তামিমকে ‘বিশ্বকাপ পর্যন্ত’ চেয়েছিলেন সাবেক সতীর্থরা

নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৬, ২০২৩, ০৮:২১ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকাঃ আগেরদিন আফগানিস্তানের কাছে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচ হেরে সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। এর পরদিন আজ (৬ জুলাই) বেলা গড়াতেই ক্রীড়াঙ্গনে হৈ-চৈ ফেলে দেয় তামিম ইকবালের সংবাদ সম্মেলনের খবর। ফলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের দিকেই পুরো ক্রিকেট মহলের মনোযোগ চলে যায়। তাদেরই ঘরের সন্তান তামিম গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘোষণা নিয়েই হাজির হবেন, সেটি বাতাসের বেগে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তিনি যে ঘোষণা দিয়েছেন তাতে হতবাক পুরো জাতি।

সংবাদ সম্মেলেনে এসে শুরুতেই জানালেন বাংলাদেশ দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাচ্ছেন তামিম। কাঁদো কাঁদো কণ্ঠ আর অশ্রুভেজা চোখে তার গলাটা বারবারই ধরে আসছিল। মনে হচ্ছিল পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে কঠিন কথাগুলোই বলছেন টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক। আর তাই তো স্বাভাবিক, তিনি যে বাঁ-হাতি ব্যাটে বিশ্বের বাঘা বাঘা সব বোলারের বলকে একের পর এক সীমানার বাইরে উড়িয়ে ফেলেছেন। সেই ব্যাটই যে আজ তুলে রাখলেন তারকা এই ওপেনার। 


পরিসংখ্যানের বিবেচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের মালিকও তামিম। অধিনায়কের বিদায়ে মন খারাপ হয়েছে বর্তমান থেকে শুরু করে তার সাবেক সতীর্থদেরও। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে তামিমকে নিয়ে সেসব কথাই বলেছেন জাতীয় দলে তার এক সময়ের সতীর্থরা।

জাতীয় দলের সাবেক পেসার এবং বর্তমান বোলিং কোচ নাজমুল হোসেন বলছেন এটা আবেগী সিদ্ধান্ত, ‌‘তামিমের এমন সিদ্ধান্তে আমি নিজেও আসলে ইমোশনাল হয়ে গেছি। ২০০৭ সালে সে যখন বিশ্বকাপ খেলে এর আগে থেকেই কিন্তু তার সঙ্গে আমার পরিচয়। সেই সময় থেকেই তাকে খুব ভালো করে চিনি। আমার কাছে মনে হয় এটা একটা আবেগী সিদ্ধান্ত। যদিও এটা তার একান্তই ব্যক্তিগত।’

তিনি আরও বলেন, ‘কমপক্ষে বিশ্বকাপটা খেলে যদি সে অবসর নিত তাহলে আমার কাছে মনে হয় আরো ভালোবাসা-সম্মান পেত। গত দুয়েকদিনে যেটা হয়েছে, তাতে হয়তো তামিম মানসিকভাবে অন্য কিছু নিয়ে প্রস্তুত ছিল না। সেসব চিন্তা করেই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত তার। তামিমকে আরও কিছুদিন পেলে হয়তো ভালো হতো, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য। ব্যক্তিগতভাবে আমি তামিমকে মিস করব। তামিম অনেক বুদ্ধিমান ছেলে, সে সবকিছু বুঝেই হয়তো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেহেতু বিশ্বকাপের আগে তামিমের যে রেকর্ড সেটি বাংলাদেশ মিস করবে।’


এদিকে সাবেক অধিনায়ক রাজিন সালেহ জানালেন তামিমের এমন সিদ্ধান্তে অবাক হওয়ার কথা। তবে কেন তার এমন সিদ্ধান্ত সেটা নিশ্চিত নন তিনি, ‘তামিম আমাদের দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার। গেল এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সে দেশসেরা ব্যাটারদের একজন। তার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। তবে বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেললে দেশের জন্যই ভালোই হতো।’

এদিকে বাংলাদেশ দলের প্রথম সুপারস্টার ও সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। লন্ডন থেকে এই ক্রিকেটার বলছিলেন, ‘আমি শকড। আর হয়তো ৬-৭টা ম্যাচ পরেই বিশ্বকাপ। তার আগেই এমন সিদ্ধান্ত। জীবনটাই এরকম, তাকেও হঠাৎই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বাংলাদেশের সব ফরম্যাটে তিনি টপ স্কোরার ছিলেন এবং ২৫টা সেঞ্চুরি অবশ্যই বিরাট অ্যাচিভমেন্ট। আমার মনে হয়না সে ফিরে আসবে, যেহেতু বিশ্বকাপের আগেও আর তেমন সময় নেই।’

তামিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে আশরাফুল আরও বলেন, ‘এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য পথটা কঠিন হয়ে গেল। যখন আমরা তৃতীয় ওপেনার খুঁজছিলাম, তার ভেতরই অভিজ্ঞ একজনকে হারালাম। তামিম তোমাকে ধন্যবাদ, গত ১৯টা বছর তুমি আমাদেরকে অনেক ইন্টারটেইন করেছ। ২০০৭ সাল থেকে ১৯১ রানের জবাবে ডমিন্যান্ট করার মানসিকতা দেখিয়েছ। এরপর বাংলাদেশের হয়ে অনেক অর্জন তোমার, আমার জুনিয়র হলেও তুমি আমার আগেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছ। যেটা সিনিয়র হয়েও আমি ও মাশরাফি এখনও পারিনি। তামিমের বিগ হার্ট, ওর মতো বিগহার্ট মানসিকতা কারও নেই। তোমার এমন দৃঢ় মনোবল এবং ব্যক্তিত্ব আসলেই অসাধারণ।’

তামিমের সিদ্ধান্তে এখনও ঘোরের মধ্যে আছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক রাজ। তিনি বলছেন, ‘একটু আগে শুনলাম, দেখি এখন কি হয় না হয়; আমি আসলে এখনও কিছু বুঝতেছি না। সত্যি বলতে আমি এখনও ঘোরের মধ্যে আছি। এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছি না, এটা ক্রিকেট বোর্ডের ব্যাপার। তামিমের কথা তো তামিম বলে গেছে।’


এমআইসি