বাংলাদেশকে ভয় ধরিয়ে সিরিজ হারল জিম্বাবুয়ে

ক্রীড়া প্রতিবেদক মার্চ ৩, ২০২০, ০৮:৫৭ পিএম
তামিম ইকবালের সেঞ্চুরিই বাংলাদেশকে জিততে সাহায্য করেছে। ছবি: সংগৃহীত।

ঢাকা : ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের দিনে ৪ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। টানা দুই ম্যাচ জিতে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জিতে নিয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। এই সিরিজই নড়াইল এক্সপ্রেসের অধিনায়ক হিসেবে শেষ সিরিজ। তাঁর বিদায়ী সিরিজটি সেঞ্চুরি দিয়ে রাঙিয়ে দিলেন তামিম। অবশ্য প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন লিটন দাসও। এদিন বাংলাদেশের ৩২২ রান তাড়া করতে নেমে ভয়ই ধরিয়ে দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। তবে শেষ অবধি তারা ৮ উইকেটে ৩১৮ রানে থেমেছে।

 রান তাড়া করতে নেমে জিম্বাবুয়ের শুরুটা যেমন হওয়ার দরকার ছিল তেমনটা হয়নি। তবে শেষের দিকে বাংলাদেশের বুকে কাঁপন ধরিয়েছিল মাদেভারে-সিকান্দার রাজার জুটি। এই দুজনকে ফেরানোর পরও বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি আসেনি। বরং মুতমবুঝি এবং ডোনাল্ড ত্রিপানো অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। যদিও শেষ অবধি বাংলাদেশই জিতেছে। তবে মাঝখানে জিম্বাবুয়েকে হালকাভাবে নেওয়ার কারণেই এতটা পেয়ে বসেছিল সিকান্দারা রাজারা সেই প্রশ্ন থাকছে।

এদিন ইনিংসের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে শফিউল ইসলামের বলে ফিরে যান রিগিস চাকাভা (২)। এরপর ব্রেন্ডন টেলরকে (১১) রান আউটের ফাঁদে ফেলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ৪৪ রানে ২ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়েকে বেশিক্ষণ টানতে পারেননি অধিনায়ক শন উইলিয়ামস। তাঁকে এলবিডব্লু করে ফিরিয়েছেন সেই মিরাজই। ৬৭ রানে ৩ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়েকে ভরসা দিচ্ছিলেন তিনাশে কামুনুকাওয়ে। অবশ্য ফিফটি করার পর তাঁকে বেশিদূর যেতে দেননি তাইজুল। কামুনুকাওয়েকে বোল্ড করে ফিরিয়েছেন তিনি। তার আগে ৭০ বলে পাঁচ চার আর দুই ছক্কায় করেছেন ৫১ রান। এরপর মাদেভারে ও সিকান্দার রাজা ৮১ রানের জুটি গড়ে জিম্বাবুয়েকে লড়াইয়ে রাখেন। মাদেভারেকে (৫২) এলবিডব্লু করে এই জুটি ভাঙেন তাইজুল। ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে থাকা রাজাকে ফিরিয়েছেন মাশরাফি মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানিয়ে। তার আগে ৫৭ বলে পাঁচ চার আর দুই ছক্কায় ৬৬ রান এসেছে রাজার ব্যাট থেকে। ২২৫ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মনে হয়েছিল জিম্বাবুয়ের গুটিয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার। কিন্তু এখান থেকে অবিশ্বাস্যভাবে জিম্বাবুয়েকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে যান ডোনাল্ড ত্রিপানো। তার আগে ১৭ বলে ২৭ রান করে সঙ্গ দিয়ে যান মুতমবুঝি। তবে শেষ দিকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন ত্রিপানো। মাত্র ২৭ বলে তিনি খেলেন ৫৪ রানের ইনিংস। জিম্বাবুয়ে জয়ের খুব কাছে গিয়ে ঘুরে এসেছে। ২৮ বলে খেলা ত্রিপানোর ইনিংসে ছিল দুটি চার এবং পাঁচটি ছক্কা।

এর আগে নির্ধারিত ৫০ ওভারে তামিম ইকবালের সেঞ্চুরির সৌজন্যে ৮ উইকেটে ৩২২ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার (৩ মার্চ) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাস (৯) এদিন শুরুতেই রান আউটে কাটা পড়েন। খানিকবাদে রান আউটের দূর্ভাগ্য মেনে নিতে হয় নাজমুল হোসেন শান্তকেও (৬)।

লিটন-শান্তকে হারানো বাংলাদেশের ইনিংসকে টানতে থাকেন তামিম। ৪২ বলে ফিফটি তুলে নেন তিনি। পাশে পেয়ে যান আরেক অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকে। তিনিও জিম্বাবুয়ের বোলারদের চারপাশে মেরে ফিফটি তুলে নেন। অবশ্য ফিফটিটাকে লম্বা করতে পারেননি ভীষণ চাপে থাকা মুশফিক। ছয়টি চারে ৫০ বলে ৫৫ রান করে ড্রেসিংরুমে ফেরেন তিনি। তার আগে তামিমের সঙ্গে গড়েন ৮৭ রানের ‍জুটি। 

এক প্রান্ত আগলে রেখে এবং বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলে সমালোচকদের ব্যাট হাতে জবাব দিলেন তামিম। মারমুখি ভুঙ্গিমায় ক্যারিয়ারের ১২ নম্বর সেঞ্চুরি তুলে নেন এই বাঁহাতি ওপেনার। ১০৬ বলে পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি। পাকা ১৯ মাস পর সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তামিম। একসঙ্গে দিলেন অনেক জবাব।

এদিন আরও একটি মাইলফলক স্পর্শ  করেন তামিম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৭০০০ রানের অভিজাত ক্লাবে প্রবেশ করেন তিনি।  তামিমের সেঞ্চুরির পর শত রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ। দলীয় ২৫৮ রানের মাথায় চার্লটন টিসুমার বলে ওয়েসলি মাধভেরের তালুবন্দি হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন তিনি। তার আগে ৫৭ বলে ৩টি চারে ৪১ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। তবে আরেক প্রান্তে জিম্বাবুয়ের বোলারদের পিটিয়ে স্কোরবোর্ডে রান বাড়াতে থাকেন তামিম। শেষ পর্যন্ত এই ওপেনারকে থামিয়ে দেন কার্ল মুম্বা। তার আগে ১৩৬ বলে ২০টি চার আর ৩ ছক্কায় ১৫৮ রান করেন তামিম।  

তামিমের বিদায়ের পর ব্যাটে ঝড় তোলেন মোহাম্মদ ‍মিঠুন। তার ব্যাটে চড়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। মাত্র ১৮ বলে ৩টি চার আর এক ছক্কায় ৩২ রান করে অপরাজিত থাকেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। জিম্বাবুয়ের হয়ে ডোনাল্ড ত্রিপানো ও  কার্ল মুম্বা ২টি করে উইকেট পেয়েছেন।  

আগামীনিউজ/রবিউল/জাকিউল