োজনীয় বইয়ের তুলনায় অপ্রয়োজনীয় বই বেশি এবং কোর্সভিত্তিক বইয়ের সংখ্যাও পর্যাপ্ত পরিমাণের নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি গ্রন্থগারিক জনাব মহি উদ্দিন মোহাম্মদ তারিক ভূঁঞা এ বিষয়ে বলেন, করোনার কারনে লাইব্রেরি সময় শিডিউল নিয়ে সমস্যা হলেও এখন থেকে পূর্বের নিয়মেই চলবে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষর্থীদের সুবিধার্থে যে বইগুলো অনলি ফর লাইব্রেরী তা ইস্যু করা যায় না। সেগুলো লাইব্রেরীতেই ফটোকপি করা যায় সেজন্য আমরা ফটোকপি মেশিনের জন্য লিখিত আকারে দাবি জানিয়েছি। এমনকি ৫ম তলায় বিজ্ঞান অনুষদের যে ল্যাব রয়েছে যদি বিজ্ঞান অনুষদে সরিয়ে নেয়া হয় তাহলে সেই রুমগুলো শিক্ষর্থীদের জন্য আলাদা রুম যা লাইব্রেরীর রুম হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হবে। যা এক সময়ে লাইব্রেরির অংশ ছিলো। যদি বৃহৎ পরিসরে জায়গা থাকতো আমরা সমৃদ্ধ লাইব্রেরি তৈরি করতে পারতাম। প্রশাসনকে একাধিকবার বিষয়টি অবগত করেও লাভ হয়নি। এখন প্রশাসন জায়গা না দিলে আমাদের কিছু করার থাকেনা।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘এখানে জায়গার অভাবে এমনটা হচ্ছে। তবে নতুন প্রকল্পে বড় একটি লাইব্রেরি হচ্ছে। সেখানে এই সমস্যা আর থাকবেনা।’
আগামীনিউজ/ হাসান