ঢাকা: করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে মঙ্গলবার(৩১মার্চ)পর্যন্ত সারা দেশে ২৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে ২৫টি ফেসবুক আইডি ও পেজ বন্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ও সাইবার ইউনিট। এছাড়া এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত আরো শতাধিক ফেসবুক আইডি, পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিটিটিসি।
বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। করোনার বিস্তাররোধে দেশের সব স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েতের ওপর।
বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশের সব বিপণিবিতান, অফিস-আদালতও। এমনকি একাধিক এলাকাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন। এ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তার জন্য দেশের সব জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী।
সরকারের এমন প্রচেষ্টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে কিছু লোক গুজব ছড়াচ্ছে। তারা স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করছে। আর তাই দেশজুড়ে কঠোর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সরকার।
তারই ধারাবাহিকতায় ফেসবুকে করোনাভাইরাস নিয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর ভিডিও প্রচার করার অপরাধে ঈশ্বরদী পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সালাম মোল্লাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (৩০মার্চ) রাতে সালামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
এর আগে শনিবার (২৮ মার্চ) ‘মুসলমানদের জন্য করোনাভাইরাস কোন আতঙ্কের কারণ নয়, বরং কাফিরদের প্রতি চরম আযাব-গজব’ এই শিরোনামের লিফলেট বিতরণের সময় ছয় জনকে হাতেনাতে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগ।
মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) ফেনী শহরের ট্রাংক রোডের দোয়েল চত্বর থেকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে দু'জনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
গুজব ছড়ানোর অভিযোগে শুক্রবার (২০ মার্চ) রাতে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার ভাটপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে বুলবুল নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে র্যাব-১১।
এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ইফতেখার আদনান নামের এক চিকিৎসককে আটক করে পুলিশ। তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৮ থেকে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে একটি অডিও বার্তা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ম্যাসেঞ্জারে ছড়িয়ে দেন। যা ভাইরাল হয়ে যায়।
এ বিষয়ে সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসকে (কোভিড-১৯) কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে অনেকে স্যোশাল মিডিয়ায় নানাভাবে গুজব ছড়াচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা শুরু থেকেই কাজ করছি। এরই মধ্যে ২৫ টি আইডি ও পেজ আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। স্যোশার মিডিয়ায় মনিটরিং কার্যক্রম আমাদের অব্যাহত থাকবে।
শুধু করোনা নয়, যেই কোন বিষয়েই গুজব ছড়িয়ে কেউ পার পাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুজব প্রতিরোধে সোচ্ছার রয়েছে। সাধারণ মানুষকে বুঝে-শুনে নিউজ বা লিংক শেয়ার করার অনুরোধ জানান তিনি।
এদিকে, করোনাভাইরাস সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও গুজব রটালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুশিয়ার দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
গত রোববার (২৯ মার্চ) তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ নিয়মিত ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটর করছে। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এছাড়া, করোনা প্রতিরোধে গুজব না ছড়িয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করতে সোমবার পুলিশ হেডকোয়ার্টারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
করোনাভাইরাস নিয়ে কেউ যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব, বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য ছড়ায় তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তথ্য অধিদপ্তরের এক তথ্য বিবরণীতে একথা জানানো হয়। গত শনিবারের এ বিবরণীতে করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের সময়ে গুজব সম্পর্কে সচেতন থাকা ও অন্যান্যদের সচেতন রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে সারাবিশ্ব এখন লকডাউনে। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে মহামারি এ ভাইরাসে। সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে এখন (৩১ মার্চ) পর্যন্ত ৫১ জন আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে মারা গেছেন পাঁচজন। এরমধ্যে আবার ২৫ জন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৯৭৩ জন। যার মধ্যে মারা গিয়েছে ৩৭ হাজার ৮৪৩ জন।
আগামী নিউজ/আরিফ/ডলি/নাঈম