মনমোহন দত্তের মরমী সঙ্গীতের প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-৯২

সাঁঈজি সিরাজ সাঁঈ সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১, ০৯:৫৯ এএম
মলয়া সংগীতের জনক, মরমী সাধক, কবি, বাউল ও সমাজ সংস্কারক মনমোহন দত্ত। ছবিঃ সংগৃহীত

যারে দেখেতে আকুল, দেখবি যদি, শোন বলি সন্ধ্যান তার,
দ্বি দলেতে দিল ধরিয়া, মিল করিয়ে, চেয়ে থাক মন আমার।
অরুপ, স্বরুপ, এইরুপ হইয়ে প্রেম লোলুপ,
ভাবরে অরুপের রুপ ছুটিবে আঁধার।
ফুটবে কালিদীপ শিখা, যা আছে সব যাবে দেখা,
তার ভিতরে বাঁকা সখা, দেখা পেতে পার তাঁর।
তারে তারে মিশালে তার, জগৎ জোড়া একটি তার।
সাবধানে মন হুঁশ নিয়ে, বক বিড়ালের খাপ দেখিয়ে
চোখ মুদিয়ে ধ্যান ধরিয়ে, মন নিয়ে মন বসো আমার
শুন বলি কই তোরে ক্ষেপা, ভাবিস না রে সোনা রুপা,
বশ করিয়ে বসো অজপা, কৃপা হবে সেই অকৃপায়।
মন তোমার নাই চিত্ত শুদ্ধি, গেলনা তোর ছেলে বুদ্ধি
কিসে হবে সাধন সিদ্ধি, মনোমোহনের নাই বেপার।

প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যাঃ
প্রজ্ঞাবান মনোমোহন তাঁর মধ্যকার অন্তরের সত্ত্বাকে পেয়েছেন এবং সে কারণে তাকে কিভাবে পাওয়া যায় তার সন্ধান দিয়েছেন। মানুষ তার মনের মানুষকে পেতে সারা জীবন কত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করে। কিন্তু সঠিক পথে পরিচালনা না করার কারণে তার সেই আপন সত্ত্বার সন্ধান মেলে না। যে কোন কর্মের সফলতার জন্য আগে সঠিকভাবে কার্য সম্পাদনের কৌশল অর্জনের প্রয়োজন। পদ্ধতি সঠিক হলে অবশ্যই তার কর্মের সফলতা আসবে। আর কৌশল যদি সঠিক প্রজ্ঞাবান না হয় তাহলে আমৃত্যু পর্যন্ত চেষ্টা করলেও সফলতা আসে না।

বস্তুর সফলতাকে বস্তু চোখে দেখা যায়। কিন্তু অন্তরের সঠিকতা তথা প্রকৃত সত্যকে পাওয়া একমাত্র সেই সত্যের সাথে একাকার না হওয়া পর্যন্ত বোঝা যায় না। মানুষ যখন সাধনার মাধ্যমে তার অন্তরের মধ্যেকার যে প্রজ্ঞার শক্তি আছে তাকে উপলব্ধি করতে পারে তখন তার মধ্যে এক অকৃত্রিম ভালবাসার সৃষ্টি হয়। তখন তার মনের মধ্যে যে বস্তু আকর্ষণ তার সমাপ্তি ঘটে। তখন সে বিশ্বময় অরূপের সাথে নিজের স্বরূপকে মিশিয়ে এক বিস্ময় রূপে রূপান্তরিত হয়। বক কিংবা বিড়াল যেমন শিকার ধরার জন্য এক নিরিখে অপেক্ষা করে। সে তখন অন্য কোন কিছুই চিন্তা ভাবনার মধ্যে আনে না। ঠিক তেমনিভাবে কোন সত্ত্বা যখন ছেলেমি চিন্তা ভাবনাকে ত্যাগ করে প্রকৃত পক্ষে সত্যের সাথে একাকার হওয়ার লক্ষ্যে সাধনার মাধ্যমে নিজের অন্তরের শক্তির সন্ধান করে। তখন অবশ্যই অবশ্যই তাঁর নির্মল সাধনার কারণে তার মধ্যে সেই অনন্ত শক্তির প্রকাশ ঘটবে। তখন সকল কিছুতেই সে একক হিসেবে বিশ্বময় শক্তির সাথে সংযোগ ঘটাবে এবং তখন নিজের মধ্যে সাধন সিদ্ধি ঘটবে।