গাইবান্ধাঃ পঁচনশীল ফেলে দেয়া আবর্জনা হিসেবে পরিচিত কলাগাছ থেকে আঁশ বা ফাইবার উৎপাদন করে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তনের এবং এলাকার অসংখ্য বেকারের কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখছেন গাইবান্ধার সংগ্রামী ও মেধাবী যুবক মোজাম উদ্দিন। তাঁর সোনালী স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলে এলাকায় ঘটবে বিপ্লব, অনেক বেকারের কর্মস্থান সৃষ্টি হবে। লক্ষ্য এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বায়েছ উদ্দীনের ছেলে মোজাম উদ্দীন (৩০) একজন মেধাবী যুবক। তেমন কোন স্থায়ী কাজ না থাকলেও সব সময় তাঁর চিন্তা-চেতনা নতুন কিছু করার। যা দিয়ে দেশ ও সমাজ থেকে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। এ চিন্তা থেকেই একদিন তাঁর মাথায় আসে এলাকার বহু কৃষক তাদের জমিতে কলাচাষ করেন। গাছ থেকে কলা কেঁটে নেয়ার পর কলাগাছগুলো অবহেলায় যত্রতত্র ফেলে রাখেন। কয়েকদিন পরই তা পঁচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। দুষিত হয় এলাকার পরিবেশ। তাই এই ফেলে দেয়া কলাগাছ থেকে পাট জাতীয় আঁশ বা ফাইবার উৎপাদনের চিন্তা শুরু করে। সামান্য কারিগরি জ্ঞান নিয়ে সে দীর্ঘদিন চেষ্টার পর তৈরী করে আঁশ উৎপাদনের মেশিন।
আগামী নিজের সাথে কথা হয় এই ব্যতিক্রমি কাজের উদ্যোক্তা মোজাম উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, মেশিন তৈরীর পর বিভিন্নভাবে চলতে থাকে উৎপাদিত এই আঁশের কোন চাহিদা আছে কিনা। নিজের তেমন লেখা-পড়া না থাকলেও গোবিন্দগঞ্জ মহিলা কলেজের ইংরেজী প্রভাষক মোশফিকুর রহমান মিলনের সহায়তায় ইউটিউব এবং বিভিন্ন ওয়েব সাইট সার্চ করে এক সময় সে জানতে পারে চীনে এই আঁশের চাহিদা রয়েছে। সে যোগাযোগ করে ঢাকার এক কোম্পানীর সাথে। তাঁরা প্রতি কেজি কালাগাছের পাট আঁশ বা ফাইবারের মূল্য ২৩০টাকা দিতে চেয়েছে। তবে প্রতিবার কমপক্ষে এক পিকআপ ভ্যান ফাইবার কোম্পানীতে সরবরাহ করতে হবে। এছাড়াও মেশিন থেকে পরিত্যক্ত কলাগাছের বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরী করা সম্ভব বলে তিনি আরও জানান।
সংগ্রামী এই যুবক বলেন, প্রতিদিন আমি আমার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে একটু একটু করে ফাইবার উৎপাদন করছি। একটি মেশিন ২৪ ঘন্টা চালাতে কমপক্ষে ১০ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। কিন্ত টাকার অভাবে শ্রমিক নেয়া বা বড় পরিসরে বেশী পরিমানে ফাইবার উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছেনা। তাই নিজেই কলাগাছ সংগ্রহ, পরিবহণ, কলাগাছের বাকল তোলা, তা মেশিনের দিয়ে আঁশ বা ফাইবার বের করা, পানিতে ধোয়া এবং রোদে শুকানোর কাজ নিজেই করি। ফলে আশানুরূপ সাফল্য পাচ্ছি না। সরকারিভাবে স্বল্প সুদে তাঁকে প্রয়োজনীয় ঋণ দেয়া হলে এই শিল্পকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। এভাবেই একদিন তাঁর জীবনের গতিপথ পাল্টে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, এই শিল্পে কাজের সুযোগ পাবে এলাকার শত শত বেকার যুবক। এতে ফেলে দেয়া কলাগাছের আবর্জনা থেকে মুক্তি পাবে পরিবেশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালেদুর রহমান আগামী নিউজকে জানান, ইতোমধ্যেই আমরা কলাগাছের আঁশ উৎপাদন কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি এবং উৎপাদিত আঁশের নমুনা সংগ্রহ করে সম্ভব্যতা যাচাইয়ের জন্য ঢাকায় প্রেরণ করেছি। যদি এই আঁশের চাহিদা পাওয়া যায় তাহলে উদ্যোক্তা মোজাম উদ্দীনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।
গাইবান্ধা বিসিকের সহকারী ব্যবস্থাপক রবীন রায় আগামী নিউজকে জানান, বিষয়টি ভাল। পঁচনশীল ফেলে দেয়া কলাগাছ থেকে ফাইবার উৎপাদন করার বিষয়টি আমি শুনেছি। উদ্যোক্তা মোজাম উদ্দীন যদি সহায়তার আবেদন করেন তাহলে বিসিকের পক্ষ থেকে তথ্যগত এবং আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।
আগামীনিউজ/জনী