সাধনা কি আছে আর বিনে আত্ম পরিচয়।
আমি বা কে তুমি বা কে, কেবা আমি তুমি কয়
কার কর্ম কেবা করে, কেবা বাঁচে কেবা মরে,
সৃষ্টি বা কি, স্থিতি বা কি, কেমনে কোথায় লয়
দুহিতা ভগিনী ভ্রাতা, জায়া পতি পিতা মাতা
কেবা কোথা চেয়ে দেখ, ঘুচিবে সংশয়।
এক শক্তি থওে থরে, বিরাজিছে এ সংসারে,
সাধ্য কি, সাধনা করে করবে তুমি পাপক্ষয়
আবশ্যক কর্ম যাহা, সতত কররে তাহা,
পাপ পূর্ণ, শুণ্য এ বিশ্ব বিভূতিময়।
প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যাঃ
মানুষের জীবনে সাধনার মূল উদ্দেশ্য নিজেকে জানতে পারা। নিজেকে জানার মাধ্যমেই মানব জীবনের সকল সমস্যার সমাধান ঘটে। নিজের মধ্যেই পৃথিবীর সকল সমস্যার উৎপত্তি। পৃথিবীর মধ্যে কত কি ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে সে সব কিছুর সাথে কোন সত্ত্বা সম্পৃক্ত না। প্রকৃত পক্ষে তার মন যেখানে যেখানে জড়িয়ে আছে সেই সব ঘটনার সাথে সে বিজড়িত। সে কারণে নিজের দেহমনের সাথে যা যা কিছুর সংযোগ আছে সে সব কিছুকে সঠিকভাবে বুঝে নেওয়ার মাধ্যমে নিজের মধ্যে সকল সংশয় থেকে মুক্ত হওয়ায় মানব জীবনের প্রকৃত সাধনা। পৃথিবীর মাঝে এক নিত্য বিশ্বময় শক্তির প্রকাশ আছে। সেই শক্তিই সকল কর্মকর্মার মূলে আছে। মানুষ তার মনের বস্তুময় আকর্ষণের কারণে সংসারে বিভিন্ন জাতীয় মায়া মমতার মাধ্যমে আটকিয়ে আছে। সে নিজের মনের তৃষ্ণার কারণে বিভিন্নভাবে নিজেকে সম্পর্কের মাধ্যমে সংযুক্ত করে রাখে। এই সংযোগ বস্তু প্রাপ্তি বা হারানোর এক জাতীয় ভয়। ফলে সে নিজেকে কোন অবস্থাতেই বস্তুর সংযোগ থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয় না।
পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু অস্তিত্বাকারে আছে তার মধ্যে কোন বিশৃঙ্খলা নেই, নেই কোন পাপ অন্যায়। কারণ প্রকৃতির সব কিছুর মধ্যে সুন্দর এক শক্তির উৎস আছে। সব কিছুই সুন্দর ও কল্যাণকর। মানুষের মনটাই কেবল অন্যায়ের মূল উৎস। মনের মধ্যেই কেবল পাপ বোধ জাগ্রত হয়। এই পাপ বোধের মাধ্যমে সে বিভিন্ন জাতীয় বস্তুময় লোভ, দ্বেষ ও মোহের কারণে কর্ম সৃষ্টি করে। যা পরবর্তীতে তাকে দুঃখের মধ্যে ফেলে দেয়। সে কারণে বিশ্ব পাপ-পূণ্য শূণ্য অবস্থা। মানুষের মনকেই সাধনার শক্তি দ্বারা পাপবিহীন অবস্থায় প্রতিষ্ঠিত করাই মানব জীবনের একমাত্র সফলতা।