ঢাকা: করোনা নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। দেশের মানুষের জন্য এর চেয়ে স্বস্তির আর কিছু হতে পারে না। এ ব্যাপারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে অনেক মানুষ এবং প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছেন। বিশেষ করে প্রতি জেলায় করোনা চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল নির্দিষ্ট করা এবং সেখানে সেবাদানের অবকাঠামো তৈরি করা। শ্বাসকষ্ট শুরু হলে রোগীদের দ্রুত সেবা প্রদান করা।
আর এসব সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনায়। তার দিক নির্দেশনায় করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার আগেই বাংলাদেশ নিয়েছে বিশ্বের সর্বাধিক প্রস্তুতি।
করোনাভাইরাস যাতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে এ জন্য তিনি সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে দফায় দফায় বিশেষ বৈঠক করে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। শুধু সরকারি নয়, দলীয়ভাবেও দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় নির্দেশনায়।
সুখবর আরো আছে বেশ কিছু। অনেক মানুষ এবং প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছেন এ ব্যাপারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। এ দেশ যাঁদের বিপুল বিত্ত অর্জনের সুযোগ করে দিয়েছে, তাদের কেউ কেউ দান করছেন প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে। সুরক্ষা সামগ্রী দান করছে বেক্সিমকো, আকিজ গ্রুপ তড়িঘড়ি একটা হাসপাতাল তৈরি করছে, যেখানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সেবা দেবে।
বসুন্ধরা গ্রুপও তাদের কনভেনশন সেন্টারে ৫ হাজার শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ব্যবস্থা করে রেখেছে। এছাড়াও বসুন্ধরা গ্রুপ বিপুল পরিমাণ ত্রাণ তহবিলের সহায়তাও করেছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। এমনকি আগামী ১০এপ্রিল করোনা সনাক্তে কিট দিচ্ছে ডা. জাফরুল্লাহর গণস্বাস্থ্য সংস্থা যা গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি ঘোষণা করেছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ইতোমধ্যেই সকল মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলেছেন। এরই ধারাবাহীকতায় বিশেষ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কমিটি করেছে। যাতে করে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তাবয়নে সমস্যা না হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি ও দলীয় কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সর্বাধিক পরিস্থিতি পযর্বেক্ষণ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্রুত কাজ করায় করোনা বাংলাদেশে এখনো মহামারি আকারে ছড়াতে পারেনি। পৃথিবীর অন্যান্ন দেশের তুলনায় দেশে করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার কম।
সন্দেহজনক রোগী হলেই স্থানীয়ভাবে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। যেসব জায়গায় পরীক্ষাগার নেই সেসব জায়গা থেকে নমুনা এনে সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
বেশ কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব এড়াতে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, তারা যেমন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে নগদ টাকা এবং বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তায় করছে।
অপরদিকে পিছিয়ে নেই সরকারি প্রতিষ্ঠান, পুলিশ এবং স্বশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও। এরাও নগদ টাকাসহ নিজেদের জান ও মালামাল নিয়ে মাঠে কাজ করছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাই।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ আগামী নিউজ ডটকমকে জানান, করোনা টেষ্টর ফলাফল আরো দ্রুত পেতে আমরা কাজ করছি। কিছু সিস্টেম ও তৈরি হয়েছে। উন্নত বিশ্বের পরামশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আমাদের সঙ্গে কাজ করছে।
তিনি মনে করেন, করোনার ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ প্রস্তুত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারা দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা সন্দেহভাজনদের চিকিৎসায় প্রায় ১১ হাজার স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক দল তৈরি করা হচ্ছে । পাশাপাশি প্রস্তুত হচ্ছে ২৮টি করোনা টেস্টিং ল্যাব। ইতোমধ্যে স্বাধীনতা চিকিৎসক ফোরামের পক্ষ থেকেও ৫০০ ডাক্তার প্রস্তুত রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, আগামী ২০-২৪ এপ্রিলের মধ্যে ২৮টি প্রতিষ্ঠানে করোনা টেস্ট ল্যাব স্থাপিত হবে। ইতোমধ্যে ঢাকায় ৭টি ও ঢাকার বাইরে ৬টি প্রতিষ্ঠানে করোনাভাইরাসের টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, দেশেই এখন পিপিই(ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপকরণ) তৈরি হচ্ছে। সকল হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পিপিই সরবরাহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪ লাখ পিপিই দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও পিপিই দেয়ায় যথেষ্ট মজুদ রয়েছে।
এবিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, সরকারিভাবে নয়, রাজনৈতিকভাবেও আমরা সংগঠিতভাবে মাঠে কাজ করছি। সকল নেতা-কর্মীদের নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান করে করোনা পরিস্থিতি পযর্বেক্ষণ করার নির্দেশ রয়েছে। এজন্য স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকটি কমিটি কাজ করছে।
বিশেষ করে করোনা সন্দেহ হলে ডাক্তারের কাছে পাঠানো, বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টাইন থাকা নিশ্চিত করা, ছুটির এ সময়ে ছাত্রদের বাসায় রাখা, দরিদ্র মানুষের তালিকা করে খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্নভাবে মানুষকে সচেতনতামূলক কাজ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকার মহাখালীস্থ আইইডিসিআর, জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, আইসিডিডিআরবি, ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস (আইডেশি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে ইনস্টিটিউট অব আর্মড ফোর্সেস প্যাথলজি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন।
এছাড়াও সিলেটের ওসমানী, কক্সবাজার, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ এবংচট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে বিনামূল্যে করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছে। খুলনা ও বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে ল্যাব তৈরির কাজ চলছে।
করোনার সংক্রমণ ও বিস্তার বিষয়ে প্রতিদিন আইইডিসিআর এর পক্ষ থেকে সাংবাদিক এবং দেশের মানুষকে সবর্শেষ তথ্য জানানো হচ্ছে। সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হটলাইনও চালু করেছে ।
করোনাভাইরাস বিষয়ে যোগাযোগ করতে আইইডিসিআরের ফেসবুক পেজ-Iedcr,COVID19 Control Room, এ ছাড়া ই–মেইল ঠিকানা- iedcrcovid19@gmail.com
আইইডিসিআর আরো একটি হটলাইন নম্বর চালু করেছে: ০১৯৪৪৩৩৩২২২।
আগামী নিউজ/তরিকুল/ডলি/নাঈম/তাওসিফ