ফার্মেসিতে ভেজাল যৌন উত্তেজক ওষুধ: শুধু যৌন ক্ষমতাই নয় হারাচ্ছে কর্মক্ষমতাও

প্রভাত আহমেদ ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১, ০৯:২৪ পিএম
ছবি: আগামী নিউজ

ঢাকাঃ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন ওষুধের ফার্মেসিতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিম্নমানের ভেজাল ও অনুমোদনহীন যৌন উত্তেজক ওষুধ। যে কারণে হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। চিকিৎসকের কোনো প্রকার প্রেসক্রিপশন ছাড়াই চলছে ফার্মেসিতে এ সব নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রয়। ফার্মেসি ছাড়াও ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে যৌন উত্তেজক এ ওষুধ। তাছাড়া এসব নিম্নমানের অনুমোদনহীন ওষুধ সেবনের ফলে হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ছে। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে দৃষ্টিশক্তি ও স্মৃতিশক্তি বিনষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া এতে লিভার ও নার্ভ ড্যামেজ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর আজিমপুর এলাকায় ইসলামিয়া ফার্মেসি নামে একটি দোকানে প্রকাশ্যেই সাজানো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের যৌন উত্তেজক ওষুধ।

পরিচয় গোপন রেখে ওষুধ কিনতে চাইলে তিনি প্রায় পাঁচ থেকে ছয় প্রকার ওষুধ দেখান। যার মধ্যে রয়েছে মডার্ণ হারবালের যৌন উত্তেজক ওষুধ কুস্তুরী গোল্ড, ফাইটন সিরাপ, জিংসিন, হর্স পাওয়ার, পিল-আর ও হারবাল জাতীয় মুকাব্বি খাছ, হাইসোক্যাল, আইবেরিসহ অনেক ওষুধ।

ইসলামিয়া ফার্মেসির মালিক ‘আগামী নিউজ’কে বলেন, এই ওষুধের অধিকাংশই ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা দোকানে এসে বিক্রয় করেন। মাঝে-মধ্যে ওষুধের চাহিদা অনুযায়ী মিটফোর্ড এর বিভিন্ন পাইকারী দোকান থেকে ক্রয় করেন।

শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশে বহু ফার্মেসিতে অবাধে বিক্রয় হচ্ছে এসব ওষুধ। তাছাড়া তার ফার্মেসিতে এই যৌন উত্তেজনাকর ওষুধ প্রথম থেকে বিক্রয় করেন।

হাজারীবাগ এলাকার কয়েকটি ফার্মেসির মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাজারীবাগ এলাকায় বেশিরভাগ সব শ্রমিকরা থাকে। তাদের চাহিদা ও অনুরোধে তারা এই ধরনের যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রয় করছেন। এসব ওষুধ বাকিতে বিক্রয় বেশি করেন এবং ত্রিশ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত দাম নেন ওষুধের।

বাজারে রয়েছে দেশি-বিদেশিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক যৌন উত্তেজক ওষুধ। কুস্তুরী গোল্ড, নিশাত, ক্যাপসুল পাওয়ার-৩০, কিং পাওয়ার অয়েল, ফওলাদ, মুনইশ পাওয়ার সেক্স অয়েল, এনজয় পাওয়ার অয়েল, স্ট্রং পেইনস ম্যাসাজ অয়েল, পেইন আউট স্প্রে, ডি বাজিকরণ, ম্যাক্স জেড, অ্যাপেক্স, ভিগোসা, লুমিসেক, ডেফরল, ভিটামিন বি-৫০ ফোর্ট, ক্যালসিয়াম-ডি, ভারতীয় যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেনেগ্রা ও টার্গেটসহ নানা ধরনের ওষুধ বিক্রয় হচ্ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, যৌন উদ্দীপক ওষুধের মধ্যে ফার্মেসীতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় মডার্ণ হারবালের কস্তুরী গোল্ড।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক আগামী নিউজকে বলেন, মূলত কস্তুরী গোল্ড তৈরি হয় চীন থেকে আনা ভেজাল কেমিক্যাল দিয়ে।


