দেখার যেন কেউ নেই

ভয়াভয় যানজটে নিমজ্জিত ঢাকা শহর

আগামী ডেস্ক অক্টোবর ২৫, ২০২১, ০৯:০২ পিএম
সড়কে যানবাহনের চাপ

ঢাকাঃ করোনা সংকট কাটিয়ে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হলেও ঢাকাবাসীর পথের কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে যানজট। প্রতিটি সড়কেই তীব্র যানজটে নাকাল হচ্ছে ঢাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের। সমন্বয়ের অভাবে যানজট নিরসনে পরিকল্পনা ও মহাপরিকল্পনা কাজে লাগছে না। এক সময় বলা হয়েছিল ফ্লাইওভার নির্মাণ হলে যানজট সমস্যা কমবে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিচ্ছবি দেখা যায়নি। দিন যত যাচ্ছে, যানজট নিয়ে হতাশাও বাড়ছে।

নগরবিদ, গবেষক, পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারা দায়িত্বে রয়েছে সমস্যা সমাধানে তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে রাজধানীর যানজট নিরসন হচ্ছে না। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য ডিজিটাল সিগন্যাল বসানো হলেও পুলিশ ম্যানুয়ালি হাতের ঈশারায় সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করছে। ফুটপাথ দখল ও পার্কিং ব্যবস্থাপনায় কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। চালকরা লাইন-লেন না মেনেই গাড়ি চালাচ্ছে, যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। এছাড়া দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ বাণিজ্যের কারণে চালকরাও বেপরোয়া হওয়ায় কোনো পরিকল্পনা যেমন কাজে আসছে না, তেমনি বিশৃঙ্খলাও কমছে না। এই পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে এই শহর অচল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা রাস্তায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা করি। ট্রাফিক আইন মানার ক্ষেত্রে মানুষ বিশৃঙ্খল। পুলিশ সব সময় ট্রাফিক আইন মানানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কেউ আইন মানছে না। রাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে জনগণ সহযোগিতা করছে না। এই শহরের রাস্তার অবস্থা দ্রুত পরিবর্তন হয়। সকালে এক রকম, বিকালে অন্যরকম। যার ফলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সিগন্যাল বাতি জ্বালিয়ে সুষ্ঠুভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তীব্র যানজটে নানা ভোগান্তির কথা জানান অফিস ফেরত যাত্রীরা।

সরেজমিনে শাহবাগ, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, মহাখালী, বনানী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মেট্রোরেলসহ নানা উন্নয়ন কাজে সড়ক বন্ধ থাকা, সড়ক মেরামত, নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল করতে রাস্তা কাটা ইত্যাদি নানা কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে অফিস ফেরতদের। আর এতেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে। শাহবাগ থেকে ফার্মগেট হয়ে বিজয় সরণি, ফার্মগেট থেকে পান্থপথ, মহাখালী-বনানী এলাকায়ও যানজট দেখা যায়।

রাত ০৯ টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সড়কে শত শত যানবাহন আটকে ছিল। ঢাকা সেনানিবাস  থেকে মতিঝিল যেতে গাড়ি যেন চলছেই না, সেখানে এক ঘন্টার রাস্তা পেরোতে সময় লাগছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছাতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। যানজটের কারণে অনেকেই গাড়ি (বাস) থেকে নেমে হেঁটেই নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হয়েছেন। তবে, অনেকেই আবার বাসা দূরে হওয়ার বিপাকে পড়েছেন। বেশি বিপাকে পড়েছেন নারী ও বয়স্করা।

মুমূর্ষু রোগীবাহী এ্যাম্বুলেন্স হুয়া-হুয়া-হুয়া শব্দে সাইরেন বাজাচ্ছে রাস্তা ক্লিয়ার পাবার আশায়। দ্রুত হাসপাতালে কিভাবে রোগীকে পৌঁছানো যায়, যানজটে পড়ে এ ব্যর্থ প্রচেষ্টা চলে এ্যাম্বুলেন্স গুলোর। দীর্ঘক্ষণ বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এ যানজটে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় জরুরী রোগীবাহী এ্যাম্বুলেন্স গুলোকে এবং অন্যান্য যানবাহন গুলোকেও। অনেক সময় দ্রুত হাসপাতালে পৌছাঁতে না পেরে  এ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যুবরন করেন অনেক মুমূর্ষু রোগী।

পরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও যানজট নিরসনে খুবই জরুরি। এ লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ঢাকার রাস্তায় ‘ডিজিটাল সিগন্যাল সিস্টেম’ স্থাপন করা হয়। কিন্তু তা কাজে আসেনি। পুলিশ ম্যানুয়ালি হাতের ঈশারায় সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করছে। ভুটান ও কম্বোডিয়ার কিছু রাস্তা ছাড়া উন্নয়নশীল কোনো দেশেই হাতের ইশারায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করার নজির নেই। কিন্তু ঢাকায় হাতের ইশারায় চলছে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। সড়কে ডিজিটাল বাংলাদেশ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ঢাকার রাস্তার ধারণ ক্ষমতা কতটা আছে, কত সংখ্যক যানবাহন চলতে পারবে অথবা ভারী যানবাহন চালানোর মতো চালক আছে কিনা, এসব না দেখেই চলাচলের অনুমতি দেয়া হচ্ছে- এটা যানজটের অন্যতম কারণ।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) যানজট কমাতে ঢাকার তেজগাঁও, উত্তরা, বনানী ও মহাখালী হয়ে উত্তরার হাউজবিল্ডিং এলাকা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণ করে। বলা হয়েছিল এগুলো চালু হলে যানজট সহনীয় পর্যায়ে আসবে। কিন্তু তারপরও অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি।

এছাড়া নৌবাহিনী সদর দপ্তরের কাছের রাস্তা, বনানী ২৭ নম্বর রোড, বনানী, কাকলী, বনানী ১১ নম্বর রোড, মহাখালী আমতলী মোড়, তেজগাঁও কোহিনুর মোড়, লাভ রোড মোড় এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন ও সুষ্ঠু যানবাহন চলাচলের জন্য ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সহযোগিতায় রাইট টার্নিং (ডানে মোড়) বন্ধ রাখা হয়েছে। তারপরও যানজট কমছে না।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের কারণে মিরপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কের এখন বেহাল দশা। এতে প্রায় অর্ধেক রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সংকীর্ণ রাস্তা ব্যবহার করেই যানবাহন ধীর গতিতে চলার কারণেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সড়কে যানজট লেগে থাকে। একই সঙ্গে প্রায় সারা বছরই সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা তিতাস, ওয়াসা, বিটিআরসি, ডেসা, ডেসকো, সিটি করপোরেশন অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে। রাস্তা সংস্কারে মাসের পর মাস লেগে যায়। এখানে একটি সংস্থার সঙ্গে অন্যটির সমন্বয় ছাড়াই কাজ চলছে। যে যার মতো রাস্তা খুঁড়ে কাজ করে চলে যাচ্ছে। রাস্তা থাকছে বেহাল অবস্থায়। এসব রাস্তার পাশেই আবার যে যার মতো গাড়ি পার্কিং করছে। এই অবস্থায় রাস্তার ৭৫ শতাংশ বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন এবং বিভিন্ন এলাকার রাজনৈতিক দলের নেতারা ঢাকার রাস্তায় পার্কিং ব্যবসা চালাচ্ছে। সিটি করপোরেশন রাস্তার অবস্থা যাচাই না করেই পার্কিংয়ের অনুমোদন দিচ্ছে। প্রধান সড়কের পাশে পার্কিংয়ের কারণে যানজট হচ্ছে। ফুটপথ দখল এবং রাস্তার ওপরের দোকান সরানোর উদ্যোগ বহু চেষ্টা করেও সফল হয়নি। সব এলাকার রাস্তা দখল হয়ে যাওয়ায় অর্ধেক রাস্তায় যানবাহন চলাচলের সুযোগ পায়। যে কোনো আধুনিক শহরে মোট আয়তনের ২০-২৫ শতাংশ রাস্তা থাকে। এই হিসাবে ঢাকায় মাত্র ৮ শতাংশ রাস্তা আছে। প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ রাস্তায় যানবাহন চলায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। উপরন্তু বাসস্ট্যান্ড ও বাস টার্মিনাল ছাড়াও শহরজুড়েই রাস্তায় গণপরিবহনের চালকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো থামিয়ে রাখছে এবং যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে।

যানজটের কারণে সাধারণ মানুষ এমনকি রাষ্ট্রেরও ক্ষতি হয় আর্থিকভাবে। যানজটে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় তৈরি হয় মানসিক অবসাদ, আর অযথা মানুষের জীবনের কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়।

গবেষণা বলছে, যানজটের কারণে শুধু ঢাকায় দিনে ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যানজট পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে খারাপ হচ্ছে, তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও আরও বাড়বে।

যানজট নিয়ে সর্বশেষ গবেষণা বলছে, ঢাকায় যানজটের কারণে পিক আওয়ারে গণপরিবহন গুলোর গতিবেগ ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে, যেখানে হেঁটে চলার গড় গতিও ৫ কিলোমিটার। ফলে প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। ১২ বছর আগেও এই গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার।

২০১১ সালে রাজধানীতে যানজটের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি) জানায়, ক্ষতির পরিমাণ বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা। ২০১২ সালে যানজটের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করে ইউএনডিপি। তাতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ হাজার কোটি টাকার মতো।

২০১৫ সালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড (বিওআই) জানায়, রাজধানীতে যানজটের কারণে বছরে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার, যা মোট জিডিপির ৭ শতাংশের সমান।

সর্বশেষ ২০১৮ সালে ‘ঢাকা মহানগরীর যানজট: আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই)। ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যানজটের কারণে ২০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক ক্ষতি হচ্ছে। এ থেকে বলা যায়, যানজটের কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে গড়ে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। তবে সড়ক খাতে বিনিয়োগ, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও যানজট নিরসনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এই ক্ষতি অন্তত ৬০ শতাংশ বা ২২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা যেত।

