ঢাকাঃ মাত্র দেড় বছর আগের কথা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর নাগাদ চীনের উহান শহরের একটি পশু-পাখির বাজার থেকে একটি ভাইরাস ছড়িয়ে পরে উহানের মানুষের মধ্যে। চীনে প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি। এরপর হঠাৎ করেই মহামারি আকার ধারন করে এই ভাইরাস। সাথে সাথে বিশ্বের কয়েকটি রাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে সংক্রামিত হয়ে চিন্তায় ফেলে দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে। মাস ঘুড়তেই গোটা বিশ্বকে রিতিমত ছোবল দেয় প্রাণঘাতী এই কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস। মাত্র ৯ মাসের মধ্যে গোটা বিশ্বে মারা যায় ১২ লাখ মানুষ। তবে, উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো গোটা বিশ্ব যখন মহামারিতে দিশেহারা। ঠিক তখন চীনে উঠে গেছে লকডাউন। খোদ উহান শহর করোনামুক্ত প্রায়।
চলতি বছরে আসি। বছরের শুরুতেই ফের মহামারি করোনাভাইরাস হানা দেয় গোটা বিশ্বে। এ পর্যন্ত মারা গেছে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষ। করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৭৮৫ জনের প্রাণ নিয়েছে করোনা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ভারত। এশিয়ার মধ্যে করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত এই দেশটিতে মারা গেছেন ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩৫১ জন। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। মারা গেছেন ৪ লাখ ২৮ হাজার ২৫৬ জন।
এবারও মোটা দাগে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের কোন আক্রান্ত বা হতাহতের ঘটনা পাওয়া যাচ্ছেনা। এর কারণ কি হতে পারে?
এর দুটি কারণ হতে পারেঃ
প্রথমত, চীন এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিস্কার করে ফেলেছে। ফলে দেশের সকল অধিবাসী প্রতিষেধকের মাধ্যমে ভাইরাসমুক্ত। যেক্ষেত্রে বলতেই হবে চীন একমাত্র সফল রাষ্ট্র যারা এই ভা্ইরাসকে শতভাগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে।
এবং দ্বিতীয়ত, চীন পরিকল্পিতভাবে এই ভাইরাসকে সৃষ্টি করেছে এবং পরিকল্পনামাফিক এর ভ্যাকসিনের মাধ্যমে নিজ দেশের জনগনকে ভাইরাসমুক্ত করেছে।
প্রথম পয়েন্টের কোন প্রমান নেই এমনকি কেউ (খোদ চীনও) দাবী পর্যন্ত করেনি। বাকি থাকলো দ্বিতীয় পয়েন্ট।
ভাইরাস সংক্রামনের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে কোভিড-১৯ চীনের একটি গোপন ল্যাবে তৈরি করা হয়েছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তবে অভিযোগের তীর শুধু এক তরফা চলেনি।
চীন এবং ইরানের ভেতর থেকে সন্দেহের তীর ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের দিকে।
চীনের ভেতর সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষজন হরদমসে লিখছে যে চীনকে শায়েস্তা করতে যুক্তরাষ্ট্র জীবাণু অস্ত্র হিসাবে চীনে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে গেছে।
শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নয়, একজন চীনা কূটনীতিক তার টুইটার অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে সরাসরি ইঙ্গিত করেছেন, উহানে গত বছর অক্টোবর মাসে একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসা মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি দল এই ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রও ঝাও লিজিয়িান টুইটারে মার্চের ১১ তারিখে মার্কিন একটি কংগ্রেস কমিটির সামনে সেদেশের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) প্রধান রবার্ট রেডফিল্ডের একটি শুনানির ভিডিও ক্লিপ পোষ্ট করেছেন। ঐ ফুটেজে মি রেডফিল্ড যুক্তরাষ্ট্রে কিছু ইনফ্লুয়েঞ্জা-জনিত মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে বলছেন, পরীক্ষায় দেখা গেছে কোভিড-নাইন্টিনের কারণেই ঐ মৃত্যু। যদিও মি রেডফিল্ড বলেননি কখন ঐসব মৃত্যু হয়েছে।
তবে এবার বাতাস ভিন্ন দিকে।
এবার চীনের এক ভাইরাস বিশেষজ্ঞ সয়ং নিজেই অভিযোগ করলেন, করোনাভাইরাসকে ইচ্ছাকৃতভাবেই পরিবেশে ছড়িয়েছিল বেইজিং। ঐ ভাইরাস বিশেষজ্ঞ লে মেং-ইয়ানের অভিযোগ, বাদুর, প্যাঙ্গোলিন বা পরিবেশ থেকে অন্য কোনওভাবে ছড়িয়ে পড়েনি সার্স-কোভ ২ ভাইরাস। তা ছড়িয়ে পড়েছিল চীনের সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-এর গবেষণাগার থেকেই। আর জীবাণুযুদ্ধের মহড়া হিসেবে তা ইচ্ছাকৃতভাবেই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল পরিবেশে।
এ ব্যাপারে প্রমাণিত তথ্যাদি আমেরিকার বিদেশ দফতরের হাতে রয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল মহামারী শুরুর পরপরই। তাতে বলা হয়েছিল, চীনা সেনাবাহিনীর বিজ্ঞানীরা জীবাণুযুদ্ধের মহড়া হিসেবে করোনাভাইরাসকে ব্যবহার করার পরীক্ষা-নিরীক্ষা গবেষণাগারে শুরু করেন ২০১৫ থেকে। বেইজিং ওই অভিযোগ অস্বীকার করতে দেরি করেনি। এমনকি চীন পরিদর্শন শেষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ দলও ঘোষণা করেছিল যে, সার্স-কোভ ২ ভাইরাস উহানের বাজার থেকেই বাতাসে ছড়িয়েছিল এবং এটি কোনও গবেষণাগার থেকে বেরিয়ে আসেনি। এমনকি আর তা ইচ্ছাকৃতভাবেও ছড়ানো হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সেই বিবৃতিতে চীনের আপাত স্বস্তি মিলেছিল।
এ নিয়ে বিবিসি, রয়টার্স, আল জাজিরা, সিএনএনসহ বিশ্বের সকল বড় বড় গণমাধ্যমে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনা করা হয়।
কিন্তু বর্তমান কি বলে?
চীন এখন করোনামুক্ত। চীনের তৈরি সিনোফার্ম ইতোমধ্যেই সাড়া জাগিয়েছে গোটা বিশ্বে। মিলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমতিও। বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও এসেছে সিনোফার্মের একটি চালান। যদিও এটি উপহার মাত্র কিন্তু পরবর্তিতে এটি এলসির মাধ্যমে ক্রয় করতে হবে চীনের কাছ থেকে। তাহলে কি চীন আসলেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল?
প্রতিপক্ষকে ঘায়েল (দুর্বল) করার পাশাপাশি নিজেদেরকে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে এবং গোটা বিশ্বকে নিজেদের প্রতি নির্ভরশীল করতেই কি তবে চীনের এই জীবাণু অস্ত্র?
মূলকথা হলো যে চীনে করোনার উৎপত্তি সেই চীনে কোন মৃত্যু বা আক্রান্তের খবর কোন মিডিয়াতে নেই।