তিনি বলেন, ক্ষতিকারক কেমিক্যাল সিএফসি, ভিটামিন –ই, ডেক্সামেতাসিন, সডিবাইকার্বোসহ বিভিন্ন রকমের ক্ষতিকারক কেমিক্যাল ব্যাবহার করা হয় মডার্ণ হারবালের কস্তুরী গোল্ডে, যা মানুষের কিডনি, লিভার, হার্ট চিরতরে অকেজো হয়ে যেতে পারে এবং যৌনাকাঙ্খাও নিঃশেষ হতে পারে।

তিনি আরও বলেন বাজারে এর পরেই রয়েছে হামদর্দ এর নিশাত এর রাজত্ব, নিশাতও একই ভাবে মানুষের যৌন ক্ষমতাকে বিকলাঙ্গ করে দেয়।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রফেসর ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার আজ (১১ ফেব্রুয়ারি) বৃহস্পতিবার ’আগামী নিউজ’কে বলেন, দেশি হোক বা বিদেশী হোক যৌন উত্তেজক ওষুধ সেবনে শরীরের স্বাভাবিক ক্ষমতা নষ্ট হয়। বিভ্রান্ত হয়ে উত্তেজক ওষুধ খায় অনেকে। এ সব ওষুধ হৃদরোগ, হার্ট ব্লক ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। ব্রেন স্ট্রোক হয়। দীর্ঘদিন ব্যবহারে দৃষ্টিশক্তি ও স্মৃতিশক্তি কমে যায়। তাছাড়া যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর।
প্রফেসর শহীদুল্লাহ বলেন,  এতে লিভার ও নার্ভ ড্যামেজ হওয়ার আশঙ্কা আছে, এই ওষুধ কয়েকবার ব্যবহারের পরে এটির প্রতি আসক্তি এসে যায় যা অনেকটা মাদকাসক্তের মতো, এতে শুধু যৌয ক্ষমতা হারাবে তা নয় কর্মক্ষমতাও হারাচ্ছে কেউ কেউ।
প্রফেসর শহীদুল্লাহ আরও বলেন, কেউ যখন এই সক্রান্ত অসুখে ভোগে তখন লজ্জা না পেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, কোন প্রকার হীনমন্যতায় ভোগা চলবে না।

বাংলাদেশের অন্যতম সুনামধন্য আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক, অধ্যক্ষ ডা. আবদুর রব খান ‘আগামী নিউজ’কে বলেন, বাংলাদেশে ইউনানী আয়ুর্বেদ ও হোমিও এটা হারবাল প্রোডাক্ট, এখানে কোন আনইথিকাল কেমিক্যাল ব্যবহার করা যাবে না,এখন দেখা গেছে কিছু কোম্পানী আছে যারা সেক্সুয়াল ওষুধে ক্ষতিকারক কেমিক্যাল সিএফসি, ভিটামিন –ই, ডেক্সামেতাসিন, সডিবাইকার্বোসহ বিভিন্ন রকমের ক্ষতিকারক কেমিক্যাল ব্যাবহার করে থাকে।

ডা. আবদুর রব বলেন, রাস্তায় ওষুধ বিক্রয় করা সরকারের নিষেধ, কিন্তু রাস্তায় বের হলে দেখা যায় ফুটপাতে বসে হকাররা সেক্সুয়াল ও যৌনউদ্দীপক ভেজাল ওষুধ বিক্রি করে, ওষুধ বিক্রির জন্য তো সুনির্দিষ্ট নীতিমালও রয়েছে, কিন্তু কোন নীতিমালই মানা হচ্ছে না, প্রশাসনও কোন প্রকার ব্যাবস্থা নিচ্ছে না, তাই যে যার মতো করে যেমন ইচ্ছে তেমন করেই ডাক্তার সেজে ওষুধ বিক্রি করছে, এটা অত্যান্ত ভয়াবহ দিক।

