নেত্রকোণাঃ শত বছরের স্মৃতি আজ বিলুপ্তির পথে। হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি মাটির ঘর। নেত্রকোণার মাটির ঘরের কদর কমিয়ে দিয়েছে সাম্প্রতিক বন্যা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অথচ নেত্রকোণা অঞ্চলের প্রতিটি গ্রামেই দেখা যেত নজরকাড়া মাটির ঘর, একতলা কিংবা দোতলা বাড়ি।
শুধু মাটির ঘরই নয়, ছিল ধান চাল রাখার জন্যে মাটির তৈরি গোলা ঘর ও কুটির। তবে দিনদিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিবেশ পরিস্থিতির কারনে মাটির ঘর আজ হারাতে বসেছে।
এই মাটির ঘর ঠান্ডার থাকায় এক সময় এটাকে গরীবের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরও বলা হত। এই ঘর গরমের সময় আরামদায়ক। তাই অনেক গ্রামেই বিত্তশালীদেরও দুতলা মাটির ঘর ছিল। তবে এখনো নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা-দুর্গাপুর অঞ্চলের অনেক গ্রামে এ মাটির ঘর রয়েছে। নেত্রকোণা জেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় এসব মাটির ঘরের বেশির ভাগই হয় ভেঙে গেছে না হয় ফেটে গেছে। এ নিয়ে চিন্তিত অনেকেই। কিন্তু দরিদ্র পরিবার গুলোর ভরসা এই মাটির ঘরেই। মাটির সহজলভ্যতা এর প্রয়োজনীয় উপকরণ আর শ্রমিক খরচ কম হওয়ায় অনেকে দিন মানুষ মাটির ঘর বানাতে বেশি আগ্রহী ছিল। মাটির ঘর যাদের আছে তারা প্রতি বছরেই মাটির প্রলেপ দেয়। অনেকে আবার চুনকাম সহ বিভিন্ন রঙ করেন।
দুর্গাপুর উপজেলার সাংবাদিক নির্মেলেন্দু সরকার বাবুল আগামী নিউজকে বলেন, সাধারণত এটেল বা আঠালো মাটি দিয়ে পানির সঙ্গে মিশিয়ে কাদায় পরিনত করা হয়। এরপর বিশ থেকে ত্রিশ ইঞ্চি চওড়া দেয়াল তৈরি করতেও মাঝখানে সময় লেগে যায়। কারণ একবারে দেয়াল তোলা যায় না। কিন্তু দেয়াল তোলার পর শুকাতে হয়। দশ থেকে পনের ফুট উচু দেয়া কাঠ বা বাশের সিলিং তৈরি করে তার উপর খর বা টিনের ছাউনি দেয়া হয়। তার দ্বিতল মাটির বাড়ি রয়েছে এ গ্রামের অনেকের বাড়িতে।
বারহাট্টা উপজেলার সোহেল খান দূর্জয় আগামী নিউজকে বলেন, অনেকেই বাঁশ মাটি টিন সংগ্রহ করে নিজেরাই মাটির ঘর তৈরি করেন। এ ক্ষেত্রে তবে খরচ কম পড়ে। শ্রমিক না নিলে কমপক্ষে বার থেকে পনের হাজার টাকা খরচ কম হয়। তাই এ অঞ্চলের গ্রামগুলোতে এখনও মাটির বাড়িঘর রয়েছে ঐতিহ্যের স্বাক্ষী হিসেবে। নতুন প্রজন্মকে এই মাটির ঘর বিষয়ে জানাতে এখনও তারা এই মাটির ঘর ব্যবহার করছে।
এই মাটির ঘরের আরও কিছু গুনাবলী রয়েছে, যা ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে এর স্থায়ীত্ব শত বছরও হতে পারে বলে জানান এলাকাবাসী।
আগামীনিউজ/এএস