আকবরের রাজত্বে বাংলাদেশ

রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০, ০১:০১ পিএম
ছবি সংগৃহীত

ঢাকা : বিমানবন্দরে ক্রিকেট দলকে ঘিরে এত গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি এর আগে কবে দেখা গিয়েছিল বলা মুশকিল। আকবর আলীদের ঘরে ফেরার খবর বেশিরভাগ চ্যানেলই লাইভ দেখিয়েছে। গোটা বাংলাদেশই দেখেছে বীরদের বরণ করার দৃশ্য। বিশ্বকাপ জয় বলে কথা। বাংলাদেশের ইতিহাসেই প্রথম। বিশ্বজয়ী নায়কেরা দেশে ফিরবেন, বাড়াবাড়ি তো একটু হবেই। তা সেটা হলোও বিমানবন্দরে। 

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দীর্ঘভ্রমণ ক্লান্তি আকবরদের শরীরে কোনো ছাপ ফেলতে পারেনি। উল্টো হাজার ওয়াটের আলো ছড়িয়েছে তারা। যে আলোয় গোটা বাংলাদেশই আলোকিত। 

আকবরদের নামে বিমানবন্দর থেকেই শুরু হলো হর্ষধ্বনি। বাংলাদেশ, বাংলাদেশ স্লোগানে প্রকম্পিত হলো বিমানবন্দর থেকে মিরপুর অবধি। লোকজন পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে আকবরদের অভিবাদন জানালেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারানোর পর থেকেই পৃথিবীর বৃহত্তম এই ব-দ্বীপে রীতিমতো আবেগের বিস্ফোরণ ঘটেছে। সবাই আকবর আলীদের নামে জয়ধ্বনি করছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট নতুন দিনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। 

বুধবার বিসিবি বস নাজমুল হাসান এবং ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বরণ করে নেন। আকবরদের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। এরপর আকবরদের বাসে চড়ে মিরপুরে যান বিসিবি সভাপতি। সেখানে আগে থেকেই হাজার হাজার ক্রিকেটপ্রেমী জড়ো হয়েছিলেন আকবরদের এক নজর দেখার জন্য। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কেক কেটে, আতশবাজি পুড়িয়ে বিশ্বকাপ জয় উদযাপন করা হয়েছে তুমুল উৎসাহ আর উদ্দীপনায়। টেলিভিশন সেটের সামনে বসে পুরো দেশই এই দৃশ্য অবলোকন করেছে। 

এরপর সাংবাদিক বৈঠকে নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলী। এই যে এত সম্মান, এত মানুষের ভালোবাসা, শেষে না মাথাটাই ঘুরে যায়! এ নিয়ে সতর্কই আছেন আকবর, ‘আমরা বিশ্বকাপ জিতেছি কিন্তু আমাদের টিম ম্যানেজম্যান্ট থেকে একটা বার্তা ছিল যে আমাদের পেশাদার ক্যারিয়ার মাত্র শুরু হয়েছে হেলায় গা ভাসিয়ে দেওয়া যাবে না। সবাইকে পরবর্তী করণীয়র দিকে নজর রাখতে হবে।’

ফাইনাল জেতার পর আবেগ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। মাঠে উদযাপন করতে গিয়ে লেগে যায় ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে। আইসিসি বিষয়টি খতিয়ে দেখে বাংলাদেশের তিন জন এবং ভারতের দুজন ক্রিকেটারকে শাস্তি দিয়েছে। এ নিয়ে আকবর বলে গেলেন, ‘ফাইনাল জেতার পর যেটা হয়েছে সেটা কাম্য ছিল না। আমাদের ভুল হয়েছে। ওরাও ভুল করেছে। এটা তো আইসিসি মিটমাট করে দিয়েছে। যাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে তারা সেটা মাথা পেতে নিয়েছে। এ নিয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাই না।’

ফাইনালে মাথা ঠান্ডা রেখে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন কাঙ্খিত লক্ষ্যে। অপরাজিত ৪৩ রান করে আকবরই বাংলাদেশের নায়ক। ঠান্ডা মাথার কারণে তাঁকে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। যেটা পছন্দ নয় আকবরের। তাঁর সাফ কথা, এক-দুই ম্যাচে এরকম ইনিংস খেললেই ‘ক্যাপ্টেন কুল’ হওয়া যায় না, ‘ধোনি বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিনিশার। আমার এক ইনিংস দেখে উনার সঙ্গে তুলনা করতে পারেন না। এটা বাড়াবাড়ি।’

বিশ্বকাপ জেতার পর আকবর ভেবেছিলেন দেশে ফিরলে তাদের ঘিরে বড় কোনো অনুষ্ঠান হবে। কিন্তু সেটা যে এত বড় মাত্রায় হবে ভাবেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। বিমানবন্দর থেকে মিরপুর-এত এত মানুষের ভালোবাসা পেয়ে বিস্মিত আকবর বলে গেলেন, ‘ধারণা করেছিলাম বাংলাদেশে এলে বড় কিছু হবে। তবে এত বড় হবে, ভাবতে পারিনি।’

বিসিবি উনিশের তরুণদের ধরে রাখতে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। এই দলের কেউ যাতে হারিয়ে না যায় সে জন্য গঠন করা হবে ‘অনূর্ধ্ব-২১’ বিশেষ দল। তাদের দু’বছর ক্যাম্পে রেখে গড়ে তোলা হবে। তাদের সঙ্গে চুক্তিও থাকবে দু’বছরের। এ সময় প্রতি মাসে যুবারা পাবেন এক লাখ টাকা করে। 

এ নিয়ে বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসানের বক্তব্য, ‘আমরা অনূর্ধ্ব-২১ নামের একটা আলাদা বিভাগ চালু করছি। সেখানে দুই বছর ওদের নিয়ে কাজ করা হবে, ওরা যাতে হারিয়ে না যায়। প্রতি মাসে এখানে যারা থাকবে, তারা ১ লাখ টাকা পাবে। দুই বছর পরপর ওদের পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হবে। এরপর নতুন চুক্তি করা হবে।’

আগামীনিউজ/রবিউল/জাকিউল