গার্মেন্টস খোলার হটকারী সিদ্ধান্তে বদলে যেতে পারে করোনা পরিস্থিতি

সাইফুল হক মিঠু এপ্রিল ৩০, ২০২০, ০৯:১৯ এএম
ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: দেশে যখন করোনা রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়ছে তখন অর্থনীতি বাঁচানোর দোহাই দিয়ে গত ২৭ এপ্রিল থেকে খুলছে প্রায় সব পোশাক কারখানা। এতে হিতে বিপরীত হয়ে দেশের করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবার আশংকা বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, এ ধরণের হটকারী সিদ্ধান্তের চরম মূল্য দিতে হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (২৯ এপ্রিল)  ব্রিফিং থেকে জানা যায় গত মঙ্গলাবার সারাদিনে রেকর্ড ৬৪১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ সব মিলিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ১০৩ জন, আর মারা গেছেন ১৬৩ জন। ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার সর্বাধিক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে এই তিন জেলায় সবচেয়ে গার্মেন্টস, ফ্যাক্টরির অবস্থান। এই অবস্থায় এই সময়ে গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত কে হটকারী বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন যখন খারাপের দিকে তখন কারখানাগুলো পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত যথার্থ নয়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর করোনাভাইরাসের হটস্পট (সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত এলাকা), যেখানে বেশিরভাগ কারখানা অবস্থিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যদি এসব এলাকার শ্রমিকদের কারখানায় কাজ করার অনুমতি দেই, তবে ভাইরাসটি ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়বে। করোনা আক্রান্ত কর্মীর মাধ্যমে অন্য সব সহকর্মীদের মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রমিত হতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা এখনো লকডাউন যথাযথভাবে প্রয়োগ এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মানুষজনকে বাধ্য করতে পারিনি। মানুষ এখনো এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, আমরা যদি কারখানাগুলো আবার চালু করি, আমাদের চরম মূল্য দিতে হবে।

এরই মধ্যে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সদস্যভুক্ত ১৫৮টি ফ্যাক্টরি খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

তিনি বলেন, কারখানার আশপাশে থাকা শ্রমিকদের নিয়ে এখন সীমিতভাবে চালু হচ্ছে। দুই মে থেকে পর্যায়ক্রমে সব কারখানা চালু করা হবে। বিকেএমইএর ৮৩৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫৮ টি ফ্যাক্টরি স্বল্প পরিসরে তাদের কার্যরক্রম শুরু করেছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে ফ্যাক্টরি খোলা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ফ্যাক্টরিতে ঢোকার সময় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, ব্লিচিং মিশ্রিত পানিতে জুতা ভিজিয়ে প্রবেশ করা, থার্মাল স্ক্যান দিয়ে টেমপারেচার চেক করা, মাস্ক ব্যবহার করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কর্ম পরিচালনা করাসহ যতটুকু আমাদের পক্ষে সম্ভব আমরা গ্রহন করেছি।

এর আগে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারি ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে দে‌শের সব পোশাক কারখানা ২৫শে এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা ক‌রে পোশাক মালিকদের বড় দু‌টি সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)।

শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাভার, হেমায়েতপুর, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে ১৮০০ গামের্ন্টসের মধ্যে ১৩০টি  গার্মেন্টস খোলা ছিল। তবে শ্রমিক উপস্থিতি ছিল কম। আবার অধিকাংশ গামের্ন্টস এখনো বন্ধ রয়েছে। এ সমস্ত কারখানার কিছু শ্রমিকরা এসে গেটে তালা ও বন্ধের নোটিশ দেখে চলে গেছে।

বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, এখন পর্যন্ত তিন বিলিয়ন ডলারের ওপর অর্ডার বাতিল হয়েছে। আমাদের ওপর কারখানা খুলে দেয়ার চাপ আছে। অনেকের অর্ডার আছে। এলাকাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দিনক্ষণ বেঁধে, সীমিত আকারে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে কারখানা খুলে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

আর গার্মেন্টস মালিকরা বলছেন, স্বাস্থ্য বিধি মেনে গার্মেন্টস খুলছেন তারা। এরই মধ্যে শিফটিং করে শ্রমিকদের কাজ ভাগ করে দেয়া হয়েছে। জ্বর, ঠান্ডার উপসর্গ থাকলে কাউকে কাজে নেয়া হচ্ছে না। এই মুহূর্তে দূর দুরন্ত থেকে শ্রমিক ভাই-বোনদের কর্মস্থলে না ফেরার জন্য অনুরোধ করছেন তারা।

আগামীনিউজ/মিঠু/মিজান