করোনাকালেও ‍‍`স্বাস্থ্য বিধি‍‍`মেনে সচল রাজশাহী বিসিক

ম. শাফিউল আল ইমরান এপ্রিল ৩০, ২০২০, ০৪:৫৬ পিএম

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর মধ্যেও জীবনরক্ষাকারী ঔষধ, হাত জীবানুমুক্ত করার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের নিত্য-প্রয়োজনীয় খাদ্য-পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন(বিসিক) এর রাজশাহী শিল্পনগরীর শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। শিল্পনগরীর কারখানাগুলোতে করোনা প্রতিরোধমূলক সকল স্বাস্থ্য বিধি মেনে করে উৎপাদন করছে কিনা সেজন্য  ‘শিল্পনগরী পরিদর্শন টিম’ দিয়ে  নিয়মিত মনিটরিং করা হয়।

রাজশাহী বিসিক শিল্পনগরীর সূত্রে জানা যায়, এখানে মোট ২০৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপি মহামারি করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এই শিল্পনগরীতে ৭১টি শিল্প কারখানা চালু রয়েছে।  যেখানে প্রায় দুই হাজারের বেশী লোক কাজ করে। কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে কাজ চলছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে চালু কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে চালু শিল্প ইউনিটগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘টিম ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড’। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকরণের ১০,০০০ প্যাকেট ঔষধসহ ১০০ মিলি আকারের ১২-১৫ হাজার বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করছে যা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপাদিত পণ্যের বাজার মূল্য প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা।

এছাড়াও স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে শিল্পনগরীর আরও ৩টি প্রতিষ্ঠান ‘অশোকা ল্যাবরেটরি’, ‘হকস্ ফার্মা’ এবং ‘শাহী ল্যাবরেটরি’ সুনামের সাথে ইউনানী / আয়ুর্বেদীক ঔষধ উৎপাদন করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠান তিনটিতে বিভিন্ন ধরণের সাধারণ জ্বর, সর্দি, হাঁপানিসহ জটিল ও কঠিন রোগের ঔষধ উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। উল্লেখ্য যে, এসব ঔষধ তৈরির কাঁচামাল হিসাবে বিভিন্ন গাছ গাছালির ছাল-বাকল এবং বিভিন্ন মসলা যেমন লবঙ্গ, এলাচ, যষ্ঠিমধু ও দারুচিনি ইত্যাদি জাতীয় দেশীয় ভেষজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
 
শিল্পনগরীটিতে বর্তমানে উৎপাদনরত অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে রয়েছে ৪৬টি খাদ্য ও খাদ্য সহায়ক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত চাল, ডাল, আটা, ময়দা, সুজি, সেমাই, চানাচুর, বিস্কুট, কেক, পাউরুটি, সরিষার তেল, আইসক্রিম, বিশুদ্ধ খাবার পানি, গুঁড়া মরিচ, গুঁড়া হলুদ ইত্যাদি উৎপাদন করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান ‘নোভা এশিয়া এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ’ তাদের উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের শতভাগ আমেরিকা ও কানাডায় রপ্তানি করছে।

এছাড়াও অন্যান্য সেক্টরে ২৫টি প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে । উক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি স্বাস্থ্য বিধি মেনে তাদের কার্যক্রম চালু রাখায় দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখাসহ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ঔষধের চাহিদা পূরণ করতে বিসিক শিল্পনগরী, রাজশাহী নিরলসভাবে কাজ করছে।

বিসিকের শিল্পনগরী কর্মকর্তা মো: ওয়ায়েস কুরুনী জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিসিক শিল্পনগরী রাজশাহীতে মোট ৭১টি কারখানা করোনা প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু আছে যার মধ্যে ১২টি রাইস মিলে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫৫০ মে.টন চাল, ৩টি ডাল মিলে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩৫০ মে.টন ডাল, ১টি অটোমেটিক ফ্লাওয়ার মিলে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫০ মে.টন আটা উৎপাদনসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য সামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে যা রাজশাহী ও এর আশেপাশের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। 

রাজশাহী বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক জাফর বায়েজীদ জানান, করোনা প্রার্দুভাবের প্রেক্ষাপটে রাজশাহী শিল্পনগরীতে উৎপাদনরত শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে শ্রমিকেরা পণ্য উৎপাদন করছেন। নগরীর কারখানাগুলোতে উৎপাদিত পণ্যসমূহের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এর উৎপাদন, পরিবহন ও সরবরাহ চেইন অব্যাহত রাখার নিমিত্ত বিসিক চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি কারো বলেন,  নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবহার্য সামগ্রীর উৎপাদন, পরিবহন ও সরবরাহ চেইন অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা দিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি কারখানার সামনে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং শ্রমিকেরা মাস্ক ব্যবহার করছে। নগরীর ‘পরিদর্শন টিম’ বিষয়সমূহ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে ৯৬.৪৬ একর জমি নিয়ে যাত্রা শুরু করা শিল্প মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন সংস্থা বিসিকের এই শিল্পনগরী ৩২৫টি শিল্প প্লটের ২০৪টি শিল্প ইউনিটে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এই শিল্পনগরীতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানির কারণে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। 

আগামীনিউজ/ ইমরান/ তাওসিফ