শহর কেন্দ্রিক স্মার্ট জীবন মানে পরিবার ভাঙা, আত্মীয়হীন, সমাজচ্যুত

ফার্মার বিপ্লব অক্টোবর ৭, ২০২৩, ০৬:৪১ পিএম

ঢাকাঃ শহর কেন্দ্রিক তথাকথিত স্মার্ট জীবন ব্যবস্থা মানে ফাইনালি পরিবার ভাঙা, আত্নীয়হীন, সমাজচ্যুত ও রেস্তোরাঁয় খাওয়া।

বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত শহরের কথা জানি, যাদের প্রায় ১০০% অধিবাসী খাবারের জন্য রেস্তোরাঁর উপর নির্ভরশীল। সকাল বেলায় পরিবারের সদস্যদের বাবা মা অফিসে আর বাচ্চারা স্কুল কলেজে দৌড়ায়। সেটা ভোর ৪ টায় হোক বা ৭ টায়। ঘুম থেকে জেগেই দৌড় শুরু। আত্নীয় পরিজনের সাথে ২/৪ মাসে বা বছরে ২/১ বার উইকেন্ডে ২/৪ ঘন্টার জন্য দেখা হয়। প্রতিবেশী বলতে সবই রোবট। না থাকে প্যারেন্টিং, না থাকে সন্তানের মায়া মহব্বত দায়িত্ব, না থাকে আন্তরিকতা, না থাকে পারিবারিক বন্ধন, না কোন আত্নীয়তা।

আমরা আসলে কোন্ মোহে, কোন্ ডেস্টিনেশনের দিকে দৌড়াচ্ছি ? কেন দৌড়াচ্ছি ? কি কারণে দৌড়াচ্ছি ?

১০০% নির্ভরশীল হতে হচ্ছে অন্যের উপর।
# চাকরীর বেতন দেবে অন্য কেউ। তাহলেই আহার, বাসস্থান ঠিক থাকবে।
# খাবার রান্না করে দেবে রেস্তোরাঁ। কোন কারণে ওদের বন্ধ থাকলে খাওয়া বন্ধ। 
# অসুস্থ হয়ে ঘরে বসে গেলে কি হবে ? না থাকবে বেতন, না থাকবে খাবার।

এটাই কি আমাদের পৃথিবীর জীবন ? এটাই কি উদ্দেশ্য ??

@ একটা সময় ছিল - গ্রামের মানুষ সাপ্তাহিক হাটের দিন লবন, কেরোসিন, সাবান কিনতে যেতো। মাঝে মাঝে গরুর মাংস, সেমাই, চিনি, গুড়, গরম মসলা কিনতো। হাঁস, মুরগি, খাসীসহ বাদ বাকি সকল তেল, ঘি ও অন্যান্য খাদ্য নিজেই ফলাতো। কেউ কেউ চাকরির জন্য শহরে থাকলেও পরিবারের অন্য সদস্যরা গ্রামেই থাকতো। থানা লেবেলটাও গ্রামই ছিল। মহকুমা, জেলা, বিভাগ আর রাজধানী ছিল শহর। শহরের মানুষ গুলোও একে অপরকে চিনতো, রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও প্রতিবেশীরা ছিল আত্নীয়। একে অপরের সাহায্যে দৌড়ে আসতো আন্তরিকতা নিয়েই।

মোট টাকা কম থাকলেও অভাব ছিল না, অনিশ্চয়তা ছিল না, এক বেলা না খেয়ে থাকার ভয় ছিল না। বয়সজনিত মৃত্যু ছাড়া তেমন বড় কোন অসুখ বা অপঘাতে মৃত্যু ছিল না। সব চাইতে বড় যা ছিল, তা হলো "শান্তি"। 
হ্যাঁ, প্রচুর শান্তি ছিল তখন।

বছরে ২ বার জামা কাপড় কিনে কতই না আনন্দ পেতাম। এক শোকেসে পরিবারের সবাই কাপড় রেখেও ফাঁকা থাকতো অনেক জায়গা। তাতেও অনেক শান্তি ছিল। আরও কত কত আনন্দের বিষয় ছিল।