কীভাবে রাষ্ট্রের ক্ষতি হচ্ছে, জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক এবং বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘করোনার কারণে পরিস্থিতি এখন বুঝার উপায় নেই। অনেক কিছু বন্ধ ছিল। আর পরিস্থিতি ভালো হওয়ার কোনও কারণ নেই। পরিস্থিতি উন্নতি করার জন্য বাস সিস্টেম উন্নত করা, পথচারী সিস্টেম ইমপ্রুভ করা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের যে ব্যবস্থা ইমপ্রুভ করার কথা ছিল, সেটিও হয়নি। সুতরাং, অবস্থা ভালো হওয়ার কোনও কারণ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দৈনিক যে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, সেখান থেকেই এই আর্থিক ক্ষতির হিসাবটা এসেছে। একজন মানুষ প্রতিঘণ্টায় ন্যূনতম যে আয় করেন, সেই হারের সঙ্গে কর্ম ঘণ্টার হিসাব করে যে অঙ্কটি পাওয়া যায়, সেটি হচ্ছে এই ৩৭ হাজার কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি।’

এআরআই’র গবেষণায় বলা হয়, ২০১৫ সালের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুযায়ী, ঢাকায় দৈনিক প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ ট্রিপ হয়। একজন মানুষ কোনও একটি বাহনে উঠে নির্ধারিত গন্তব্যে নামলে একটি যাত্রা বা ট্রিপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে যানজটে দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।

২০১৬ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ‘নগর পরিস্থিতি-২০১৬: ঢাকা মহানগরে যানজট, শাসন ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়েছিল, যানজটের আর্থিক ক্ষতির পরিমাপে ২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের এয়ারপোর্ট-পোস্তগোলা রুটকে নমুনা হিসেবে নেওয়া হয়।

দেখা গেছে, ব্যস্ত সময়ে (পিক আওয়ার) এ রুটে গাড়ির গতিসীমা থাকে ঘণ্টায় ৯ কিলোমিটার। এই ধীরগতির কারণে প্রতিবার যাতায়াতে একজন যাত্রীর যে সময় নষ্ট হয়, যার আর্থিক পরিমাণ দিনে আনুমানিক ৫৩ টাকা। এ ছাড়া যানজটে নষ্ট হওয়া সময়ের আর্থিক মূল্য ও জ্বালানি খরচ সার্বিকভাবে মাসে ২২৭ কোটি টাকা দাঁড়ায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৪ সালে ঢাকার রাস্তায় প্রতি ঘণ্টায় গাড়ির গতিসীমা গড়ে ছিল ২১ দশমিক ২ কিলোমিটার। ২০০৯ সালে তা ঘণ্টায় ৬ দশমিক ৮ কিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। যানবাহনের পরিমাণ যদি একই হারে বাড়তে থাকে এবং তা নিরসনের কোনও উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে ২০২৫ সালে এই শহরে যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় চার কিলোমিটার, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়ে কম।

গবেষকদের মতে, যানজটের কারণে ৯ ধরনের মানসিক আচরণকে প্রভাবিত করে। যানজটে বসে থাকলে মানসিক চাপ তৈরি হয়। নানান রকম দুশ্চিন্তা ভর করে। এই মানসিক চাপ সব ধরনের রোগের উৎস। চাপের ফলে নাগরিকদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, যার ফলে অনেকে আক্রমণাত্মকও হয়ে ওঠেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘যানজট না থাকলে মানুষ একটি পরিষ্কার পরিবেশের মধ্যে থাকতো, অল্প সময়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারতো। তার সময় বাঁচতো এবং পরিবারকে সময় দিতে পারতো। এখন তো সেটা পারছে না। যার ফলে স্ট্রেস বাড়ছে মানুষের। স্ট্রেস বাড়লে অস্থিরতা বাড়তে পারে, তা থেকে হতাশাও বাড়তে পারে। ফলে জীবনমান কমে যাবে। একজন মানুষের তো বিশ্রামের প্রয়োজন হয় কাজের পর। সেই সময় পাচ্ছে না, পরিবারকে সময় দিতে পারছে না। যে পথ ১৫ মিনিটে যাওয়া যায় সেখানে যদি এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাগে, তাহলে মানুষ কীভাবে কী করবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্ল্যা বলেন, রাজধানীর যানজট সমস্যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী পরিবহন সেক্টরের মানুষ। আমাদের গাড়িগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকে। এতে আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই। মিরপুর থেকে গুলিস্তান যেতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। যানজট সমস্যা নিরসনে আমরা বিভিন্ন সময়ে সরকারের নেয়া উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে আসছি। সড়কে যানজট না থাকলে আমাদের গাড়িগুলো আরো সুন্দরভাবে চলাচল করতে পারবে।

আগামীনিউজ/শরিফ