শেষ কথা বলতে এলেম
বাউল সেজে তোমার কাছে।
আপনি আপন চিন্তা করো,
তা বিনে সকল মিছে
অবশ্য হবে মরণ কে করে তার নিবারণ,
এত দ্বন্ধ কি কারণ ভেবে দেখো আগে পাছে।
করি স্বার্থ পরিহার করো পরোপকার,
জগতেই বন্ধু তোমার খাটো জগতের কাজে।
তুচ্ছ করি ভব মায়া সত্য সরলতা দয়া,
সঙ্গে লয়ে ঢাল কায়া বিনয়ের ছাঁচে।
মনো কয় মানুষ কর্ম রাখতে সত্যের ধর্ম
ধন্য হয় তাহার জন্ম এমত যে হইয়াছে॥
প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যাঃ
প্রজ্ঞাবান বাউল সত্ত্বা নিজের মনকে শিক্ষা দিচ্ছে যে, সকলকেই মরতে হবে। এই মৃত্যুকে কেহই নিবারণ করতে পারবে না। সেই কারণে অন্য ব্যক্তির চিন্তা না করে নিজের চিন্তা করতে বলা হয়েছে। এই পৃথিবীতে সব কিছুই ঠিক আছে কেবল দ্বন্ধ মানুষের মনে। মনের মধ্যে সর্বদা বস্তুর আকর্ষণ থাকে। সেই কারণে মনের মধ্যে সব সময় নিজের বস্তুময় স্বার্থ পরিহার করতে সক্ষম হলে তার সকল কর্মের মধ্যে প্রজ্ঞার শক্তি থাকে। নিজের মনের ঊর্ধ্বে উঠতে পারলেই সকল কাজই শক্তি তথা মুক্তির সহায়ক।
প্রতিটা মানুষ ভবের মায়াকে বড় করে দেখে। এই মায়াজালে সব সময় সে নিজেকে জড়িয়ে রাখে। এই বস্তুর মায়াজাল কখনো ছিন্ন করতে সক্ষম হয় না। এমনকি বস্তুর মায়া দ্বারা আস্তে আস্তে গভীর তলে তলিয়ে যায়। আর কোন অবস্থাতেই সেই অন্ধকার গভীর বস্তুর অবস্থা থেকে উঠে আসতে সক্ষম হয় না।
মানুষ যখন সাধনার দ্বারা নিজের মধ্যে শক্তি অর্জন করে তখন তার সেই শক্তির ঢাল সবসময় নিজের বস্তুর আকর্ষণকে প্রতিহত করে। তার মধ্যে প্রজ্ঞার শক্তির কারণে কোন অবস্থাতেই বস্তুময় তৃষ্ণা তাকে আর গরল করতে সক্ষম হয় না। তখন তার অস্তরের মধ্যে প্রজ্ঞাময় সরল ভাব জাগ্রত করে। এখন তার অন্তরের মধ্যে এক সবল ও সত্যের শক্তির সৃষ্টি হয়। ফলে কোন অবস্থাতেই মনের ইচ্ছা মতো কার্য সম্পাদিত হয় না। এখন মনের মৃত্যু ঘটেছে। এখন কেবল অন্তরের মধ্যে এক প্রজ্ঞার শক্তি সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রজ্ঞার শক্তি তার সকল কর্মের উপর বিজয়ী হয়ে তার জন্ম স্বার্থক হয়েছে নিজের ও জগতের জন্য।