করোনার সম্মুখসারির যোদ্ধা পুলিশের মানবিক ভূমিকা

প্রভাত আহমেদ এপ্রিল ২২, ২০২১, ১২:৪০ পিএম
ছবিঃ সংগ্রহীত

ঢাকাঃ আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা রকম ধারণা, ভ্রান্ত ধারণা, মতবাদ প্রচলিত আছে। অবশ্য শুধু বাংলাদেশ কেন পুরো বিশ্বেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে মানুষের ধারণা সুখকর নয়। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ কর্তৃক একজন কৃষাঙ্গ নাগরিক হত্যার পর শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, একই সঙ্গে পুরো বিশ্বকে চরম ভাবে নাড়া দিয়েছিল। তেমনি করোনাকালে আমাদের দেশের পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে বিশ্বের প্রচার মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রশংসা করা হয়েছে। বিশেষ করে করোনাকালে আমাদের পুলিশের মানবিক এই ভূমিকায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে পুলিশ বাহিনী বীর সদস্যদের স্যালুট জানাই। পাশাপাশি পুলিশের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে আগামী দিনেও মানুষের সুখে-দুখে পাশে থাকবেন এই প্রত্যাশা দেশের আপামর মানুষের।

করোনার এই বৈশ্বিক মহামারিতে পুলিশ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি করোনায় বিপদগ্রস্ত, গরিব-দুখী মানুষের পাশে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ত্রাণ, রোজায় ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছে দেশব্যাপী। একইভাবে করোনায় আক্রান্তদের হাসপাতালে নেয়া, চিকিৎসা, ওষুধ, পথ্যের ব্যবস্থা করা, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের লাশ দাফন, আক্রান্তদের হাসপাতালে নিয়ে আসার মানবিক দায়িত্ব পালন করেছে পুলিশ। এই দায়িত্ব পালন করতে  করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে ৯২ জন পুলিশ সদস্য।

অবশ্য এই চিত্রের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুলিশের ভিন্ন ভূমিকাও চোখে পড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্তৃক কৃষাঙ্গ এক ব্যক্তিকে পা দিয়ে পিষে হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রসহ সমগ্র বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। মানুষ বাসাবাড়ি, কর্মস্থল ছেড়ে রাজপথে অবস্থান নিয়ে দায়ি পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হয়। তবে আমাদের পুলিশ বাহিনী নিয়ে অবশ্য এ রকম আন্দোলন অতীতে কখনো সংঘটিত হয়নি। কিন্তু পুলিশ বাহিনীর কর্মকাণ্ড কখনো কখনো সমাজের একটি অংশকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে, করে অনুপ্রাণিত। কারণ কখনো গরিবের বা কোনো ভুক্তভোগীর তাৎক্ষণিক প্রতিকারের জন্য, সমস্যা সমাধানের জন্য, জীবন, সম্পদ রক্ষায় পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয়। এসব ক্ষেত্রে এখনো পুলিশই নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের একমাত্র ভরসার ও আশ্রয়ের জায়গা। পুলিশের অতীত কর্মকাণ্ড দিয়ে তাই প্রমাণ দিয়েছে। অবশ্য এখানে একটি কথা বলা জরুরি, যে এবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে পুলিশের স্লোগান ছিল ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতা’। পুলিশের এই স্লোগানের যথার্থতার প্রমাণ মেলে এই করোনাকালে তাদের দায়িত্বের বাইরে গিয়ে যে মানবিক ভূমিকা রেখে চলেছে।

বিগত সময়ে জঙ্গিবাদের বিস্তার রোধে পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। প্রাণঘাতী করোনার এই বৈশ্বিক দুর্যোগে, টানা লকডাউনে গরিব, সহায়সম্বল হীন, অসহায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে খাদ্য সহায়তা, রোজায় ইফতার, ঈদ সামগ্রী সহায়তা দিতে গঠন করা হয়েছে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ দক্ষ, চৌকস, কর্মঠ নিষ্ঠাবান পুলিশ সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয় এই টিম। এই টিমের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক তদারকি, মনিটর করা ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা দায়িত্বরত আছেন। তবে এসব কর্মকাণ্ড সামগ্রিকভাবে সার্বক্ষণিক ও নিয়মিত তদারকি করছেন স্বয়ং মহাপুলিশ পরিদর্শক বেনজীর আহমেদ। পাশাপাশি মেট্রোপলিটন এলাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, বিভাগীয় পর্যায়ে ডিআইজি, জেলা পর্যায়ে জেলা পুলিশ সুপার, থানা পর্যায়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথা ওসি দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে করোনারোগীদের হাসপাতালে নেয়া, চিকিৎসার, সেবার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি গরিব, অসহায় রোগীদের পরিবহনের জন্য সার্বক্ষণিক চালু রেখেছে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, আার্থিক সহায়তা দিয়ে, সেবা দিয়ে, চিকিৎসা ও ওষুধ পথ্য ক্রয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে আসছে।

ডাক্তার, নার্স, সাংবাদিকের মতো পুলিশও করোনাযুদ্ধে সম্মুখসারির যোদ্ধার ভূমিকায় অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে নিরন্তর দায়িত্ব পালন করে আসছে। এই মহান দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৯২ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। আবার অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন।

আগামীনিউজ/প্রভাত