মৃণাল হকের ভাস্কর্যে সেজেছিল ঢাকা শহর

ডেস্ক রিপোর্ট আগস্ট ২২, ২০২০, ০৩:১৩ পিএম
ছবি : সংগৃহীত

ঢাকাঃ রাজধানী ঢাকা শহরের অধিকাংশ ভাস্কর্য যার হাত দিয়ে তৈরী, সেই আলোচিত ভাস্কর মৃণাল হক আর নেই। শনিবার প্রথম প্রহরে গুলশানের বাসায় তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।

মৃণাল হকের সহযোগী গ্রাফিক্স ডিজাইনার মো. আলমগীর  এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, 'স্যার ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। গতকাল রাতে তার সুগার লেভেল কমে গিয়েছিল, পাশাপাশি অক্সিজেন মাত্রাও কমে গিয়েছিল। পরে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, বাসায় থাকা অবস্থায়ই তার মৃত্যু হয়েছে। শনিবার আসরের নামাজের পর গুলশান আজাদ মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

মৃণাল হকের যেসব ভাস্কর্যে সেজেছিল ঢাকা শহর:

ভাস্কর মৃণাল হকের হাতেই ঢাকা শহরের অধিকাংশ ভাস্কর্য তৈরী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে রত্নদ্বীপ, হোটেল শেরাটনের সামনে রাজসিক, ইস্কাটনে কোতোয়াল, সাতরাস্তায় ময়ূর, এয়ারপোর্ট গোল চত্বরের ভাস্কর্য, নৌ সদর দপ্তরের সামনে ডলফিন, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের ভাস্কর্য, বঙ্গবাজারে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন শিল্পকর্মের নির্মাতা তিনি।

তবে সবচেয়ে বেশি বিতর্কও হয়েছে এই শিল্পীকে নিয়েই।ঢাকার হজক্যাম্পের সামনে বাউল ভাস্কর্য তৈরি করে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন মৃণাল হক। পরে বিক্ষোভের মুখে ওই ভাস্কর্য অপসারণ করা হয়। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে যখন কারাবন্দী ছিলেন তখন কারা অধিদফতরের দেয়ালে তারেক রহমানের ম্যুরাল তৈরি করেছিলেন এই শিল্পী। সরকারি ভবনে তারেকের ম্যুরাল বসানো নিয়েও সে সময় প্রচুর বিতর্ক হয়েছিল দেশব্যাপী। পরে সাদা কাগজ দিয়ে ম্যুরালটি ঢেকে দেয়া হয়।

এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে মৃণাল হকের তৈরী গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য নিয়েও দেশব্যাপী নানা বিতর্ক হয়। জাতীয় ঈদগাহের সামনে এই ভাস্কর্যটি স্থাপনের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে হেফাজতে ইসলামসহ দেশের কয়েকটি ইসলামি দল। পরে বিতর্কের মুখে এই তার এই ভাস্কর্যটিও সরিয়ে নেয়া হয়।

এক নজরে মৃণাল হকের কর্মজীবন:

ভাস্কর মৃণাল হক ১৯৫৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা একরামুল হক বায়ান্নর একজন ভাষা সৈনিক। তিনি ১৯৫৫-৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। একরামুল হক চিন্তা-চেতনায় বামপন্থী ছিলেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয় অংশ নেন। পরবর্তীতে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

মৃণাল হক ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন। ১৯৮৪ সালে তিনি মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯৫ সালে মৃণাল আমেরিকাতে পাড়ি জমান এবং সেখানেই তার প্রথম কাজ শুরু করেন।

নিউইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসে তার শিল্পকর্মের প্রথম প্রদর্শনী হয়। নিউইয়র্কে তিনি এত বেশি কাজ করেন যে, সেখানকার সরকারি টিভি চ্যানেলে তার একটি সাক্ষাৎকার ২৬ বার এবং সিএনএন চ্যানেলে ১৮ বার প্রচারিত হয়।

মৃণাল হকের স্ত্রী নাসরিন হক। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। সৈকত হক এবং শ্রাবণী হক। ২০০২ সালে মৃণাল দেশে ফিরে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। একই বছর তিনি নিজ উদ্যোগে নির্মাণ করেন মতিঝিলের বক ভাস্কর্যটি । ২০০৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মিত গোল্ডেন জুবিলী টাওয়ারও তারই শিল্পকর্ম।

আগামীনিউজ/এএইচ