ঢাকা: নোভেল করোনাভাইরাস বাংলাদেশের জন্য মহামারির রূপ নেবে না। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণ, ধর্মীয় কারণ এবং পরিবেশগত কারণে দেশে করোনা প্রকোপ মহামারিতে রূপ নেয়ার সম্ভাবনা কম বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত প্রকাশ করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে ধূমপায়ীর জন্য বিশেষ সতর্কবার্তাও দিয়েছেন তারা।
তাদের মধ্যে বাংলাদেশের ভেষজ গবেষক বিশিষ্ট চিকিৎসক ড.নিম হাকিম বলেছেন, “করোনায় ফুসফুস আক্রান্ত হয়। যেহেতু ধূমপানে ফুসফুস দুর্বল হয়। তাই ধূমপায়ীদের জন্য করোনায় ক্ষতির ঝুঁকি বেশি। আপাততঃ করোনা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে ধূমপায়ীদের উচিত ধূমপান থেকে বিরত থাকা।”
এছাড়ও ধর্মীয় কারণেও করোনার প্রার্দুভাব বেশি থাকবেনা এমনটাও জানিয়েছেন ড.নিম হাকিম। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের মানুষ খুব ধর্মভিরু। তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়েন। নামাযের জন্য তারা দিনে পাঁচবারই ওজু করেন। নিয়মমাফিক ওজুতেই হাত-পা-মূখমন্ডলে থাকা জীবাণু ঝড়ে যা্চ্ছে। সুতারং এই নামাযের জন্য যে পরিচ্ছন্নতা আসে তাতেই শুধু করোনা কেন যে কোন রোগ বালাই থেকে এসব মানুষ নিরাপদ রয়েছেন।”
অপরদিকে করোনা আক্রান্তদের নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন গবেষনায়ও ধূমপায়ীদের প্রতি বিশেষভাবে নজর দিয়েছেন। প্রত্যেকটি গবেষনায় বলা হয়েছে যেহেতু চিনা মেডিক্যাল জার্নালের ডিজিটাল সংস্করণে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র থেকে জানা যে, ধূমপায়ীরা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে তাঁদের নিউমোনিয়ার ঝুঁকি একজন অধূমপায়ীর থেকে ১৪ শতাংশ বেশি। আসলে মানুষের শ্বাসনালী ও ফুসফুসে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম চুলের মতো অনেক সিলিয়া থাকে। এদের কাজ— শ্বাসনালী ও ফুসফুসের ধূলিকণা, মিউকাস বা শ্লেষ্মা-সহ সব বাধাকে সরিয়ে দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করা। কিন্তু ধূমপায়ীদের এই সিলিয়াগুলি কার্যত অকেজো হয়ে যায়। আর সে কারণেই ফুসফুসের যুদ্ধ করার ক্ষমতা কমে যায়। অনেকে সিগারেটের বদলে ই-সিগারেট পান করেন। ভেপিংয়ের ফলেও ফুসফুস ও শ্বাসনালী একই রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো করোনা বাংলাদেশে প্রথম ঘোষণা আসে ৮ মার্চ। এক দিয়ে শুরু এরপর দিনে দুই থেকে তিন, সর্বোচ্চ ছয়। মাঝেমধ্যে মধ্যে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আবার শূন্য। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৩৩১ জন। হটলাইনে করোনা সংক্রান্ত ফোন এসেছে ৮২ হাজারের বেশি। এর বিপরীতে মোট টেষ্ট করা হয়েছে ১ হাজার ৬৮টি, মোট পজেটিভ ৪৮।
অথচ বিশ্ব পরিস্থিতি পুরোই ভিন্ন। জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞান বলছে, এসব ক্ষেত্রে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের সূচক প্রথমে ঊর্ধ্বমুখী, পরে সমতল এরপরে তা নিয়ন্ত্রণ আসতে থাকে। তবে বাংলাদেশে এমন কেন? এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবেই গবেষকরা বার বার বলেছেন ভৌগলিক অবস্থানগত কারন, ধর্মীয় ও পরিবেশগত কারন নিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন ।
তাপমাত্রা ও করোনার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নানা তত্ত্ব। নানারকম গবেষণাও চলছে এই নিয়ে। তাপমাত্রা বাড়লেই প্রভাব পড়ে এই ভাইরাসে। ভাইরাসের গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় করোনা সহজে মরে না। যখন গরমের তীব্রতা বাড়তে থাকে এর আবরণ এক সময়ে গরম সহ্য করতে না পেরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। অনেকটা আবওহাওয়ার উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়।
মানুষের শরীরের বাইরে ভাইরাসের স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে জলবায়ু অবশ্যই একটি ভূমিকা রাখে। সার্স কোভিড-২ (করোনাভাইরাস) বিশ্বের যেসব অঞ্চলে এবার দ্রুত ছড়িয়েছে, তার সবই শীতপ্রধান এলাকা।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাস এবার সেসব অঞ্চলেই বেশি ছড়িয়েছে, যেসব অঞ্চলে গড় তাপমাত্রা ৫ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সারা বিশ্বের ৫০০টি এলাকার নমুনা নিয়ে একটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এটি এখনো অপ্রকাশিত বলে বিবিসির একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে করোনাভাইরাসের বিস্তারে তাপমাত্রা, বাতাসের গতি ও তুলনামূলক আর্দ্রতার সম্পর্ক আছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। ‘উইল ওয়ার্ম ওয়েদার রিয়েলি কিল অব কভিড-১৯’ শিরোনামে বিবিসির প্রতিবেদনটিতে আরও একটি অপ্রকাশিত গবেষণার সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে গবেষকরা অনুমান করেছেন, বিশ্বের উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের দেশগুলো করোনাভাইরাসের কারণে কম আক্রান্ত হবে।
তবে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য সুখবর রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে তাপমাত্রা প্রতিদিন সর্বনিম্ম ৩৫ ডিগ্রি রয়েছে।
আবহাওয়ার পারদ চড়লে কি নিষ্ক্রিয় হবে করোনা ভাইরাস? অনেক বিশেষজ্ঞ এ সম্পর্কে তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। ভারতের মাইক্রো বায়োলজিস্টরা শুনিয়েছেন আশার বাণী। তাপমাত্রা বাড়লে করোনা সংক্রমণ অনেকটাই নাকি কমবে!
বিদেশী গবেষকরাও বলেছেন , SARS-CoV-2 করোনাভাইরাসকে এড়াতে প্রথমেই ধূমপান বন্ধ করতে হবে। বেশি বয়সে শরীর কমজোরী হয়ে পড়ায় কোভিড-১৯ দ্রুত গ্রাস করে মারাত্মক আকার নিতে পারে। ঠিক যেমনটি হয়েছে ইটালিতে। সাধারণ পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি বিশেষ দরকার না পড়লে বাড়ির বাইরে না যাওয়াই ভাল। বিশেষজ্ঞরা আশ্বস্ত করছেন, এ রোগে মৃত্যুর হার তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম। কিন্তু, ইটালিতে আক্রান্তদের অতিরিক্ত মৃত্যুহারে চিন্তিত চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
এই মরণ ভাইরাসের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং এ দেশের সরকার যে নিয়মবিধি চালু করেছে, তা মেনে চলা উচিত। বিশ্ব জুড়ে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ৯ লক্ষ ছাড়িয়েছে, মারা গিয়েছেন ৪৭ হাজারের বেশি মানুষ।
আগামীনিউজ/ডলি/মিজান