ঢাকাঃ পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্কটা এখন ছিন্ন কিংবদন্তি পেলের। হয়ে গেছেন ওপারের বাসিন্দা। দূর আকাশের তারকা তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী এ ফুটবল জাদুকর। মহাপ্রয়াণের আগে নিজের পুরোনো ঠিকানায় শেষবারের মতো পৌঁছান কালো মানিক। ক্লাব সান্তোসের এই ভিলা বেলমিরো মাঠেই তো সুপারস্টার হয়ে উঠেছেন পেলে।
সর্বকালের সেরা ফুটবলারকে দেখতে ক্লাব সান্তোসের আঙিনায় সাধারণ জনতার উপচে পড়া ভিড় লেগে যায়। ফুটবল রাজাকে শেষবারের মতো ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যাওয়া হাজারো ভক্ত।
শেষবারের মতো দেখতে গেছেন পেলের পত্নী মার্সিয়া আওকি ও ছেলে এদিনিয়ো। ফুটবল জাদুকরকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। ফুটবল সম্রাটের পরিবারকে সান্ত্বনাও দেন তিনি। তবে পেলের কফিনের সামনে সেলফি তুলে সমালোচিত হন ফিফাপ্রধান। ফুটবল সম্রাটের শেষকৃত্যে অবশ্য যোগ দেননি নেইমার জুনিয়র। তবে তার বাবা যোগ দেন পেলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা এবং তার স্ত্রীও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
মানুষ পেলে আজ স্বর্গের বাসিন্দা। কফিনে বন্দি। সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতাল থেকে সোমবার সকাল ১০টায় (ব্রাজিলের স্থানীয় সময়) পেলের কফিন নিয়ে যাওয়া হয় সান্তোসের মাঠে। এখানেই ২৪ ঘণ্টা কফিনবন্দি ছিল তার মরদেহ। এরপরই শুরু হয় শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব। কফিনের মুখ খোলা ছিল। যাতে প্রিয় তারকাকে দেখতে পারেন সবাই। মঙ্গলবার সকাল ১০টা (ব্রাজিলের স্থানীয় সময়) পর্যন্ত চলে শ্রদ্ধা জানানো। রাত জেগেও সবাই ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। পেলের কফিন ঢেকে দেওয়া হয় সান্তোস এবং ব্রাজিলের পতাকায়। এ সময় সাদা ফুল দিয়ে ঘেরা ছিল কফিনটি। মাঠের ঠিক মাঝখানে ফুলের সজ্জায় তৈরি বিশেষ মঞ্চে রাখা হয়েছে তার কফিন। এখানে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন ফুটবলের জাদুকর হিসেবে। শ্রদ্ধা জানানোর পালা শেষে পেলের সেই প্রিয় মাঠ ভিলা বেলমিরো থেকে শুরু হয় তার শেষযাত্রা।
সান্তোসের বিভিন্ন রাস্তায় কফিনবন্দি হয়ে ঘুরেন পেলে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় তার বাবার বাড়িতে। যেখানে বসবাস করেন তার শতবর্ষী মা ডোনা সেলেস্তে আরান্তেস। পেলের মা খুবই অসুস্থ। স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছেন অনেক আগেই। চলাফেরা করতে পারেন না। বাড়িতে থেকেই প্রিয় সন্তানকে শেষবারের মতো দেখেছেন আরান্তেস।
শেষে পেলে চির শান্তির নিদ্রায় শায়িত হয়েছেন নেকরোপল একিউমেনিকা সমাধিতে। লিজেন্ডের শেষ ইচ্ছাও ছিল এমন। মৃত্যুর আগে এখানেই সমাহিত হতে চেয়েছিলেন। ব্রাজিলিয়ান গণমাধ্যম জানিয়েছে, পেলের শেষ ইচ্ছা ছিল ৩২ তলাবিশিষ্ট নেকরোপল একিউমেনিকা সমাধির নবম তলায় শায়িত হবেন। সমাধিস্থল থেকে প্রিয় ভিলা বেলমিরো মাঠ দেখতে পারবেন বলেই হয়তো এমন ইচ্ছার কথা জানিয়ে গেছেন ফুটবল রাজা। তবে পেলের শেষকৃত্যে ছিলেন না বাইরের কেউ। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেবল তার পরিবার-পরিজন।
কোলন ক্যানসারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই শেষে হার মেনেছেন পেলে। গত বৃহস্পতিবার ৮২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান ফুটবল বিশ্বের মহাতারকা।
বুইউ