প্রবন্ধ- মানুষের মৃত্যুর পরও যেসকল আমলের সওয়াব পাওয়া যায়

আগামী নিউজ ডেস্ক আগস্ট ৪, ২০২৩, ১০:২০ এএম
প্রতীকী ছবি

ঢাকাঃ মহান আল্লাহ তা'আলা আদম সন্তান বা মানব জাতিকে শ্রেষ্ঠত্যের মর্যাদা দিয়ে পাঠিয়েছেন। সুরা বনি ইস্রাঈল, আয়াত ৭০।
আল্লাহ তা'আলা মানুষকে চলা, বলা, চিন্তা করা ও কর্মের সাধীনতা দান করেছেন। আবার মানুষকে আল্লাহ এ কথাও বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। ওমানুষ দিন শেষে তোমাকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে এবং তোমার প্রতিটি কাজের হিসেব আমার কাছে দেয়া লাগবে। 
সুরা গাশিয়াহ-আয়াত-২৬।

অতএব আমাদের মনে রাখতে হবে জীবন ও মৃত্যু মানবজীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি পার্থিব হলেও অপরটি পরলৌকিক ও অনিবার্য। মৃত্যুর আগে মানুষ যেসব আমল করবে, আখেরাতে আল্লাহ তাআলা সেগুলোর প্রতিদান দেবেন। কারন আল্লাহ বলেন - আমি মৃত্যু আর জীবন সৃষ্টি করেছি যাতে তোমাদের পরীক্ষা নিতে পারি। তোমাদের মাধ্যে কে ভালো আমলের অধিকারী। সুরা মুলক, আয়াত ৩-৪।

আল্লাহ তাআলা জীবন ও মৃত্যু- এ দুইটি অমোঘ-বাস্তবতা সৃষ্টি করেছেন কে কত ভাল আমল করতে পারে, তা পরীক্ষা করার জন্য। কে সর্বাধিক উত্তম।

সুতারাং নিয়ত সঠিক-শুদ্ধ থাকলে ইমানদার মানুষ মৃত্যুর পরও যেসব আমলের সাওয়াব পেতে থাকবে, হাদিসের আলোকে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা দেওয়া হলো।-
## সদকায়ে জারিয়া:-
‘সদকা’ শব্দের অর্থ দান করা। আর ‘জারিয়া’ অর্থ অব্যাহত। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে শরিয়তসম্মত এমন কল্যাণকর কাজে দান করা। যেমন- মাদরাসা তৈরি, এতিমখানা, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, পাঠাগারের ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট নির্মাণ করা ইত্যাদি অন্যতম। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না, ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. এমন ইলম- যার দ্বারা মানুষ হেদায়াতের রাস্তা খুজে পায়। ৩. নেক সন্তান রেখে যাওয়া, যে মাতাপিতার জন্য দুয়া করবে।

## কল্যাণকর বা দীনি ইলম শিক্ষা দেয়া:-
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে মানুষকে ইলম শিক্ষা দিলো, এ ইলম অনুযায়ী আমলকারীর সমপরিমাণ সওয়াব তার আমলনামায়ও যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের কারো সওয়াবে কোনো কমতি হবে না। ইবনু মাজাহ, হা নং : ২৪০
## সৎ সন্তান রেখে যাওয়া:-
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর ৪ টি আমলের সাওয়াব অব্যাহত থাকে : ১. এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া যে ভাল আমল করবে ও মাতা পিতার জন্য দু'য়া করে।
২. ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দিল তার সাওয়াব।
৩. ভাল কাজ চালু করার ফলে তাকে যারা অনুসরণ করল তার সাওয়াব, 
৪. যে ব্যক্তি এমন সাদাকাহ করলো, যা প্রবাহমান থাকে তার সাওয়াব ’ (মুসনাদ আহমাদ, হা. নং : ২২২৪৭)