ডা. আবদুর রব আরও বলেন, অধিক সময় ধরে যৌন মিলন করতে হাতুড়ে ডাক্তাদের লোভনীয় বিজ্ঞাপনের ফাদে পড়ে অনেকে যৌনশক্তি বাড়ানোর ওষুধ খেয়ে থাকেন। যা তাদের যৌন স্বাস্থ্য বিরাট ক্ষতি সাধন করে যৌন ক্ষমতা নিঃশেষ করে দেয়। এসকল ওষুধ সেবনে মানুষের যৌনশক্তি চিরতরে অকেজো হয়ে পড়ে, প্রথমে ১ ডোজ এর পরে ২ডোজ এই ভাবে প্রতিনিয়ত ডোজ নিতে নিতে একসময় দেখা যায় আর কোন ডোজেই তার কাজ হয় না, এসকল ওষুধ যৌনজীবনে ভয়াবহ অশান্তির সৃষ্টি করবে বলেও তিনি জানান।

নিয়ন্ত্রণহীন ভায়াগ্রা ও মৃত্যুর অসংখা

নিয়ন্ত্রণহীন আলোচিত যৌন উত্তেজক ওষুধ ‘ভায়াগ্রা। রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের শহর-বন্দর হয়ে গ্রামগঞ্জেও এখন এই ওষুধ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। নির্ধারিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এটি বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও বেশি মুনাফার লোভে নিয়মের তোয়াক্কা না করেই এক শ্রেণির ব্যবসায়ী দেদারছে বিক্রি করছেন। ফলে ওষুধটির অপব্যবহার বেড়েই চলেছে।

এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ভায়াগ্রা সেবন করে নিজের অজান্তেই মৃত্যুঝুঁকিসহ মারাত্মক ফল ডেকে আনছেন অনেকে। অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই ওষুধ বেশি বিক্রি করার জন্য উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান, চিকিত্সক এবং ব্যবসায়ীদের প্রভাবিত করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি করতে ওষুধের দোকানদারদের দেওয়া হচ্ছে কমিশন। ডাক্তারদেরও এ ওষুধ প্রেসক্রিপশন করতে নানা উপঢৌকন দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অনুমোদিত কোম্পানি ছাড়াও অবৈধভাবে প্রতিবেশি বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ভায়াগ্রা অবাধে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বিনা প্রেসক্রিপশনেই এই ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও কোনোভাবেই মানছে না ফার্মেসিগুলো। মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, অনুমোদিত ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনোভাবেই বিক্রির সুযোগ নেই। তারপরও দেশের বাস্তবতায় এখনো প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি হচ্ছে। মাঠকর্মীদের মাধ্যমে মনিটরিং চলছে। খুব শিগগিরই এটা দৃশ্যমান হবে।

জানা গেছে, যত্রতত্র ভায়াগ্রা পাওয়া যাচ্ছে বলে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারছে। যৌন সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়াও যিনি যৌন সমস্যাগ্রস্ত নন, তিনিও ভায়াগ্রায় মারাত্মভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। এই আসক্তের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে উঠতি তরুণ ও বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এছাড়া ৩৫ থেকে ৫০ বছরের নারী-পুরুষের ভায়াগ্রায় আসক্তদের সংখ্যাও অনেক। অথচ চিকিত্সা বিজ্ঞানে বাজারজাতকৃত ভায়াগ্রা একটি বাণিজ্যিক নাম।

এটির জেনেরিক নাম সিলডেনাফিল সাইট্রেট। যুক্তরাজ্যের ফাইজার কোম্পানি গবেষণামূলক উত্পাদিত ভায়াগ্রা ওষুধ প্রথমে ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজারজাত শুরু করে। সেবনকারীদের ব্লাডপ্রেশার তো নিয়ন্ত্রণ হয়নি, উলটো তাদের যৌন উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। পরে ফাইজার কোম্পানি যৌন উত্তেজক ওষুধ হিসেবে ভায়াগ্রা সারাবিশ্বে বাজারজাত শুরু করে। এটা এখন বিশ্বে সমাদৃত ওষুধ।

