লালনগীতির প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-৯৩

সাঁঈজি সিরাজ সাঁঈ  জানুয়ারি ১৫, ২০২০, ০৮:৫০ এএম

সোনার মান গেল রে ভাই বেঙ্গা এক পিতলের কাছে।
শাল পটকের কপালের ফের কুষ্টার বানাত দেশ জুড়েছে॥
বাজিল কলির আরতি
প্যাঁচ প’লো ভাই মানীর প্রতি
ময়ূরের নৃত্য দেখি
প্যাঁচায় পেখম ধরতে বসে॥
শালগ্রামকে করে নোড়া
ভূতের ঘরে ঘণ্টা নাড়া
কলির তো এমনি দাঁড়া
স্থুলে কাজে সব ভুল পড়েছে॥
সবাই কেনে পিতলদানা
জহরের তো উল্ হলো না
লালন কয় গেল জানা
চটকে জগৎ মেতেছে॥

প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা: প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি ছাড়া মূল্যবানদ্রব্য কেউ চিনতে পারে না। তাই সোনার পরিবর্তে অজ্ঞানীরা পিতল ক্রয় করে এবং ময়ূরের নাচ দেখে পেঁচাও তার পেখম মেলে নাচতে চায়। তাই প্রকৃত প্রজ্ঞাবান না হলে প্রকৃত রূপ চেনা যায় না।

পৃথিবীর মানুষ বস্তুবাদী হওয়ার কারণে বস্তুর গুণাবলিতে সে আটকে যায়। আসলে বস্তুর আকর্ষণ এবং বস্তুর প্রতি যে তৃষ্ণা এ দুটো মিলে সে প্রজ্ঞার পরিবর্তে বস্তুকেই গ্রহণ করে। বস্তুকে গ্রহণ করা আর বস্তুর সাথে দুঃখকে গ্রহণ করা একই কথা। সবাই অজ্ঞানতার কারণে পিতলকে বেশি প্রাধান্য দেয়। জহরের কোনো মূল্য হলো না। কারণ জহরের মূল্য বুঝতে বা চিনতে হলে তার প্রজ্ঞাবান চোখ থাকা দরকার।

পৃথিবীর প্রকৃত সত্য উদ্ধার করার জন্য সাধনার মহাশক্তির প্রয়োজন হয়। তা না হলে পিতলকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় জহরের চেয়ে। জগতের মানুষ চকচকের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। কারণ চকচকের দ্বারা বস্তুর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হওয়া যায়। আর বস্তুর দুঃখ বা আকর্ষণ মানুষকে বেশি বেশি আকৃষ্ট করে। এই আকর্ষণ বা দুঃখ থেকে মুক্ত হতে হলে প্রকৃত প্রজ্ঞাবান হতে হয়।

০৯-০৬-২০১৭

রাতঃ ৯:১০