শিখিয়ে দে তুই আমারে, কেমন করে তোরে ডাকি।
এক ডাকে ফুরায়ে দে রে, জনম ভরার ডাকাডাকি॥
যেমন করে ডাকলে পরে শুনতে পাস তুই হঠাৎ করে
হাসি দিস আমার অন্তরে প্রাণ ভরে যায় রইনা বাকি॥
ডাক দিয়ে তুই ডাক শিখিয়ে,
ফাঁক না দিয়ে আয়না ধেয়ে
খেলাই আমি তোরে লয়ে, তোর প্রাণে মোর প্রাণ সখি।
যে রুপে তোর নয়ন ধারা, সে রুপে ধরে নয়ন ধারা,
বারণ করে হওনা ছাড়া, চেয়ে থাক তুই পাগলা আঁখি
মনোমোহন বেহাসুর মন, কমতি পড়েনাই তার ওজন,
আপনি কয় তারে শোধন, হৃদয়ে জাগ্রত থাকি॥
প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যাঃ
মানুষ সঠিক পথে চলতে না পারলে আজীবন মৃত্যু অবধি তার পথের চলা শেষ হয় না। প্রজ্ঞার শক্তিতে সঠিক পথে চলতে পারলে সহজে তার গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। মানুষ জীবন ভোর তার কঙ্খিত সত্ত্বাকে পাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করে। তার এই প্রার্থনার মধ্যে সঠিকতা না থাকার কারণে মৃত্যু অবধি তাঁর সেই সত্ত্বাকে পায় না। যখন কোন সত্ত্বা তার কাঙ্খিত শক্তির জন্য প্রচেষ্টা করে তখন সেই শক্তি বা সত্ত্বার পাওয়ার পর তার সেই প্রচেষ্টার অবসান ঘটে। একজন ছাত্র অনেক চেষ্টার পর অবশেষে এমএ পাশ করার পর তার জীবনের শত পরীক্ষার অবসান ঘটে। মানুষের জীবনে তার সত্ত্বাকে পাওয়ার জন্য যে প্রচেষ্টা তাতে সঠিক নির্দেশনা না থাকার কারণে তার এই কর্মের আর অবসান ঘটে না। প্রকৃত পক্ষে তার কাঙ্খিত সত্ত্বার সাথে মিলিত হতে সক্ষম হলে তার আজীবনের ডাকাডাকির অবসান ঘটে। মানুষ সঠিকভাবে তাঁকে ডাকতে পারে না বলে মৃত্যু অবধি ডাকাডাকি করতে হয়। তবুও তার আপণ সত্ত্বাকে না পেয়ে মৃত্যুকালেও না পাওয়ার আফসোস্ করতে দেখা যায়।
মনোমোহন প্রজ্ঞাবান সত্ত্বা। তিনি সাধনার মাধ্যমে তার অন্তরের মধ্যে যে সত্ত্বা আছে তাকে পেয়েছেন। তখন তিনি মহাপ্রজ্ঞাময় শক্তির সাথে নিজের সাধনার শক্তির সমন্বয় ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। এখন তার মধ্যে আর কোন বস্তু প্রাপ্তির তৃষ্ণা নেই। জীবনের সকল প্রাপ্তির সমাপ্তি ঘটেছে। তাঁর আজীবনের সেই প্রকৃত সত্ত্বার সাথে মিলন ঘটেছে। সে কারণে তাঁর আর কোন ডাকডাকি বা কোন আচার-অনুষ্ঠান নেই। তাঁর সকল কর্মের অবসান ঘটেছে। এখন কেবল সেই সত্ত্বার শক্তির সাথে একাকার হয়ে মিলে মিশে থাকা।