সহায়তা চাওয়া হবে সেনাবাহিনীর

পার্বত্য নদীর নাব্যতা ফেরাতে কাজ করছে বিআইডব্লিউটিএ

তরিকুল ইসলাম সুমন জানুয়ারি ১৮, ২০২০, ০৭:৪৮ পিএম

পার্বত্য চট্টগ্রামের আটটি নৌপথে দ্রুতগামী নৌযান চলাচলের জন্য নদীর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করেছে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

পাশাপাশি রাঙ্গামাটি, বান্দরবন এবং খাগড়াছড়ি— এই তিন জেলার নৌপথের নাব্যতা উন্নয়ন এবং ল্যান্ডিং সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের এসব নদীর অধিকাংশই মৌসুমী নদী। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব নদীতে পানি থাকে। পরবর্তীতে এসব নদী শুকিয়ে যাওয়ায় নৌ চালাচল প্রায় বন্ধ থাকে। ফলে গৃহস্থালির দৈনন্দিন কাজে প্রয়োজনীয় পানি, চাষাবাদ ও মৎস্য আহরণ ইত্যাদি বন্ধ থাকে। এর প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অঞ্চল পরিদর্শনকালে পাহাড়ে উৎপাদিত পণ্য ও মালামাল পরিবহণের জন্য এ এলাকার নৌপথ সচলের মাধ্যমে দ্রুতগতির নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য এলাকার নদীগুলো খননের সমীক্ষা শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ।

বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম তালুকদার আগামী নিউজ ডটকমকে বলেন, পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ সমীক্ষার কাজ শেষ করেছে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম)। তবে পার্বাত্য এলাকায় এ কাজ করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আশা করেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। সমীক্ষা রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে নদী খননের জন্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) এর এক কর্মকর্তা জানান, নানা ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে পার্বত্য এলাকায় কাজ করতে হচ্ছে। নিরাপত্তার অভাব ও দেখা দিয়েছে। তারপরেও আমরা কাজ করছি।

বিআইডব্লিউটিএর একটি সূত্র জানায়, আইডব্লিউএম থেকে বিআইডব্লিউটএকে জানানো হয়েছে হাড়িয়াছড়া নদীটি বান্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় কর্মকর্তারা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন। এ কারণে এখানে কাজের জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা নিতে হতে পারে।

নদীগুলো হলো—

কাসালং নদী : মিজোরামের পূর্ব পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে বাঘইছড়িতে এসে কাসালং নদীতে রূপ নিয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ১২৫ কিলোমিটার, প্রস্থ ৮০ মিটার।

মাইনি নদী : ভারত থেকে উৎপন্ন হয়ে খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা নিকটে কয়েকটি ছোট প্রবাহের তৈরি করেছে। এর যৌথ নাম হয়েছে মাইনী নদী। এর দৈর্ঘ্য ১০৯ কিলোমিটার, প্রস্থ ৬২ মিটার।

চিংড়ি নদী : ভারতের ত্রিপুরা পার্বত্য এলাকার এবং ভাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর দৈর্ঘ্য ৮৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৭৭ মিটার।

রাইনখাইন নদী : রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলা থেকে রাইনখাইন নদীর উৎপত্তি হয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ১৩৫ কিলোমিটার, প্রস্থ ৪৩ মিটার।

হাড়িয়াছড়া নদী : এটি বান্দরবনের সদর উপজেলার পাহাড়ি জলপ্রপাত থেকে উৎপন্ন হয়েছে। নদীর দৈর্ঘ্য ৩০ কিলোমিটার, প্রস্থ ২৫ মিটার।

শুভলং মারমা ছড়া নদী : এ নদীটি বেলাছড়ি উপজেলার পাহাড়ি জল প্রপাত থেকে উৎপন্ন। দৈর্ঘ্য ৪৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ২০ মিটার।

টংকাবাটি খাল : বান্দরবনের সদর উপজেলার টংকাবাটি ইউনিয়নের হরিনিঝিড়ি পার্বত্য এলাকায় উৎপন্ন হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৫৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৩২ মিটার।

কর্নফুলি নদী : এটি একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। মিজোরামের লুসাই পাহাড় থেকে এর উৎপন্ন হয়েছে। বরকল উপজেলার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর দৈর্ঘ্য ১৩১ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৪৫০ মিটার। এই নদীর রাঙ্গামাটি থেকে থেগামুখ পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার সার্ভে করা হবে।

উল্লেখ্য, এ কাজে ব্যয় হবে প্রায় চার কোটি ১৪ লাখ টাকা।

 

আগামীনিউজ/টিআইএস/এএম