ঢাকাঃ চট্টগ্রাম টেস্টে হারার পর ঢাকা টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ছিল টাইগারদের। কিন্তু মিরপুরের টেস্টে টাইগারদের সেই প্রত্যয়ের ছিটেফোটাও দেখা গেল না। বোলিং তুলনামূলকভাবে ভালো বলা গেলেও ব্যাটিং হয়েছে যাচ্ছেতাই। চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের টার্গেট ছিল মাত্র ২৩১ রানের। হাতে ছিল পুরো দেড়দিন।
২৩১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সবকটি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তুলেছে ২১৩ রান। উইন্ডিজরা জিতেছে ১৭ রানে। এই হারে ২টেস্ট সিরিজ হেরে হোয়াইটওয়াশের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।
উইন্ডিজকে অল্প রানে গুটিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের জন্য লড়াইয়ের ক্ষেত্রটা প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন বোলাররা। কিন্তু লক্ষ্যটা হাতের মুঠো থেকে যেন বের করে দিলেন তামিম-মুশফিকরা। কেউ চাপে এবং কেউ ওয়ানডে স্টাইলে খেলে উইকেট বিলিয়ে এলেন। শেষদিকে একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু চেষ্টা সফল হলো না। শেষ পর্যন্ত হোয়াইওয়াশের লজ্জায় ডুবলো বাংলাদেশ।
তবে বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ের জন্য রাকিম কর্নওয়ালকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। একাই ৯ উইকেট তুলে নিয়ে মূল সর্বনাশটা করেছেন এই বিশালবপু স্পিনার।
রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ২৩১ রানের লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের দুই ওপেনার ৫৯ রানের জুটি গড়েন। ১৪ ইনিংস পর ওপেনিং জুটিতে ৫০ ছাড়ালো বাংলাদেশ। কিন্তু ক্যারিবীয় পার্ট-টাইম বোলার কার্লোস ব্র্যাথওয়েট সৌম্য সরকারকে (১৩) ফেরালে ভাঙে এই জুটি। কয়েক ওভার পর ২৮তম টেস্ট ফিফটি তুলে নেন তামিম। মারেন ৯টি বাউন্ডারি।
ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করে মাত্র ৪৪ বলে ফিফটি তুলে তামিমও ইনিংস দীর্ঘ করতে পারেননি। প্রথম ইনিংসের মতোই অতি আগ্রাসী ব্যাটিং করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন এই অভিজ্ঞ বাঁহাতি ওপেনার। এবারও হন্তারক সেই ব্র্যাথওয়েট। ক্যারিবীয় অধিনায়কের অফসাইডের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট কভারে ক্যাচ তুলে দেন তামিম।
তামিমের বিদায়ের পর আরও একবার টেস্ট ক্রিকেটে ব্যর্থতার নজির স্থাপন করে বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পুরো সিরিজেই ব্যাট হাতে ব্যর্থ এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এবার তার বিদায় হলো ১১ রান করে। শিকারী ক্যারিবীয় স্পিনার রাকিম কর্নওয়াল।
দলের প্রয়োজনে হাল ধরতে পারেননি মুশফিকুর রহিমও (১৪)। দলকে একশ পার করার পর ক্যারিবীয় স্পিনার জোমেল ওয়ারিক্যানের বল মুশফিকের ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক জশুয়া দা সিলভার হাতে জমা হয়। আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিও নিয়েছিলেন মুশফিক, কিন্তু সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
প্রথম ইনিংসের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দ্বিতীয় ইনিংসেও আগেভাগে ফিরেছেন মোহাম্মদ মিঠুনও (১০)। এবার কর্নওয়ালের লাফিয়ে উঠা বলে লেগ স্লিপে থাকা বোনারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন মুমিনুল। কিন্তু তিনিও ক্যাচ তুলে দিয়েই ফিরেছেন। ওয়ারিক্যানের বলে ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগে থাকা কর্নওয়ালের ক্যাচ তুলে দেন টাইগার অধিনায়ক (২৬)।
মুমিনুলের সঙ্গে লিটনের ৩২ রানের জুটি আশা জাগিয়েছিল ভালোভাবেই। কিন্তু অধিনায়কের পথে হাঁটেন এই ডানহাতিও। কর্নওয়ালের অফ সাইডের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ জমা দেন লিটন (২২)। লোয়ার অর্ডারে নামা তাইজুলও (৮) কর্নওয়ালের শিকার। সিরিজের সফলতম বোলার কর্নওয়ালের এটি এই ম্যাচে নবম উইকেট।
দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরও নাঈম হাসান ও আবু জায়েদকে নিয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা করেন মিরাজ। ওভারও বাড়িয়ে দেওয়া ৫ ওভার। পরে বাড়ানো হয় আরও ৫ ওভার। এই সময়ে মিরাজ খেলেন ৫৬ বলে ৩১ রানের ইনিংস। ৩টি চার ও ২টি ছক্কা দেখেই বোঝা যায় কতটা উদগ্রীব ছিলেন তিনি। কিন্তু ওয়ারিক্যানের দলে স্লিপে থাকা কর্নওয়ালের হাতে ক্যাচ তুলে দিলে শেষ হয় তার প্রতিরোধ।
আগামীনিউজ/নাসির