উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ প্রচন্ডভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিনদিন ধরে দিনরাত কুয়াশাচ্ছন্ন থাকছে। দুপুর ১২টায়েও সূর্যের আলো নজরে আসছে না। বিকাল চারটার পর তাপমাত্রা কমতে থাকে। সন্ধ্যার পরেই কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পড়ছে পথঘাট। ঘন কুয়াশার কারণে রাতের বেলা মাত্র ১০ হাত দূরে কোনকিছু নজরে পড়ছে না।
সড়ক, মহাসড়কে চলাচলরত যানগুলোর গতি কমে গেছে। মোটরযানে সবকটি হেডলাইট জ্বালিয়েও সামনে এগুতে হচ্ছে গতি কমিয়ে। দিনের বেলা যে মোটর যানের গতি ৪০ থেকে ৮০ কিলোমিটার থাকছে সেই মোটরযানের গতি রাতের বেলা অর্ধেকে নেমে আসছে। রাস্তায় দ্রুত গতিতে চলতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকছে।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরে চলাচলরত সকালের সকল ফ্লাইটের সিডিউলের বিপর্যয় ঘটছে। সকাল সাতটা ৩০ মিনিট থেকে বেলা ১১টা ৩০ মিনিট সময়কালে চলাচলরত সকল ফ্লাইটের সিডিউল ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে ঢাকা-সৈয়দপুর, সৈয়দপুর-চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুর-কক্সবাজার যাতায়াতকারী বিমানযাত্রীরা চরম সঙ্কটে পড়েছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবস্থাপকের অফিস সূত্রে ওইসব তথ্য মিলেছে।
রাতের বেলা চিলাহাটি টু ঢাকা আন্তঃনগর ট্রেন নীলসাগর ও পঞ্চগড় থেকে ঢাকা চলাচলকারী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনেরও ঘন কুয়াশার কারণে গতি কমে এসেছে। দিনের বেলা তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রী থাকলেও রাতের বেলা ১৫ ডিগ্রীর নিচে নামছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে ওইব তথ্য।
শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে শিশু রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক দিনের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। নিউমোনিয়া ও কোল্ডডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। উত্তরাঞ্চলের সবকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল ও হেল্থ কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত রোগির সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে বলে এসব তথ্য মিলেছে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের দেয়া তথ্যে।
শীতের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা নদীর অববাহিকায় বসবাসরত চরবাসীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষরাও শীতের চোটে কাবু হয়ে পড়েছে। তবে যেসব এলাকায় তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচন শুরু হয়েছে সেইসব এলাকার শীতার্ত মানুষদের কিছুটা হলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচন আশির্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রার্থীরা ভোটের আশায় গরীব দুস্থদের মাঝে চুপি চুপি শীতবস্ত্র সরবরাহ করছে।
শীত বস্ত্রের পাইকারি দোকানগুলোতে বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। গ্রামীণ জনপদের ছোট ছোট কাপড় ব্যবসায়ীরা গরম কাপড়ের পাইকারি দোকানের উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ মোকাম সৈয়দপুরে প্রতিদিন আসছে। কিনে নিয়ে যাচ্ছে তারা শীত মোকাবেলার গরম কাপড়।
গরম কাপড়ের পাইকারি বাজারে কথা হয় সীমান্ত ঘেষা উপজেলা ডিমলার বাবুর হাটের ছোট ব্যবসায়ী মোজাফ্ফর আহমেদের সঙ্গে। তিনি জানান, ভোটকে কেন্দ্র করে গরম কাপড়ের বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। চেয়ারম্যান, মেম্বার প্রার্থীরা ভোটার পক্ষে টানতে চুপিসারে শীতবস্ত্র দুস্থ পরিবারগুলোতে প্রদান করছে।
কথা হয় পাইকারি গরম কাপড় ব্যবসায়ী মুহিব গার্মেন্সের মালিক মোখলেছুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভোটের কারণে আমাদের পাইকারি ব্যবসা বেশ জমে উঠেছে। আশানুরুপ বেচাকেনাও হচ্ছে। তার মতে, ভোটের সময় না হলে এভাবে কেনাবেচা জমে উঠতো না। শীতার্ত মানুষের জন্য ইউপি নির্বাচন আশির্বাদ হয়ে এসেছে। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় সন্ধার পরেই গ্রামগঞ্জ ও শহরের পথঘাট জনশুন্য হয়ে পড়ছে। প্রয়োজন ছাড়া কোন মানুষ ঘরের বাইরে থাকতে চাইছে না। অবশ্য চায়ের দোকানগুলোতে ঠাসা ভীর থাকছে। বেড়ে গেছে চা পানকারীর সংখ্যাও।
স্বাস্থ্য দপ্তরের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডা. মোতাহারুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, শীতজনিত রোগ বৃদ্ধি পেলেও তা মোকাবেলা করার জন্য সকল প্রস্তুতি রয়েছে। এ জন্য থাকছে বিশেষ নজরদারি।