হরি তোমায় জানতে গিয়ে পড়েছি এক বিষম গোলে।
আসল কথায় ঠিক পাইনা তার শুনি কেবল যেথা বলে
পুরানে কয় এরুপ সেরুপ কে জানে তার বিনা কোন রুপ,
বেদান্তে কয় অপরুপ স্বরুপ ঘটে পটে সর্বস্থলে।
বাইবেল কয় ঈসার পিতা আর যত হয় সবই মিথ্যা॥
ঠিক পাইনা তার কোন্ কথা, কোন্ কথা রয়েছে মূলে
কোরান কয় ঠিক দূরন্ত বটে মোহাম্মদের দোস্ত,
হলে গোলাম হেস্তনেস্ত পড়ে মস্ত কথার ভুলে।
গৌরাঙ্গে কয় কৃষ্ণ রাধা বৌদ্ধ বলে বুদ্ধের কথা
নাস্তিকে কয় ঈশ্বর মিথ্যা আপনা আপনি জগৎ চলে
ঋক যজু সাম অথর্ব ইঞ্জিল তৌরিত ফুরকান জবুর
যার যার ভাবে সেই জব্বর ধান্ধা দিচ্ছে কথার ছলে।
সাংখ্যে কয় ঈশ্বর সিদ্ধে ভাবুক কয় হƒদয় মধ্যে,
হয় না কিন্তু কারও সাধ্যে ধরতে তারে কোন কালে।
জ্ঞানী বলে জ্ঞান হয় বড়ো ভক্তে বলে ভক্তি ধরো,
যোগী বলে কুম্ভক করো চেপে ধরো দোমের কলে।
কেহ কয় জপ ওঁকার কেহ কয় হংস আকার,
ঠিক পাই না তার কোন কথায় কেহ কয় সহজে মিলে।
কেহ কয় ভজন সম্বল কেহ কয় কৃপাহি কেবল,
তাঁর ইচ্ছাতে হচ্ছে সকল ফল নাই কিছু কর্মফলে।
যে যা বলে সবারই মূল এক ব্রহ্ম সুক্ষ্ম স্থুল,
লীলাতে ঘটাইছে গোল দীনহীন মনোমোহন বলে।
কৃপা হলে পাবে কৃপা স্ববশ হবে অজপা,
তুচ্ছ হয়ে সোনা রুপা রুপে যাবে নয়ন ভুলে।
প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যাঃ
মনোমোহন আক্ষেপ করে বিধাতার প্রকৃত পরিচয় জানার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থে ভিন্ন ভিন্নভাবে উল্লেখ করেছে। পুরানে যেমন বিধাতার বিভিন্ন রূপের কথা বলেছে। তেমনি বেদ গ্রন্থে তাঁর রূপকে সর্বত্র বলে উল্লেখ করেছে। বাইবেলে ঈশ্বরকে ঈসার পিতা হিসেবে এবং কোরানে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে দোস্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এইসব বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থে ভিন্ন ভিন্নভাবে উল্লেখ থাকার কারণে বিধাতার প্রকৃত রূপ বা পরিচয় জানা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ প্রকৃত পক্ষে বিধাতার স্বরূপ আকার বা নিরাকার তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যাচ্ছে না বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থের বর্ণনা মোতাবেক। সেই কারণে যেসব ব্যক্তিরা ধর্মীয় গ্রন্থে বিশ্বাসী তাদের অধিকাংশ বিধাতাকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় না। ফলে সেই সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করেও তার প্রকৃত রূপ তাদের দৃষ্টিতে ধরা দেয় না। ফলে তাদের নিকট বিধাতার রূপ পরিচয় একেবারে অজ্ঞাত থেকে যায়।
মনোমোহন প্রজ্ঞাবান সত্ত্বা অবশেষে গুরুর কৃপার উপরেই নির্ভর করেছেন। গুরু ব্রহ্মের স্বরূপ উৎঘাটন করেছেন এবং তার শক্তির সাথে নিজে সংযোগে আছে। সে কারণে গুরুর নির্দেশ মোতাবেক ধ্যান বা সাধনা করলে শত ধর্মীয় গ্রন্থের মধ্যকার বিভেদ ভুলে নিজের অন্তরের মধ্যে প্রকৃত শক্তির উদ্ভব হবে এবং নিজের অন্তরের মধ্যে সেই অনন্ত শক্তির সাথে ব্যক্তির সাধনার দ্বারা উদ্ভাবিত শক্তির সংযোগ ঘটে।