অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ওয়াসার ২৬ খালের নিয়ন্ত্রণ চায় বিআইডব্লিউটিএ

তরিকুল ইসলাম সুমন জানুয়ারি ১৪, ২০২০, ০১:৩৪ পিএম
সংগৃহীত ছবি

ঢাকা: ঢাকা শহরে ওয়াসার নিয়ন্ত্রণাধীন ২৬ খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, ড্রেজিং ও সৌন্দর্যবর্ধনের দায়িত্ব নিতে চায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। পাশাপাশি এসব খালের নোংরা পানি যাতে ঢাকার চারপাশের নদীর পানি দূষিত করতে না পারে সেজন্যও কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে সরকারের এই সংস্থা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীর নাব্যতা এবং নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখা সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ যদি যথাযথ প্রক্রিয়ায় খাল সমূহের অবস্থান নিশ্চিত করে বিআইডব্লিউটিএর অধীনে ন্যস্ত করে, তাহলে বিদ্যমান অবৈধ স্থাপনা অপসারণের লক্ষ্যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা এবং খননের মাধ্যমে খাল সমূহের ভূমি পূনরুদ্ধারের চেষ্টা করবে বিআইডব্লিউটিএ।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটির চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব-উল ইসলাম আগামীনিউজ ডট কম-কে বলেন,  ‘ওয়াসা দিলে আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে এখনো আমাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত কোনো প্রস্তাব ওয়াসাকে পাঠানো হয়নি। বিভিন্ন ফোরামে এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’

নদ-নদী সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সদস্য এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান আগামীনিউজ ডট কম-কে বলেন,‘বিআইডব্লিউটিএ এবং ওয়াসা তাদের নিজ নিজ কাজ রয়েছে। এক্ষেত্রে এক সংস্থার দায়িত্ব অন্য সংস্থাকে দিলে ভালো কাজ হয় না। বিআইডব্লিউটিএ তো নিজেদের কাজই নিজেরা ঠিক ভাবে করতে পারছে না। অপরদিকে ওয়াসার রাজধানীর খাল উদ্ধারে আগ্রহ কম। এক অর্থে তাদের সে সক্ষমতাও নেই। তাদের সক্ষমতা ২০ বছর আগে যা ছিল তা থেকে খুব একটা বাড়েনি। খাল উদ্ধারে অর্থ বরাদ্দও কম। যে কাজে বেশি বরাদ্দ সেদিকেই নজর ওয়াসার।’ এক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএ, ওয়াসা এবং ‍সিটি করপোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।

ঢাকা নদী বন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আরিফ উদ্দিন জানান, ‘ওয়াসা আামাদের কাছে রাজধানীর খালগুলো হস্তান্তর করলে আমরা এর পাশ থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে খালগুলো উদ্ধার করতে পারবো। এ বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবল এবং যন্ত্রপাতিও আমাদের রয়েছে। পাশাপাশি এসব খালের পানি প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য খালগুলো ড্রেজিং করারও সক্ষমতা রয়েছে বিআইডব্লিউটিএর। আশা করি আমরা সফল হবো।’  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার এক কর্মকর্তা জানান, ‘ঢাকা ওয়াসায় এখন পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাবনা আসেনি। আর ঢাকা শহরের খাল রক্ষা ও প্রবাহমান রাখার মূল দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। সংস্থাটির আওতায় ঢাকার মধ্যকার ২৬টি খাল রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৪ কিলোমিটার। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকার কারণে খালগুলোতে অভিযান পরিচালনাসহ পানি প্রবাহ সচল রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে সংস্থাটি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওয়াসার খালের মধ্যে অধিকাংশ খালেই পানিপ্রবাহ নেই। এর মধ্যে বাইশটেকী, বেগুনবাড়ী, সাংবাদিক কলোনি, বাউনিয়া, ইব্রাহিমপুর, কশাইবাড়ী, আব্দুল্লাপুর, শাহজাদপুর, মহাখালী, রূপনগর, রামচন্দ্রপুর ‘ক’ ‘খ’, সুতিভোলা খাল, কাটাসুর-কল্যাণপুরের ছয়টি খাল, দিগুণ খাল, জিরানী খাল, সবুজবাগ-বাসাবো খাল, রূপনগর খাল, রূপনগর ব্রাঞ্চ (আরামবাগ) খাল, দেবধোলাই খালও দূষণ-দখলে বিপর্যস্ত।

আগামীনিউজ/টিআইএস/এমআর