পঞ্চগড়ের কয়েকটি গ্রামে বিষমুক্ত সবজি চাষ শুরু হয়েছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষে চাষিরা ব্যবহার করছেন জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক। এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে বেশ সাড়া পেয়েছেন চাষিরা। এতে কম খরচে তারা যেমন উৎপাদিত সবজির ভালো দাম পাচ্ছেন, তেমনি ক্রেতারাও পাচ্ছেন বিষমুক্ত সবজির স্বাদ।
চারদিকে যখন ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ছড়াছড়ি, তখন আশার আলো জুগিয়েছে পঞ্চগড়ের কয়েকটি গ্রামে বিষমুক্ত সবজি চাষ। সদর উপজেলার কামাতকাজলদীঘি ইউনিয়নের ঘটবর, পঞ্চগড় ইউনিয়নের ভাবরঙ্গী ও শিংপাড়া, হাঁড়িভাসা ইউনিয়নের পাইকানী ও হাফিজাবাদ ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামে এখন কৃষকরা বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন। এতে তারা রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বদলে জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করছেন।
গ্রামগুলোতে গেলেই দেখা মিলবে ক্ষেতে ঝুলছে নানা ধরনের জৈব বালাইনাশক। মিষ্টি কুমড়া, লাউ, শসা, পটল, পেঁয়াজ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোসহ নানা শাকসবজি ক্ষেতে বাঁশের খুঁটিতে বাঁধা এইসব জৈব বালাইনাশক শোভা পাচ্ছে। সবজির জন্য ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমন করতে সেক্স ফেরোমন ট্রাপ, কালার ট্রাফ ও আকর্ষণ ফাঁদ ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি কাকতারুয়াও বসিয়ে দেয়া হয়েছে। আগে পোকা দমনে কেবল সেক্স ফেরোমন ট্রাপ ও আকর্ষণ ফাঁদ ব্যবহার করা হলেও নতুন করে যুক্ত হয়েছে কালার ট্রাপ।
পুরনো প্লাস্টিকের জারে হলুদ রং করে তাতে মোবিল মাখিয়ে ক্ষেতের মধ্যে খানিক উঁচুতে ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে জাব পোকা, সাদা মাছি, থ্রিপিসসহ শোষক পোকা হলুদ রঙে আকৃষ্ট হয়ে মোবিলে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে।
জৈব বালাইনাশক প্রয়োগে কীটনাশক ছাড়াই খুব অল্প খরচে পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করছেন চাষিরা। কৃষি কর্মকর্তারাও চাষিদের বিষমুক্ত সবজি চাষে পরামর্শ ও সহযোগিতা করছেন। এই পদ্ধতিতে শাকসবজি চাষে উৎপাদন খরচ অর্ধেকে নেমে এসেছে। সেইসঙ্গে বাজারে বিষমুক্ত সবজির ব্যাপক চাহিদা থাকায় দাম ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। এমনকি চাষিদের শাকসবজি বিক্রি নিয়ে কোনো বিড়ম্বনা পোহাতে হয় না।
পঞ্চগড় ঘটবর এলাকার চাষি রাজু আহম্মেদ বলেন, আমরা আমাদের গ্রামে একটি কৃষক সমবায় সমিতি করেছি। এই সমিতির প্রত্যেক সদস্যই বিষমুক্ত সবজি চাষাবাদ করছে। বাজারে আমাদের সবজির চাহিদা বেশি। তাই বিক্রি করতে কোনো সমস্যা হয় না। ভালো দামও পাওয়া যায়।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম মিয়া বলেন, শাকসবজি ও ফসলের ক্ষতিকারক যেসব শোষক পোকা রয়েছে সেসব থেকে জৈব বালাইনাশক দিয়েই রক্ষা পাওয়া যায়। এসব এক একটি বালাইনাশক তৈরি করতে মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকা খরচ হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আবু হোসেন বলেন, নিরাপদ সবজি চাষের জন্য আমরা চাষিদের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি সামনে বিষমুক্ত সবজি চাষের পরিধি আরো বাড়বে।
আগামীনিউজ/হাসি