এখন এত টাকা, এত শহর, এত বাড়ি, এত গাড়ি, এত আসবাব, এত কাপড়, এত খাবার নিয়েও শান্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। অনিশ্চয়তায় কাটে প্রতিটা দিন। মৃত্যুর আগেই মৃত্যুর প্রিপারেশন মূলক প্রাণঘাতী অসুখের ভয়ে কাটে প্রতিটা মুহূর্ত। সুখী জীবন যাপনের কথা স্বপ্নে দেখতে হয়।

প্রায় ±৮০ বছর পূর্বে আমেরিকার যুবসমাজ ১৮ বছরে স্বাধীনতা লাভের জন্য আন্দোলন করে ফাইনালি ১৬ বছরে স্বাধীনতা আদায় করে নেয়‌। কোন বন্ধনহীন স্বাধীন ভাবে চলা আর গার্লফ্রেন্ড / বয়ফ্রেন্ড নিয়ে জৈবিক জীবন যাপনই সর্বময় সুখ মনে করে ছিল তারা। শহর কেন্দ্রিক একাকী স্বাধীন জীবন ভোগ করা খুব সুখের বলে যারা আন্দোলন করেছিল, বৃদ্ধাবস্থায় তারাই আক্ষেপ করেছে ভুল সিদ্ধান্তের জন্য। স্ত্রী, সন্তান, পরিবার, আত্নীয়, প্রতিবেশী, বন্ধুহীন জীবন কতটুকু ভয়ানক তা আমরা ওদের গভীর ভাবে দেখলেই বুঝতে পারি। হয়তো সেই দিকেই এগুচ্ছে আমাদের সোনার বাংলা। আমরাও সকাল সন্ধ্যা দৌড়ানো শুরু করেছি শহুরে জীবনে।

একমাত্র ধর্মই দিতে পারে এই খারাপ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ ও প্রশান্তি।

ইসলাম আমাদের পিতা মাতা ও সন্তানের দায়, দায়িত্ব, আন্তরিকতা শিখিয়েছে। আত্নীয় ও প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক গভীর করতে, পরিবারের বন্ধন দৃঢ় করতে, একে অন্যকে সাহায্য সহ দোয়া করতে বলেছে।

দেখাই যদি না হয়, দোয়া আসবে কিভাবে ? আন্তরিকতা আসবে কোথা থেকে ? সম্পর্ক থাকবে কিভাবে ? 

আমরা কি কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার কথা ভুলে যাচ্ছি ? 

দৌড়ের উপর থাকলে সময় থাকে না - নামাজ পড়া যায় না।
দৌড়ের উপর থাকলে শান্তি থাকে না - আলহামদুলিল্লাহ বলা যায় না।
দৌড়ের উপর থাকলে অবাক হওয়ার সুযোগ নাই - সুবহানআল্লাহ বলা যায় না।
দৌড়ের উপর থাকলে খুশী হওয়ার উপায় নেই - মাশাআল্লাহ বলা যায় না।
দৌড়ের উপর থাকলে বিপদের কথা মনে আসে না - ইন্না লিল্লাহ পড়া যায় না।
দৌড়ের উপর থাকলে বাবা মা ভাই বোনের দেখা পাওয়া যায় না - পারিবারিক বন্ধন থাকে না।
দৌড়ের উপর থাকলে স্বামীর দায়িত্ব পালন করা যায় - ভালবাসা থাকে না।
দৌড়ের উপর থাকলে পিতার দায়িত্ব পালন করা যায় না - নির্ভরশীল কাউকে তৈরি যায় না। 
দৌড়ের উপর থাকলে "রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ঈয়ানি সাগিরা" পড়ার মত উত্তরাধিকার তৈরি করা যায় না।
দৌড়ের উপর থাকলে আত্নীয়রা মনে রাখে না - দোয়া করার কেউ থাকে না।

 

ফার্মার বিপ্লব