সম্পাদকীয়

নদী ও রেলপথের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা

জানুয়ারি ৩০, ২০২০, ০৯:৪৮ পিএম

আবহমান বাংলার প্রাচীনতম যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল ‘নদীপথ’। নদীর সঙ্গে রয়েছে বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি আর অর্থনীতির নিবিড় সম্পর্ক।

নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে আমাদের গ্রামীণ অবকাঠামো, শিল্প এবং সংস্কৃতির ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠান। গায়কের গানে, নাটকের মঞ্চে এবং সাহিত্যের আসরে নদীর রয়েছে একটি বিশেষ আসন।

নদীমাতৃক বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটা নদীনির্ভর ছিল যা এখনো বিদ্যমান।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নদীপথে মালামাল পরিবহনে খরচ হয় সড়কে এক-চতুর্থাংশ। দূষণের মাত্রা এক দশমাংশ। নদীপথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার সংখ্যা অতি নগণ্য। তবুও স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ৩১ বছর নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল চরম অবহেলিত। এই সময় অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলো কোনো খনন কাজ করাতো হয়ইনি বরং নদীর তীর ঘিরে গড়ে উঠেছে ভয়াবহ দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৮০০ নদ-নদীর ২৪ হাজার ১৪০ কিলোমিটার নৌপথের মধ্যে বর্তমানে কমে ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটারে এসে পৌঁছেছে। বর্ষা মৌসুমে এর পরিমাণ হয় প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার নৌপথ। বাংলাদেশের উজান থেকে প্রতি বছর প্রায় ২ বিলিয়ন টন পলি এসে ৩৯৫টি নদীকে মেরে ফেলেছে। নদীকে এভাবে অবহেলার কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যসম্পদ যেমন ধ্বংস হয়েছে তেমনি ভরাটের কারণে বিঘ্নিত হয়েছে নদীপথের যোগাযোগব্যবস্থা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা এখন ৪০৫টি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ১০২টি, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১১৫টি, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৮৭টি, উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ৬১টি, পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলে ১৬টি এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ২৪টি নদী রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪টি ভারত এবং ৩টি নদী মিয়ানমার থেকে এ দেশে প্রবেশ করেছে।

নদ-নদীর নাব্য ফেরাতে ইতিমধ্যেই মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। এ খাতে ব্যয় হবে সাড়ে ১৯ লাখ কোটি টাকা। যা বাংলাদেশের চার বছরের জাতীয় বাজেটের প্রায় সমান। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আমরা আমাদের সেই ২৪ হাজার ১৪০ কিলোমিটার নৌপথ পুনরুদ্ধার করতে পারব। ইতিমধ্যেই গত সাত বছরে বিআইডব্লিউটিএ প্রায় ১২০০ কিলোমিটার নৌপথ নাব্য করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীর এ অবস্থা ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। সে কারণেই তিনি নদী রক্ষা, খনন ও নৌ যোগাযোগের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

এবার আসা যাক রেলের প্রসঙ্গে :

একটি বাসের বয়স ১০ থেকে ১৫ বছর। আর একটি রেল বা বগির বয়স অর্ধশত বছরের অধিক। তুলনামূলকভাবে রাস্তা বা সড়কপথ প্রতি বছর মেরামত করতে হয়। আর দীর্ঘ সময়েও রেলপথ মেরামত করতে হয় না। শুধু তাই নয়, রেল পরিবহনে খরচও কম হয়। যা সড়ক পরিবহনের এক চতুর্থাংশ। সড়ক পরিবহনের চেয়ে রেলে দুর্ঘটনার মাত্র ১ দশমাংশ। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও হরতালের প্রভাব রেল যোগাযোগে পড়ে না বললেই চলে।

১৮৬২ সালে যাত্রা শুরু রেল সার্ভিসের। এ হিসাবে বয়স ১৫৮ বছর। আসাম-বাংলা রেলওয়ে আবার কখনো পূর্ববাংলা রেলওয়ে হয়ে অবশেষে ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশ রেলওয়ে নামকরণ হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রেলওয়ের উন্নয়নে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন, রেল বাজেট বৃদ্ধি, রেললাইন স্থাপন, লোকোমোটিভ ও কোচ বৃদ্ধিসহ হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে।

১৯৭১ সালের পর রেলওয়ে একটি বিভাগের মধ্য দিয়ে চলছিল। রেল তার ঐতিহ্য নিয়ে যাত্রীসেবা দিয়ে আসছিল। কিন্তু আশির দশকের পর থেকে রেল তার গৌরব হারাতে শুরু করে। লাইন, ইঞ্জিন, কোচ কমার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হতে থাকে রেলওয়ে স্টেশনগুলো।

রেলের আমূল পরিবর্তন ও অতীতের গৌরব ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর ‘রেলপথ মন্ত্রণালয়’ উপহার দেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ৩০ বছরমেয়াদি মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২৩০টি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকা।

দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষের অকল্পনীয় ছিল রেলযাত্রা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর একান্ত চিন্তাভাবনায় পদ্মা সেতু রেললিংক লাইন স্থাপনসহ শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষ বিলাসবহুল রেলভ্রমণও করতে পারবে।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এসব বিষয় গভীরভাবে অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমগ্র দেশকেই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার অধীনে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন।

দেশ-জাতি ও পরিবেশ রক্ষার এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রীর নেয়া এসব পদক্ষেপের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

ড. নিম হাকিম
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক, 
আগামী নিউজ ডটকম