পোষা পাখি বিধিমালা

পাখি আইন : সুরক্ষা দিন পরে আইন প্রয়োগ করুন

জুনায়েদ সওদাগর ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২০, ০৪:১২ পিএম

ঢাকা : পাখি পোষা মানুষের চিরন্তন শখ। আর এ পোষা পাখির লালন-পালন, খামার স্থাপন, কেনা-বেচা ও আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে জেল জরিমানার বিধাণ রেখে ‘পাখি লালন-পালনের বিধান’ জারি করেছে মন্ত্রণালয়। এনিয়ে পাখি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা।

দেশে পোষা পাখি লালন-পালনের সঙ্গে জড়িত ৯০ শতাংশই ছাত্র ও গৃহীনি। আর বৃহৎ আকারে খামারের সংখ্যা ৮ থেকে ১০টি। সংশ্লিষ্টদের দাবি, সরকার প্রয়োজনীয় সুরক্ষা না দিয়ে একটি মহল এই খাতকে ধ্বংস করার জন্য নীতিমালা তৈরি করেছে। আইন চাপিয়ে দিচ্ছে। অথচ সরকারের সহায়তা পেলে একদিকে যেমন যুব সমাস মন্দ পথ থেকে বিরত থাকবে, অন্যদিকে ছোট আকারে হলেও অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে স্নেহধন্য এ খাত।

জানা গেছে, লাইসেন্স না নিলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবার বিধান রেখে ‘পোষা পাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা- ২০২০’ জারি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

পোষা পাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া কোনো খামারি পোষা পাখির উৎপাদন, লালন-পালন, খামার স্থাপন, কেনা-বেচা বা আমদানি-রফতানি করতে পারবেন না বা কোনো পেট শপ (পোষা পাখি বিক্রির দোকান) পোষা পাখি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। খামারির ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা দিয়ে লাইসেন্স নিতে হবে। পেট শপের ক্ষেত্রে লাইসেন্স ও প্রসেস ফি ৫০০ টাকা। বছরে পজেশন ফি (পোষা পাখির মালিকানা-সংক্রান্ত সনদ) দুই হাজার টাকা দিতে হবে।

তবে পাখির সংখ্যা ১০টির বেশি নয়, এমন পোষা পাখি লালন-পালনকারীদের শৌখিন বলা হয়েছে। এদের লাইসেন্স নিতে হবে না।

ঢাকায় পার্ট টাইম পোষা পাখি ব্যবসা করেন এমন একজন সারোয়ার আলম। তিনি আগামীনিউজ ডটকমকে বলেন, ‘সরকার আইন করা মানেই হচ্ছে, এটি ছোট-খাট কোনো খাত নয়। বর্তমানে এটি শিল্পে রূপ নিয়েছে। কিন্তু কে এই শিল্প প্রতিষ্ঠা করলো? স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তাদের মায়েরা। এটি অবসরকালিন একটি শিল্প। কিন্তু পোষা পাখির জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ, টিকার ব্যবস্থা নেই, নেই সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা। চিকিৎসক বা পরামর্শক নেই। উদ্যোক্তা নিজেই নিজের ডাক্তার। এর মধ্যে সাধারণ পাখি পালনকারিদের থেকে লাইসেন্স ফি, পজেশন সার্টিফিকেট বাৎসরিক ফি এবং ট্যাক্স শনাক্ত করণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করেছে। না হলে জেল জরিমানা! প্রশ্ন হচ্ছে- এটি কী আমাদের সুরক্ষার জন্য? নাকি ধ্বংসের জন্য?’

বিধিমালায় বলা হয়েছে, পাখি পালনকারী ও পাখিকে টিকা দিতে হবে। কিন্তু এ টিকা কে দেবে? সরকার এ ধরনের কোনো সহায়তা দিচ্ছেনা। তাই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা না করে আইনের প্রয়োগ অযৌক্তিক বলেন সরোয়ার আলম।

এ বিষয়ে বাজরিগার সোসাইটি অফ বাংলাদেশের নেতা সুলতান বাবু আগামীনিউজ ডটকমকে বলেন, ‘১৯৯৬ সাল থেকে পোষা পাখির ব্যবসার সঙ্গে আছি। এটি ঠিক ব্যবসা নয়, শখ। এখন আমাদের সোসাইটিতে এক লাখের কাছাকাছি সদস্য রয়েছেন। সরকার অনুমোদিত এমন আরো তিনিটি সংগঠন রয়েছে। এছাড়া ফেসবুকভিত্তিক অনেকগুলো সংগঠন রয়েছে। যারা শখের বসে পাখি পালন করেন এবং পাখি পালনের খরচ কেনা-বেচার মাধ্যমে মিটিয়ে থাকেন। এরা সবাই নগর কেন্দ্রীক বাসার বারান্দায় খাছায় পাখি পুষে থাকেন।’

‘কিন্তু সরকার এ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে কর আদায় করতে চায়। আমরা এর বিরুদ্ধে নয়। কথা হলো- বিধিমাল অনুযায়ী পাখির সংখ্যা দশের বেশি হলে আইনের আওতায় আসবে। তাহলে যার ২০টি পাখি আছে, যার দাম ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে। আর এজন্য তাকে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে? এটাকি যৌক্তিক?’

‘এছাড়া বেশিরভাগ উদ্যোক্তা বাসার বারান্দায় খাঁছায় পাখি পুষে। এখন বলা হচ্ছে, তার পরিমাপ সরকার নির্ধারিত পদ্ধতিতে করতে হবে। এমন কড়া বিধিমালা মানতে গেলে মানুষের মন, ভালোবাসা বা ভালোলাগায় আঘাত আসবে। যার অধিকার কোনো আইনের আছে কী না আমার জানা নেই। আমাদের দাবি হচ্ছে সচ্ছতা ও জবাদিহিতার মাধ্যেমে এ নীতিমালা করা হোক। প্রয়োজনীয় সুরক্ষার বিধান রেখে আইন বাস্তবায়ন করা হোক।’ আলোচনায় এসব কথা যুক্ত করেন সুলতান বাবু।

পোষা পাখি যত্ন ও সুরক্ষার বিষয়ে আগামীনিউজ ডটকমের সঙ্গে কথা বলেন ভেটেনারি (পশুচিকিৎসাবিদ্যা) ডাক্তার শাকিল। তিনি বলেন, ‘অনেক নগরবাসি পাখির কিচিরমিচির ডাক শুনতে রুমের পাশে বারান্দায় স্থাপন করেন পাখির খাঁচা। তবে পোষা প্রাণীর মধ্যে পাখি ভীষণ সংবেদনশীল। দুধের শিশুর মতোই যত্ন করতে হয় তাদের। মনে যথেষ্ট ভালোবাসা না থাকলে বা সঠিক যত্ন না পেলে পাখি টিকে না, মরে যায়। তাই পাখি পুষতে হলে মনে যথেষ্ট ভালোবাসা ও পর্যাপ্ত সময় থাকা জরুরি।’

তবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. বিল্লাল হোসেন বলেন ‘পোষা পাখি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এখন সবাইকে নীতিমালাটি মানতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে এবং কথা বলে এটি করা হয়েছে।’

বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো খামারের লাইসেন্স বাতিল হলে তার পজেশন সার্টিফিকেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

আগামীনিউজ/জুনায়েদ/রাফি/সবুজ