সমাজ গবেষকদের মতে, ভায়াগ্রার অপব্যবহার সমাজের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এটা কেবল সেবনকারীকেই নয়, গোটা সমাজকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ধর্ষণ ও পারিবারিক কলহ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভায়াগ্রার অপব্যবহারে যৌন ক্ষমতা স্থায়ীভাবে নষ্ট হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি থাকে। এছাড়া হূদরোগ, লিভার-কিডনি-ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত এবং চোখেও জটিলতা সৃষ্টি করে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম আগামী নিউজকে বলেন, কারো হার্টে বা ব্রেনে সামান্যতম সমস্যা থাকলে, ভায়াগ্রা সেবনে তার মৃত্যু অবধারিত। তাই নির্ধারিত (চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ) চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী এবং শরীরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই ভায়াগ্রা সেবন করতে হবে। বাইপাস সার্জারি, ব্লাডপ্রেশার ও ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা ভায়াগ্রা খেতে পারবেন না।

চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এন হুদা আগামী নিউজকে বলেন, ভায়াগ্রা কেউ বেশিদিন সেবন করলে আসক্ত হয়ে যায়। সে আর এটা ছাড়তে পারবে না। তিনি বলেন, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ভায়াগ্রা সেবন মারাত্মক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি। এটা যত্রতত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে। বিদেশে কুকুরের ওষুধ ক্রয় করতে হলেও প্রেসক্রিপশন প্রয়োজন হয়। অথচ আমাদের দেশে এ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া অবাধে বিক্রি হচ্ছে।

দারাজে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ও সিরাপ

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম (মার্কেটপ্লেস) দারাজ ডটকমে অন্য সব পণ্যের পাশাপাশি খোলামেলা বিক্রি হচ্ছে ‘যৌন উত্তেজক’ ও কথিত ‘শক্তিবর্ধক’ ওষুধও। দারাজের সাইট এমনভাবে তৈরি করা যে সংশ্লিষ্ট পণ্যের বিজ্ঞাপনের নিচে ক্রেতারা নিজের প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে উত্তরও জেনে নিতে পারেন। তবে সাধারণ পণ্যের পাশাপাশি এ ধরনের বিশেষ ওষুধের ক্ষেত্রেও একইভাবে তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ রেখেছে ওয়েবসাইটটি। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের প্রশ্নের পাশাপাশি এমন কিছু প্রশ্ন করে উত্তর জানার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা রীতিমতো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এসব বিষয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ লেখালেখি হচ্ছে। আর এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) বিষয়টি অনৈতিক হয়েছে বলে মনে করছে।

দারাজের সাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, বাজারে থাকা অসংখ্য পণ্যকে বিশেষ বিশেষ ক্যাটাগরিতে ভাগ করে এই সাইটে কেনাবেচা হয়। এরই একটি বিশেষ ক্যাটাগরিতে রয়েছে যৌনশক্তি বর্ধক বিভিন্ন ওষুধ। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নামের ও ব্র্যান্ডের এসব পণ্যের দামেও রয়েছে ভিন্নতা। ওয়েবসাইটটির পেজে এসব পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হচ্ছেন ক্রেতারা। আগ্রহীরা প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনটা জানাচ্ছেন। তবে এসব প্রশ্নের মধ্যে কোনটি আসল আর কোনটি নকল তেমন জিজ্ঞাসাই বেশি। এসব বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যৌন উত্তেজক ও যৌনবর্ধক এসব ওষুধ কাজে লাগে কিনা তার কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বা চিকিৎসকের পরামর্শ কথিত ওষুধগুলোর প্যাকেটের গায়ে লেখা নেই। যা আছে তা কিছু বিক্রেতার মনগড়া ব্যাখ্যা। এসব ওষুধের বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি হচ্ছে বলেও দাবি করা হচ্ছে। এর মধ্যেই প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়ে কেউ কেউ  ‘মানুষ অজ্ঞান’ করার ওষুধ আছে কিনা তাও জানতে চাইছে।

