করোনা পরীক্ষা নিয়ে ধুম্রজাল

সাইফুল হক মিঠু মার্চ ১৮, ২০২০, ০৮:১৮ পিএম

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী ধরা পড়ে। ১০ দিনে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ জন, মারা গেছেন ১ জন।

করোনার সংক্রামণ প্রতিরোধ, পরীক্ষা ও নিয়মিত আপডেট সব কিছু একাই করছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

দেশে করোনা রোগী পাওয়া যাওয়ায় ও করোনা আক্রান্ত বিদেশ থেকে আসা প্রবাসীরা হোম কোয়ারেনন্টাইন না মানায় আতঙ্ক বিরাজ করছে জনমনে। অনেকেই শরীরে  করোনাভাইরাস আছে কি না তা পরীক্ষা করতে আইইডিসিআরের হটলাইনে ফোন করছেন অথবা বিভিন্ন হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি গলব্যথা প্রভৃতি উপসর্গ নিয়ে বুধবার (১৮ মার্চ) আইইডিসিআরে আসেন ২২ বছরের যুবক। তার অভিযোগ হটলাইনে ফোন করে সেবা পাওয়া যায় না। অন্যদিকে আইইডিসিআরেও মিলছে না পর্যাপ্ত সেবা। এখানে আমার টেস্ট করাচ্ছে না আইইডিসিআর।

পর্যাপ্ত টেস্ট কিট না থাকায় ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেন তিনি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, শুধু মাত্র যাদের মধ্যে সিম্পটম দেখছি, তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ করোনা টেস্ট কিট মজুদ আছে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই আইইডিসিআরে।

সংস্থাটির পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা  বলেন, পর্যাপ্ত টেস্ট কিট মজুদ আছে। কী পরিমাণ আছে সেটা বলা মুশকিল। কেননা প্রতিদিনই বেশ কিছু কিট ব্যবহার হচ্ছে। আবার প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে নতুন নতুন কিট।

আইইডিসিআর সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাসের পরীক্ষায় রক্ত, মল বা মূত্রের নমুনা সংগ্রহের দরকার হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) নিয়ম হলো, এ পরীক্ষার জন্য রোগীর লালা, শ্লেষ্মা বা কফ সংগ্রহ করতে হবে।

মুখের লালা বা নাকের শ্লেষ্মার আরটি-পিসিআর (রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন) টেস্ট করলেই বোঝা যায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আছে কি না?

আইইডিসিআর সূত্রে জানা যায়, মুখের লালা ও নাকের শ্লেমা সংগ্রহ করা টিউব অতিমাত্রায় শীতল করে বরফের বাক্সে ভরে পাঠানো হয় ল্যাবরেটরিতে, সেখানে টেস্ট কিট দিয়ে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়।

রোগীর নমুনায় যদি করোনাভাইরাস থাকে, তাহলে এ পরীক্ষায় তার সংখ্যা বাড়বে। ফলাফল আসবে ‘পজেটিভ’।

বুধবার আইইডিসিআর পরিচালক আগামীনিউজ ডটকমকে বলেন, এ পর্যন্ত ৩৪১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছি। গতকাল মঙ্গলবারও (১৭ মার্চ) আমরা এখানে আসা ২৫ জনকে সেবা দিয়েছি। বিগত ২৪ ঘণ্টায় আমরা ৪৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছি।

তিনি আরো বলেন, করোনার বিস্তার আরো বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা ঢাকার আরো কিছু যায়গায় ও ঢাকার বাইরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করবো। আগামী সপ্তাহ নাগাদ কোথায় পরীক্ষা করা যাবে তা জানা যাবে।

করোনা পরীক্ষার কিট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত কিটের মজুদ আছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, চায়না, সিঙ্গাপুর থেকে  কিট ডোনেট করা হচ্ছে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।

মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আইইডিসিআরের বাইরে অন্য ল্যাবে রোগীর টেস্ট করানোর বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনায় আগেই ছিল। তবে বাইরে পরীক্ষা করলেও পুরো প্রক্রিয়ায় আইইডিসিআরই থাকবে। কেননা যদি কোনো টেস্ট পজেটিভ হয়, তার কন্টাক্ট ট্রেসিং করা, তথ্য জানা ও ট্র্যাকিং করার কাজ একমাত্র আইইডিসিআরই করতে পারে।

এদিকে নভেল করোনাভাইরাস সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের পরীক্ষার জন্য টেস্টিং কিট উদ্ভাবনের দাবি করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

আর এই বিষয়ে গণস্বাস্থ্যের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআর পরিচালক।

তিনি বলেন, গণস্বাস্থ্যের একটা প্রতিনিধি দল আমাদের কাছে এসেছে। আমরা তাদের কিট পরীক্ষা নীরিক্ষা করবো। তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে।

আগামীনিউজ/ডলি/নুসরাত