চেঁচুয়া বিলের লাল শাপলায় তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন হাজারো ভ্রমণপিয়াসী

আহসান হাবীব নভেম্বর ১৪, ২০২১, ০৩:৫৮ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

ময়মনসিংহের ত্রিশালের রামপুর ইউনিয়নে অবস্থিত চেচুয়া বিল। প্রকৃতির অপরূপ রূপে সজ্জিত চেচুয়া বিলে শাপলা ফুলের রক্তিম আভার হাতছানি দেখা দিয়েছে। যতদূর চোখ যায় শুধু লাল শাপলার রক্তিম রাজত্ব ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। সাদা ও বেগুনি শাপলারও দেখা মেলে মাঝেমধ্যে। ভাসমান কচু ফুলের সাদা আভায় বহুগুণে বেড়েছে সৌন্দর্য। সম্প্রতি ভ্রমণপিয়াসী মানুষের মেলা বসেছে সেখানে। বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাজার মানুষের ঢল নামে প্রতিদিন।

শাপলার সংস্পর্শে আসতে পর্যটকদের বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়৷ যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় পায়ে হেঁটে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়। কাছ থেকে শাপলা দেখতে কিংবা শাপলা তুলতে চাইলে নেমে যেতে হয় পানিতে। এতসব সংকট থাকলেও মনের খোরাক মেটাতে পর্যটকরা একটুও কার্পণ্য করেন না।

সারা দেশের মানুষ অবশ্য এ বিলকে প্রথমে চিনেছে একটি গুজবকে কেন্দ্র করে। একদিন সকাল হতেই কিছু লোক দেখতে পায় সেখানে থাকা জমাটবাঁধা কচু হঠাৎ সরে গিয়ে অনেকটা জায়গা ফাঁকা হয়েছে। এটাকে অলৌকিক ভেবে কয়েকজন এখানে গোসল করে ও এর পানি খেয়ে রোগ থেকে মুক্ত হয়েছে বলে জানান। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সারা দেশের হাজার হাজার মানুষ বন্ধুর পথ পেরিয়ে কাঁদা মাখা পানিতে গোসল, গড়াগড়ি ও কাদাযুক্ত পানি সংগ্রহ করতে এখানে ভিড় করেন। 

শারীরিক যেকোনো সমস্যার সমাধানে দূর দূরান্ত থেকে সেসময় দলে দলে ছুঁটে এসেছিলেন অসংখ্য মানুষ। হাজারো রোগের একমাত্র মহৌষধে পরিণত হয়েছিল চেচুয়া বিলের মাটি ও কাঁদা যুক্ত পানি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজবটি চরম আকার ধারণ করায় কিছুতেই মানুষের ঢল থামানো যাচ্ছিল না। শেষমেশ স্থানীয় প্রশাসনের কড়াকড়িতে দমানো সম্ভব হয়েছিল।

সৌন্দর্য রক্ষায় এরই মধ্যে স্থানীয়ভাবে এই বিলে ফুল তোলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঘুরতে আসা মানুষকে এলাকাবাসী সহযোগিতা করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে এই বিলে দর্শনার্থীদের নিয়মানুবর্তিতা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে বলে আশাবাদী এলাকাবাসী৷

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি পর্যটক যাচ্ছেন এই প্রতিষ্ঠান থেকে৷ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই বিলটি। এখানে ঘুরতে আসা নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ জানান, প্রকৃতির সাজ কত অপরূপ হতে পারে তা এই বিলে যারা আসেননি, তারা জানতে পারবেন না। চোখ জুড়িয়ে যাওয়া সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি অভিভূত হয়েছি। যাতায়াত ব্যবস্থা নাজুক না হলে আরো বেশি পর্যটক পেত এই বিল। প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দুর্দান্ত একটি পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে চেচুয়া বিল।’

আগামীনিউজ/নাসির