উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশ প্রসঙ্গ

হাসনাত কাইয়ুম জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, ০৯:৩৮ পিএম

১) আমরা যারা হাওর অঞ্চলের মানুষ তাদের অনেকের জানা আছে যে, একসময় হাওরে এক ধরনের কুকুর বাস করতো । কুকুর গুলো যথেষ্ট হিংস্র ছিলো এবং এরা প্রায়শই ভেড়ার পাল থেকে জীবিত ভেড়া ধরে খেয়ে ফেলতো কিন্তু পালের মালিক কাছাকাছি থাকলেও কিছু জানতে পারতো না কারণ আক্রান্ত ভেড়া বা সঙ্গীসাথীদের কেউ কোন চিৎকার করতো না । গ্রামের লোকজন বলতো কুকুর সম্পর্কে ভেড়ার মামা শ্বশুর হয়, তাই আক্রান্ত হলেও ভেড়া কোন আওয়াজ করে না। 

২) আজকাল কৃষকের প্রসঙ্গ আসলে আমার ছোটবেলায় শোনা সেই উপকথা মনে আসে । কিনতে ঠকা,বেচতে ঠকা,পা ফাটা, কলিজা কাটা এই কৃষকদের কোন কিছুতে কোন রা নেই। এক ছেলেকে মধ্যপ্রাচ্য, এক ছেলেকে মালয়েশিয়ায় পাঠায়ে কটা টাকা এনে কৃষির লোকসান আর দেনা মেটায়, জমি বেচে , ভুমি হীন হয়, তবু কোন আওয়াজ করে না। এমনকি এইবার, এত বড় অভ্যুত্থান হলো, এতো সন্তান লাশ হলো, শহর থেকে গোপনে গোপনে এতো লাশ গ্রামে আসলো কিন্তু গ্রাম নিয়ে , গ্রামের কৃষকদের নিয়ে কোন মুখের কথাও হলো না ।

৩) গুটিকয় বিন্দু বিন্দু মানুষ এই নিয়ে জেরবার হলো, ভুমি হীন আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, সরকারের দুয়ারে দূয়ারে অনেক ধন্না দিলো, কৃষি আর কৃষকদের জন্য একটা কমিশন করার দাবি নিয়ে কিছুই হলোনা। মানব বন্ধন,সভা সমাবেশ, সেমিনার সবই করা হলো, গ্রামাঞ্চলে সমাবেশ করতে যেয়ে রৌমারীতে আক্রান্ত হতে হলো কিন্তু সরকার, মিডিয়া, ভদ্দরলোক, বুদ্ধিজীবী কারোরই তেমন কোন নড়নচড়ন হলো না, নজর কাড়া গেলোনা ।

৪) তবে সবশেষে উত্তর বঙ্গের কৃষক মহাসমাবেশ করতে যেয়ে এইবার মর্যাদাবান, নীতিনিষ্ঠ, শিক্ষিতজনদের এক অংশের নজর কাড়া গেছে। অবশেষে তারা তাদের কলম খুলেছেন এবং ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন

৫) সরকার এবং প্রশাসনের কতিপয় কর্তা, ঊদারিদ্র পীড়িত কৃষকদের একবেলা মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে একটি দরখাস্ত সংগ্রহ করেছিলেন। সেটি মঞ্জুর করা না করার আগে, তাদেরই এক অংশ সেটি গোপনে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তারপরের গল্প তো শুধু সফলতার।

৬) সফল তো হয়েছেন । সরকারের উপদেষ্টারা সফর বাতিল করেছেন, বিশাল সমাবেশ হবে জেনে যারা কিছু টাকা পয়সা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলো তারা পিছটান দিয়েছেন, পরিবহনের যতটুকু আনুকূল্য পাওয়ার ছিলো সেটাও বাতিল করাতে সক্ষম হয়েছেন আর মাসের পর মাস যারা খেয়ে না খেয়ে, চরে, হাটে, মাঠে, বাড়ি বাড়ি যেয়ে এই কথা না বলতে পণকরা কৃষকদের বের করে এনে সমবেতভাব আওয়াজ তোলার চেষ্টা করে গেছেন, তাদেরকে লোভী, সরকারের দালাল, কৃষকদের মর্যাদাবোধ ধ্বংসের কারিগর, আন্দোলন ব্যবসায়ী'হিসাবে চিহ্নিত করতে ও সফল হয়েছেন

৬) এখন এ সফলতা নিয়ে আপনি/ আপনারা কি করবেন? আমি / আমরা চিলমারী যাচ্ছি। না খেয়ে, যানবাহনের সুবিধা না পেয়ে, এইসব ' সূক্ষ্ম দালালী' চিহ্নিত করতে সক্ষম নয়, এমন যে মানুষেরা উপস্থিত হবেন, তাদেরকে দেখতে, তাদের সালাম জানাতে ওখানে উপস্থিত থাকবো।

আপনি এইসব মানুষদের দাবি দাওয়ার তালিকাটি  দয়া করে একবার দেখবেন? একটু রিভিউ করবেন? আপনাদের জ্ঞানের কিঞ্চিত অংশ কি এই লাঞ্ছিত বঞ্চিতরা পাবে ?:আপনারা যে জীবন যাপন করেন, যা ভোগ করেন তার থেকে সামান্য কয়েকটি টাকা কি এই উদ্যোগে ব্যায় করবেন ?
দেখেন আপনাদের যা ভালো মনে হয় ।