পৃথিবীর যে জায়গায় ভিনগ্রহীদের আনাগোনা

ডেস্ক রিপোর্ট সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১, ১০:৫৪ এএম
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ ভিনগ্রহীদের নিয়ে জল্পনা কল্পনার শুরু আজ থেকে নয়। বহু যুগ আগেই পৃথিবীর মানুষের কৌতূহলের শীর্ষবিন্দুতে অবস্থান করছে ভিনগ্রহের প্রাণীরা। যাদের নামকরণ করা হয়েছে এলিয়েন। সুপার পাওয়ারের ক্ষমতা রয়েছে তাদের। বিশেষ স্পেস শিপে করে প্রায়ই নাকি পৃথিবীতে ঘুরতে আসে তারা। আমাদের মতো হয়তো তাদেরও পৃথিবী নিয়ে কৌতূহলের শেষ হয়নি এখনো। তাই তো বারবার ফিরে আসা।  

তবে পৃথিবীর কোন শহরে আসে তারা? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই উঁকি দেয়। উত্তর মেক্সিকোর চিহুয়াহুয়ান মরু অঞ্চলে এমন একটি জায়গা রয়েছে যেখানে নাকি ভিনগ্রহের প্রাণীদের আনাগোনা বেশি। এমন ধারনার পেছনে বেশ জোরালো প্রমাণ আছে তো বটেই! কারণ অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে এই স্থানে। রেডিও সিগন্যাল এখানে কাজ করে না। কম্পাসের কাঁটা অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ঘুরতে শুরু করে। রহস্যজনক বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের সঙ্গে তুলনা করা হয় এই অঞ্চলের অদ্ভুত ঘটনাগুলোকে।

এই অঞ্চল নিয়ে একাধিক মতবাদ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চল পরিদর্শনে আসা মানুষেরা বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন। কেউ নাকি ভিন্‌গ্রহীদের আনাগোনা প্রত্যক্ষ করেছেন, কেউ ওই নির্দিষ্ট জায়গায় একাধিক বার উল্কাবৃষ্টি হতে দেখেছেন। ভুতুড়ে নানা কাণ্ডের জন্যই এই অঞ্চলের নাম হয়েছে ‘জোন অব সায়লেন্স’। অর্থাৎ নীরবতার অঞ্চল।

মাত্র ৫০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে ওই ‘জোন অব সায়লেন্স’। চার লাখ হেক্টর এলাকা জুড়ে থাকা মাপিমি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভেরই একটি অংশ এই এলাকা। এই অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে বসতিহীন। ১৯৬৬ সালে এই অঞ্চলের এমন নামকরণ হয়। ওই বছর প্রিমেক্স নামে একটি তেল উৎপাদনকারী সংস্থা এই অঞ্চল পরিদর্শনের জন্য লোক পাঠায়। যে দলটি ওই এলাকায় পৌঁছেছিল তার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন অগাস্ত হ্যারি দে লা পিনা নামে এক ব্যক্তি। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন ওই অঞ্চলে পৌঁছানোর পরই তার রেডিওর সিগন্যাল চলে যাচ্ছে। তার পর তিনিই এই অঞ্চলের এমন নামকরণ করেন।

এর কয়েক বছর পর ১৯৭০ সালে খবরের শিরোনামে উঠে আসে এর নাম। উটার গ্রিন রিভার বিমানঘাঁটি থেকে এথেনা নামে একটি রকেট উৎক্ষেপিত হয়েছিল। নিউ মেক্সিকোর হোয়াইট স্যান্ড এলাকায় ওই রকেটটির নামার কথা ছিল। কিন্তু এই অঞ্চলের উপর দিয়ে অতিক্রম করার সময়ই তা নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং জোন অব সায়লেন্সের ঠিক মাঝে ভেঙে পড়ে। ক্রমে রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের পছন্দের জায়গা হয়ে ওঠে এই অঞ্চল।

ওই ঘটনার পর ভন ব্রাউন নামে এক বিজ্ঞানীকে এই অঞ্চলে পাঠায় নাসা। কেন রকেটি এখানেই ভেঙে পড়েছে তার প্রকৃত কারণ জানার জন্যই তাকে পাঠিয়েছিল নাসা। ভন সেখানে ২৮ দিন ছিলেন। ৩০০ জন কর্মী তার অধীনে কাজ করছিলেন। এই দীর্ঘ সময় থাকার জন্য ছোটখাটো একটি গ্রাম বানিয়ে ফেলেছিলেন তারা। থাকার জন্য একাধিক অস্থায়ী বাড়ি, রান্নাঘর, চিকিৎসালয় এবং যাতায়াতের সুবিধার জন্য একটি রেললাইনও বানিয়ে নিয়েছিলেন। রকেটের ধ্বংসাবশেষ এবং মাটি-সহ অন্যান্য নমুনা ট্রেনে করেই গবেষণাগারে পাঠাতেন।

ভনের কাটানো ২৮ দিনই এই অঞ্চল নিয়ে একাধিক অতিজাগতিক ধারণার জন্ম দেয়। শ্রমিকদের কেউ নাকি ভিন্‌গ্রহীদের ঘোরাফেরা করতে দেখেন তো কেউ নাকি হঠাৎ হঠাৎ আকাশে আলোর বিচ্ছুরণ প্রত্যক্ষ করেন। এই অঞ্চলে নাকি এমন কিছু প্রাণী এবং উদ্ভিদের দেখা মেলে যা রহস্যজনক।

তবে পরবর্তীকালে এই অঞ্চল নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটেছে। জানা যায়, এক সময়ে এই অঞ্চলে প্রচুর উল্কাপাত হয়েছে। ১৯৩৮ এবং ১৯৫৪ সালে একই জায়গায় পর পর দু’টি বড় আকারের উল্কা পড়ে। এর ফলে বিশালাকার গর্তও হয়। এর কয়েক বছর পর ১৯৬৯ সালে ফের এই অঞ্চলের কিছুটা পশ্চিমে উল্কাবৃষ্টি হয়।

বিজ্ঞানীদের অনুমান, সেই কারণেই এই অঞ্চল কিছুটা চৌম্বকত্ব লাভ করে থাকতে পারে। তবে এই অঞ্চল নিয়ে গড়ে ওঠা বেশির ভাগ ঘটনাই মনগড়া। এক সময় এই অঞ্চল টেথিস সাগরে ডুবে ছিল। ফলে প্রচুর পরিমাণে সামুদ্রিক জীবের জীবাশ্ম এবং নুন পাওয়া যায় মাটিতে। সেগুলো উত্তোলনের কাজ চলে।