এছাড়া এ ধরনের ওষুধ দিয়ে ক্রেতারা ‘নারী বশীকরণ’ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন।  এগুলোর জবাবও দেয়া হচ্ছে খোলামেলাভাবে। বাতলে দেওয়া হচ্ছে কৌশল। এমন কাজে এসব ওষুধ বা পণ্য যে কার্যকর তাও দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু, সেসব প্রশ্ন কতটা যৌক্তিক বা কী ধরনের প্রশ্ন করা যেতে পারে সে বিষয়ে দারাজ কর্তৃপক্ষের কোনও নির্দেশনা সাইটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বেনাপোল বন্দরে যৌন উত্তেজক ভায়াগ্রার সমগোত্রীয় ঔষধ তৈরির কাঁচামাল জব্দ করেছে শুল্ক কর্তৃপক্ষ। মিথ্যে ঘোষণা দিয়ে ভারত থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করা হচ্ছিল।

ঔষধ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বলেছেন, বাংলাদেশে যৌন উত্তেজক ঔষধের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যৌন উত্তেজক ঔষধের কাঁচামাল চোরাপথে আসা এটাই প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে এ ধরণের ঔষধের ব্যাপক চাহিদা আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মুনীরউদ্দিন আহমদ গত বছর একটি দৈনিক পত্রিকায় বলেছেন, যৌন উত্তেজক ঔষধের কাঁচামাল এখন নানাপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

"এটার ডিমান্ড প্রচুর বাংলাদেশে। যেসব ঔষধের চাহিদা বেশি থাকে, সেটা নকল এবং ভেজাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এবং বিদেশ থেকে চোরাপথে কাঁচামাল এনে এখানে উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হয়। "

দেশে প্রতিবছর প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি হয়

এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি হয়, যা মোট ওষুধ বিক্রির প্রায় ২০ শতাংশ। আর এসব ওষুধ জীবন বাঁচানোর পরিবর্তে রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। কখনো কখনো প্রাণঘাতীরও কারণ হয়।

তাই নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।‘বাংলাদেশে বর্তমানে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফার্মেসির সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার হলেও পাড়ায়-মহল্লায়, নামে-বেনামে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে আরও অসংখ্য ফার্মেসি। এদের অনেকেই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, ঘুমের বড়ি, পেইন কিলার ও নিম্নমানের যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বিক্রি করছে। অন্যদিকে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে ভালো মানের ওষুধের চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি কমিশন দেওয়া হয়। ফলে বেশি লাভের আশায় ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রিতেই আগ্রহ বাড়ছে কিছু কিছু ওষুধ বিপণনকারীর।


এবিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মাহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমানকে কয়েকবার টেলিফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

‘উৎপাদনপরবর্তীতে ফার্মেসিতে আনার পর সংরক্ষণ পদ্ধতি ত্রুটির কারণেও ওষুধের গুণগত মান ঠিক থাকছে না। দেশে প্রতিবছর ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধের বার্ষিক বিক্রি প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উপরে, যা মোট বিক্রির ২০ শতাংশ।’ভেজাল ওষুধ প্রস্তুত ও বিপণনকারীর মৃত্যুদণ্ড হওয়া যৌক্তিক, আইন করে বাস্তবায়ন প্রয়োজন। মানহীন, ভেজাল ও নকল ওষুধ বিক্রির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের প্রতি কোনো অনুকম্পা দেখানোর কারণ নেই। তাদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি যৌক্তিক। এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত লাভের জন্য অনৈতিকভাবে ওষুধ নকল করে বিক্রির মাধ্যমে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। রোগ নিরাময়ের জন্য তৈরি নকল ও ভেজাল ওষুধ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শুধু ওষুধ নয়, আমাদের দেশে ভেজাল নাই-এমন কোনো পণ্য পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ। ভেজাল নিয়ে দেশে একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি চলছে। তার থেকে পরিত্রাণ জরুরি।’

আগামীনিউজ/প্রভাত