পৃথিবীতে কোন কিছুই ফ্রি নেই, ফ্রি মানেই প্রতারণা

প্রভাত আহমেদ মার্চ ৩, ২০২১, ০৬:৫৩ পিএম
ছবি: আগামী নিউজ

ঢাকাঃ চারদিক তাকালেই ফ্রি আর ফ্রি। দুটো কিনলে একটা ফ্রি, একটা কিনলে একটা ফ্রি, এমন নানান অফার হারহামেশায়ই দেখা যায় ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরে বা বিভিন্ন কোম্পানীগুলোও এমন তাকলাগানো অফার দেয় ভোক্তাদের আকর্ষণ করার জন্য।

কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন এই অফার? 

যেখানে একজন মা তার সন্তানের মুখে দুধ দেয় না স্বার্থ ছাড়া। মা-বাবার আদর ভালোবাসারও বিনিময় মূল্য আছে; মা-বাবা সন্তানকে আদর যত্ন মহাব্বত করার কারণ সন্তান বড় হয়ে তাদের পাশে দাড়াবে, বৃদ্ধ বয়সে তাদের সেবা যত্ন করবে এই আশায়, এর বাহিরে কিছুই নয়।

স্বার্থ না থাকলে মানুষ ভিক্ষুককেও পয়সা দিতো না। ভিক্ষুককে পয়সা দিলে সাওয়াব পাবে এই ভরসায় মানুষ ভিক্ষা দেয় না হয় কস্মিনকালেও ভিক্ষুককে কেউ সাহায্য দিতো না। এটাই পৃথিবীর নেচার।

ঈশ্বরের আরাধনা মানুষ কেন করে? কারণ ঈশ্বরের আরাধনা করলে ঈশ্বর মানুষকে স্বর্গ দেবে এই ভরসায় মানুষ ঈশ্বরের আরাধনা করে,না হয় কোনদিনও মানুষ ঈশ্বরকে স্বরণ করতো না। ঈশ্বরের সাথে মানুষের স্বার্থ এই জাগাটাই।

সার্টিফিকেট পেতে কার না ভাল লাগে, বলুন? কিন্তু আসলেই এই সার্টিফিকেট কতটা ভ্যালুয়েবল? চিন্তার বিষয়!
সস্তার তিন অবস্থা একটা কথা আছে- জানেন তো? কাজেই যেখানেই দেখবেন ফ্রি ওখানেই ঝামেলা আছে বৈ কি! অনেকটা বাই ওয়ান গেট ওয়ানের মতো। একটা কিনলে আরেকটা তখনই ফ্রি দেয় যখন সুপারশপদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হবু হবু ভাব! যাক গে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে একটু। 

ধরুন, সলোলার্ন সাইটের কথাই বলি। তাঁরা ফ্রিতে বিভিন্ন শর্ট কোর্স করার সুযোগ দিয়েছে। কোর্স শেষে আবার একটা সার্টিফিকেটও প্রদান করে থাকে। কিন্তু আপনি এই শর্ট কোর্স গুগল থেকে কপি পেস্ট করে দিয়েই শেষ করলেন। তারপর দিনশেষে এরকম একটা সার্টিফিকেট পেলেন। তাহলে কী দাঁড়ালো? কিছু শিখেছেন কি? যদি উত্তর না হয়ে থাকে। তাহলে এবার আপনিই বলুন, সার্টিফিকেট কতটা ভ্যালুয়েবল? হ্যাঁ, এই সার্টিফিকেটের কোন মূল্য নাই। এটা স্রেফ একটা প্রশংসাপত্র। আর কিছু না।

‘একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি’ এই ট্রেন্ড এখন বাংলাদেশের ব্যবসায়িক অঙ্গণে বেশ পরিচিত। ব্যবসার প্রসার ঘটাতে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন এই পদ্ধতি।  ক্রেতা আকর্ষণে কত ‘অফার’ই না দিচ্ছে খাদ্যজাত বা বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো! কেউ দিচ্ছে ‘নগদ মূল্যছাড়’,কেউবা নিয়ে এসেছে ‘প্যাকেজ অফার’। আবার অনেকে দিচ্ছে ‘একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি’। ক্রেতারা আকৃষ্টও হচ্ছেন এগুলোতে। তবে এসব পণ্যের মধ্যে অধিকাংশ পণ্যই মেয়াদ উত্তীর্ণ যা পরে নতুন করে প্যাকেটজাতকরণে মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের সাথে অফারে বিক্রি করা হয়।

পণ্যদ্রব্য উৎপাদন করে উৎপাদক; আর ভোগ করে ভোক্তা। উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য ও সেবা ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর সব কার্যক্রমকে বাজারজাতকরণ বলা হয়ে থাকে। অনেকেই বিক্রির কাজটিকে বাজারজাতকরণ বলে মনে করে থাকেন। তবে এর পেছনে কারণ আছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকায় পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন যেভাবে প্রচার করছে, তাতে এমনটা মনে করাই স্বাভাবিক। মূলত বিক্রি হচ্ছে বাজারজাতকরণের একটি অংশমাত্র। বাজারজাতকারী যদি পণ্য উন্নয়ন, মূল্য নির্ধারণ, বিতরণের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে, তবে বিক্রির কাজটি সহজ হয়ে যায়।

বাজারজাতকরণের পুরো অংশের সঙ্গেই নৈতিকতার জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। বাজারজাতকরণের প্রতিটি কাজ আইন অনুযায়ী করতে হয়। বাস্তবে দেখা যায়, উৎপাদনকারী হতে ভোক্তার কাছে পণ্যদ্রব্য পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি কাজ আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে বা সব ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন নাও থাকতে পারে। এসব ক্ষেত্রে যতদূর সম্ভব আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এমনভাবে বাজারজাতকরণ কার্যাবলি সম্পাদন করতে হবে, যাতে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ যেমন ভোক্তা, বিক্রয় প্রতিনিধি, প্রতিযোগী কেউই যেন প্রতারিত না হয়। আর কাজটিকে বলা হয় বাজারজাতকরণ নৈতিকতা।

প্রশ্ন হচ্ছে, বাজারজাতকরণে নৈতিকতা আমরা কতটুকু মেনে চলি? কয়েক দিন আগে টেলিভিশনে একটি অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠানে দেখানো হয়, মিনারেল ওয়াটারের নামে কীভাবে বুড়িগঙ্গার পানি আর টিউবওয়েলের পানি বিভিন্ন বোতলে ভর্তি করে, বিভিন্ন নামে মিনারেল ওয়াটার নামে বিক্রি হচ্ছে। চকবাজারে গড়ে উঠেছে নকল প্রসাধনীর কারখানা। এসব বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আবার নামিদামি ব্র্যান্ডের পণ্যের মধ্যেও ভেজাল দেখা যাচ্ছে। পণ্যের মোড়কের ওপর যেসব উপাদানের নাম ও পরিমাণ দেওয়া থাকে, সেখানেও তারতম্য দেখা যাচ্ছে। এসব কিনে প্রতারিত হচ্ছে ভোক্তা। বাজারে মেয়াদ উত্তীর্ণ বা রিজেক্ট মালামাল বিক্রি হয় অফারে, তবে এর থেকে সকল ক্রেতাদের সাবধান থাকতে হবে।

আগামীনিউজ/প্রভাত