করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না ৩১৪ প্রকল্প

সাইফুল হক মিঠু এপ্রিল ২৬, ২০২০, ০৯:১৭ এএম

ঢাকা: মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সাধারণ ছুটি, কাঁচামালের সংকট, বিদেশী টেকনেশিয়ানদের অনুউপস্থিতি প্রভৃতি কারণে নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছেনা ৩১৪ প্রকল্প। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব জানা গেছে। কোভিড-১৯ বিস্তার রোধে সৃষ্ট সাধারণ ছুটির কারণে ২৬ মার্চ থেকেই মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন থেমে আছে।

এদিকে, করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সারাদেশে আগামী ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর আগে প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ছুটি বাড়িয়ে তা ১১ এপ্রিল করা হয়। ছুটি তৃতীয় দফা বাড়িয়ে করা হয় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর চতুর্থ দফায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়। এবার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পঞ্চম দফায় ছুটি বাড়ল।

আর এই কারণে মার্চে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) ৩১৪টি প্রকল্প দ্রুত শেষ করার জন্য সিদ্ধান্ত হলেও কোনো কার্যক্রম এগোয়নি। 

এদিকে, মে মাসের পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে সেটা বোঝা না যাওয়ায় প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও চলতি অর্থবছর অর্থাৎ জুনের মধ্যে এসব প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সমাপ্তর জন্য ৩৫৫টি প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল মানসুর মো. ফয়েজউল্লাহ বলেন, সাধারণ ছুটির কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছেনা। মাঠ পর্যায়ে থেমে আছে প্রকল্পের কাজ।

তিনি আরো বলেন, আরো কতদিন ছুটি থাকবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।।করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে অধিকাংশ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়তে পারে। সেইসঙ্গে ব্যয় বাড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। ৩৫৫ টি প্রকল্পের মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৩৪১টি আর কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৪টি। তবে অর্থবছরের মাঝ পথে এসে সেই লক্ষ্য থেকে সরে আসছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। 

এদিকে, নির্ধারিত সময়ে ৪১টি প্রকল্প শেষ করা সম্ভব হবে না বলে পরিকল্পনা কমিশনকে জানায়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ফলে আরএএডিপিতে সমাপ্তর জন্য নির্ধারণ করা হয় ৩১৪টি প্রকল্প। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে ৩১২টি এবং কারিগরি সহায়তা প্রকল্প দুটি।

চলতি অর্থবছর সেক্টরভিত্তিক নির্ধারণ সম্ভাব্য সমাপ্য প্রকল্পের সংখ্যা হচ্ছে- কৃষিতে ২৫টি প্রকল্প, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান সেক্টরের প্রকল্প ২৭টি, পানি সম্পদ সেক্টরের ৩৩টি, শিল্প সেক্টরের ৯টি, বিদ্যুতের ১২টি। তৈল-গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ সেক্টরের একটি, পরিবহন সেক্টরের ৬১টি ও যোগাযোগের ৫ টি, আর ভৌত-পরিকল্পনা-পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন সেক্টরে ৬৪টি প্রকল্প রয়েছে। 

এছাড়া শিক্ষা ও ধর্মে ১৮টি, ক্রীড়া ও সংস্কৃতির ১১টি, স্বাস্থ্য-পুষ্টি-জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণের ১৫টি, গণসংযোগের ৩ টি, সমাজ কল্যাণ-মহিলা বিষয়ক ও যুব উন্নয়ন সেক্টরের ১১টি, জনপ্রশাসন সেক্টরের ৩ টি, বিজ্ঞান-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০টি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থানের ৩টি প্রকল্প রয়েছে বলে জানা গেছে।

যদিও আরএডিপি অনুমোদনের সময় বলা হয়, এসব প্রকল্পের অনুকূলে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে। কজেই এসব প্রকল্পে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল যথাসময়ে দিতে হবে এবং প্রকল্পগুলো অবশ্যই চলতি বছরের জুনের মধ্যে শেষ করতে হবে। তাছাড়া প্রকল্পগুলোর পুনরায় মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হবে না। কিন্তু গত ১৯ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় আরএডিপি অনুমোদনের পর থেকেই করোনার জন্য সাধারণ ছুটি শুরু হয়। 

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, আগামী জুনের মধ্যে সমাপ্তর জন্য নির্ধারিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হচ্ছে- তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভূলতায় ৪ লেনবিশিষ্ট ফ্লাইওভার নির্মাণ, ইজতেমা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ, ঢাকা-এয়াপোর্ট মহাসড়ককে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে পথচারী আন্ডারপাস নির্মাণ প্রকল্প। এছাড়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টার সেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত এবং পাচ্চর ভাঙ্গা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ৪ লেনে উন্নয়ন প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ, কনভারশন অব ১৫০ মেগাওয়াট সিলেট জিটি টু ২২৫ মেগাওয়াট সিসিপিপি প্রকল্প, শাহজীবাজার ১০০ মেগাওয়াট গ্যাস টারবাইন পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ, কনস্ট্রাকশন অব বিবিয়ানা-৩, চারশত মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ এবং ভেরামারা-বহরমপুর দ্বিতীয় ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন (বাংলাদেশ অংশ) নির্মাণ প্রকল্প।

আগামীনিউজ/মিঠু/মিজান