ঢাকাঃ প্রেমকান্তের প্রেমের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হলো ২০১৯ সালে ভারতের তামিলনাড়ুর যুবক পেশায় আইটি বা নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বরগুনা জেলার তালতলীর একই সম্প্রদায়ের এক তরুনীর ফেসবুকে পরিচয় হয়। তারপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এটা প্রেমকান্তের বক্তব্য।
আর তালতলী তরুনীর বক্তব্য হলো ‘ফেসবুকে তো অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয়’ তরুণীর বাবার কথা হলো আমার মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক তার জন্য মিডিয়ার প্রচার প্রচারণায় তার কোন ক্ষতি বা ভবিষ্যত নষ্ট না হয় অর্থাৎ তিনি তার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এখন জনমনে প্রশ্ন হলো (১) মেয়েটি যদি এখনও অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে। তবে তার বয়স ১৮ বছরের কম তথা মতে ১৫ বছর। তাহলে ২০১৯ সালে তার বয়স ছিল ১১ বা ১২ বছর। অর্থাৎ তখন থেকেই সে ফেসবুকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ভিনভাষী পুরুষের সাথে বন্ধুত্ব আর প্রেমে জড়িয়ে পড়েছে। তখন তার অভিভাবকরা টের পাইনি বা পেলেও কিছু বলেনি। ছেলে মেয়ে কি করে? বাবা-মার তা মোটেও জানেনা এটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়ে আমার নিজেরও প্রশ্ন?
(২) প্রেম যদি নাই হয়ে থাকে তবে সুদূর তালতলী, বরগুনা থেকে মেয়েটি বরিশালের একটি রেস্টুরেন্টে এসে খাওয়া-দাওয়া, আলাপচারিতা করল। শুধুই ফেসবুকে বন্ধুত্বের কারণে সেটাও একটা ছোট প্রশ্ন? যাহোক সর্বশেষ জানা গেছে তা হলো প্রেমকান্ত এ বিষয় নিয়ে হাইকোর্টের একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর শরণাপন্ন হয়েছে। এই গেল প্রেম কান্তের প্রেমের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বা গল্প যেটাই বলুন না কেন।
এখন আসা যাক প্রেম ছড়িয়ে পড়েছে দেশময় !
স্মার্ট ফোনের বদৌলতে অপ্রাপ্ত তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য যোগাযোগের সহজ মাধ্যম হলো ফেসবুক। বন্ধুত্ব আর প্রেমের জন্য স্মার্ট ফোন এখন একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে এবং তা যেন ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মমর্যাদার সাথে জড়িয়ে গেছে আর এই আত্মমর্যাদার সাথে জড়িয়ে গেছে অভিভাবককূল।
এক জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের হাতে যত মোবাইল ফোন তা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে নেই। ফেসবুক সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে গ্রামগঞ্জ ও শহরে, ক্ষেতে-খামারে, রাস্তাঘাটে বা ঘরের ভিতরে লেখাপড়া ছেড়ে জড়িয়ে পড়েছে টিকটক সহ নানা অপকর্মে।
আমার একটি লেখার সূত্র ধরে বলতে চাই তাহলে কি ‘সন্তানরা অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে গেছে?’
আমার নিজের গ্রামে অতি নিকট আত্মীয়দের তিন-তিনটি মেয়ে ৭ম-৮ম ও ১০ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় এভাবে প্রেমে জড়িয়ে ইতিমধ্যে ঘর ছেড়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে বিষয়টি জানানোর পরেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি বা প্রশাসনের নজরে আনেননি। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষকদের দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টিও পরিষ্কার। অথচ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে দেশে কঠোর আইন বলবৎ আছে। এ যেন কে শোনে কার কথা আর কাহাকে বলিবো আর শুনিবে কে সেই রকমই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব তারপর প্রেম অতঃপর ঘরছাড়া, ক্ষেত্রবিশেষে আত্মহত্যা ইত্যাদি ইত্যাদি অহরহই ঘটছে।
সর্বশেষ এটা বলেই ক্ষ্যান্ত দিতে চাই যে, এত এত বুদ্ধিজীবী, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, অপরাধ বিশেষজ্ঞ, জনপ্রতিনিধি সমাজপতি, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কি এসব তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীদের প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই? ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি তাদের এই দায়িত্বহীনতা কি সহজেই মেনে নেওয়ার বিষয়??
আর দায়িত্ব বোধ যদি থাকতো, তাহলে এই শিশু-কিশোরদের পিচ্ছিল বা স্লিপিং বয়সের সন্ধিক্ষণে সমাজে এই ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতো না আর তথাকথিত প্রেমও ছড়িয়ে পড়তো না দেশময়!
এসএস