নীলফামারী: টানা লকডাউনে উত্তরাঞ্চলে ৪০ হাজার পরিবহন শ্রমিক পরিবারের জীবন পুরোপুরো লক হয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে অদ্যবধি তাদের ভাগ্যে জোটেনি কোন ত্রাণ।
গত ৩০ মার্চ সরকারের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো অর্ধেক যাত্রী নিয়ে দুরপাল্লার ও আন্তঃজেলার বাস- মিনিবাস চলাচল করবে। সেই সিদ্ধান্ত পরিবহন শ্রমিক ও মালিক পক্ষ মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু ৪ দিন চলার পর গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন শুরু হয়। রাস্তায় চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বাস-মিনিবাস। বর্তমানে চলছে আরো কঠোর লকডাউন। এমন অবস্থায় উত্তরাঞ্চলের ৪০ হাজার পরিবহন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের পরিবারের প্রায় ২ লাখ সদস্য বর্তমানে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।
পরিবহন শ্রমিকদের অধিকাংশই দিন আনে দিন খায়। বাসের চাকা ঘুরলে পেটে অন্ন যায়, আর বন্ধ থাকলে অভূক্ত থাকতে হয়। পরিবহন জগতের সাথে যেসব শ্রমিকরা জড়িত তারা অন্য কারো কাছে সাহায্য চাইবে এমন পরিস্থিতিও নেই। অনেকে দোকানে ধার- দেনা করে দিনে ৩ বেলার মধ্যে ২ বেলা পরিবারে খাবারের জোগান দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছে। হাহাকারের দিনে দোকানিরাও তাদের বাকিতে খাদ্য পণ্য দিতে নারাজ। কবে নাগাদ লকডাউন খুলবে কিংবা আরো বৃদ্ধি পাবে কিনা তা নিয়েও চলছে হিসাব-নিকাশ।
প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে লোক সংখ্যা বাড়ছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার কোন আভাস মিলছে না। এদিকে আবার শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। অন্যান্য মাসের চেয়েও রমজান মাসের খরচের তালিকা বেড়ে যায়। আর্থিক সংকটে পড়ে পরিবহন শ্রমিকরা কেউ কেউ রোজাও রাখতে পারছেন না। অনেকে ধর্মীয় কারণে রোজা রাখলে তাদের মুখে জুটছে না ইফতার। অনেকে লবন পানি দিয়ে ইফতারের কাজ সারছে। সেহরিতে লবন পানি মরিচ দিয়ে ভাত খাচ্ছে
অনেকেই।
কথা হয় নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রবীণ শ্রমিক নেতা মমতাজ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, লকডাউনের ফলে পরিবহন শ্রমিকরা খেয়ে না নাখেয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হবে তারই হিসাব-নিকাস চলছে। তার মতে, সরকার কলকারখানা, দোকানপাট, ব্যাকং বীমা সবকিছুই নিয়ম করে খোলা রেখেছে। অথচ বাস-মিনিবাস শ্রমিকদের বেচে থাকার জন্য বিকল্প কিছুই সামনে রাখে নাই। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরা মানুষের গুণতির বাইরের কোন জাত।
কথা হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহনের শ্রমিক ফেডারেশনের রংপুর বিভাগীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলে রাব্বীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সড়কে ট্রাক, ট্যাংকলড়ি, মাইক্রোবাস, কার, পিকআপ, অটোবাইক, পাগলুসহ সকল ধরনের যান চলছে। অথচ সরকার বাস-মিনিবাস পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে উত্তরাঞ্চলে ৪০ হাজার পরিবহন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে তাদের পরিবারের কমপক্ষে ২ লাখ সদস্যের জীবন লক হয়ে গেছে। সরকারের ঘোষণা মতে আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন চলবে। এই কয়েকদিনের লকডাউনেই পরিবহন শ্রমিকদের ত্রাহিত্রাহি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এটি যদি আরও বাড়ানো হয় তাহলে পরিবহন শ্রমিকদের থালাবাটি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়তে হবে।
তার মতে, এই কয়েকদিনের লকডাউনে অনেক পরিবহন শ্রমিক বাড়ির পশুসম্পদ বিক্রি করে কোনরকমে জীবন ধারনের চেষ্টা করছে। হাতের সম্বল বলতে পরিবহন শ্রমিকদের কিছুই নেই। তারা গতরে খাটে উদরে খায়। অথচ সরকার বিকল্প ব্যবস্থা চালু না করেই পুরোপুরি লকডাউনের আওতায় এনেছে বাস-মিনিবাসকে। তাই পরিবহন শ্রমিকদের পরিবারের ২ লাখ সদস্যকে প্রাণে বাঁচিয়ে রাখতে তিনি সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী ও নগদ অর্থ সহায়তার আহ্বান জানান।
আগামীনিউজ/নাহিদ