## মাসজিদ/মাদ্রাসা তৈরি করা:-
মাসজিদে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি কুরআন শিক্ষা কার্যক্রম, দ্বীনি বিষয়ক শিক্ষা দান ও কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মাসজিদ তৈরি করল, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর তৈরি করবেন। ’ (মুসলিম, হা: নং : ১২১৮)

## কোরআনের ইলম বিতরণ করা :-
কোনো ব্যক্তি যদি দিনের দাওয়াতে জন্য মসজিদ, মাদরাসা বা কোনো প্রতিষ্ঠানে পবিত্র কোরআন বা তার জ্ঞান বিতরণ করে তাহলে সেই দাওয়াতে যত গুলো মানুষ সেখান থেকে হেদায়াতের আলো পাবে তাদের ভাল আমলের সাওয়াবের অংশ সেও পাবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর কবরে ৭টি আমলের সাওয়াব অব্যাহত থাকে :
১. যে ইলম শিক্ষা দিল, 
২. যে পানি প্রবাহিত করল,
৩. কুপ খনন করল, 
৪. গাছ লাগালো
৫. মাসজিদ তৈরি করল, 
৬. কারো দায়িত্বে কিতাব দিয়ে গেল ও 
৭. এমন নেক সন্তান রেখে গেল- যে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। ’ (মুসনাদুল বাজ্জার :৭২৮৯)

## বৃক্ষ রোপন করা:-
হাদিসে আছে, ‘কোন মুসলিম যদি কোন বৃক্ষরোপন করে, আর তা থেকে কোন ফল কেউ খায় তবে সেটি তার জন্য সাদাকাহ, যদি কেউ চুরি করে খায় তাও তার জন্য সদাকাহ, কোন পাখিও খায় তাও তার জন্য সেটি সদাকাহ। এমনকি যদি কেউ তা কেটে ফেলে তাও সেটি তার জন্য সাদকাহ।  ( মুসলিম- : ৪০৫০)

##:-খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করা;-
হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, এক লোক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, তার পানির খুব পিপাসা পেল, পথিমধ্যে সে একটি কূপ পেল এবং সেখান থেকে পানি পান করল। অতঃপর দেখতে পেল একটি কুকুর পানির পিপাসায় ময়লা খাচ্ছে, তখন সে সেখানে মোজা দিয়ে পানি ভরে কুকুরকে পানি পান করাল এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। এজন্য আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দিলেন। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! প্রাণীকে পানি পান করালেও কি সাওয়াব আছে? রাসুল (সা.) বললেন, প্রত্যেক সজীব অন্তরকে পানি পান করানোর জন্য সাওয়াব রয়েছে।(বুখারি)

## গৃহহীনদের ঘর-বাড়ি তৈরি করে দেওয়া-
রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুমিন মৃত্যুবরণ করার পর তার সাথে যে আমলের সাওয়াব সম্পৃক্ত থাকবে, তা হলো ইলম শিক্ষা দেয়া ও কিতাব রচনা করা, নেক সন্তান রেখে যাওয়া, মসজিদ তৈরি করা, অভাবগ্রস্থ ও গৃহহীনদের জন্য ঘর তৈরি করে দেয়া, পানি প্রবাহিত হওয়ার ব্যবস্থা করা এবং তার সম্পদ থেকে সাদাকাহ করা। ’ (ইবনু খুযাইমাহ : ২৪৯)
## ইসলামি রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষা করা;-
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা অবস্থায় মারা যায়, তাহলে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল মরার পরও তা তার জন্য সওয়াব জারি থাকবে, তার রিজিকও জারি থাকবে, কবরের পরীক্ষা থেকে সে নিরাপদ থাকবে এবং আল্লাহ তাআলা কেয়ামতে তাকে ভয় থেকে মুক্ত অবস্থায় ওঠাবেন। ’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস নং : ২২৩৪)

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মৃত্যুর পর প্রত্যেক মৃতের কর্মের ধারা শেষ করে দেয়া হয়। তবে যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেয় তার আমল কিয়ামত পর্যন্ত বাড়তে থাকবে এবং কবরের ফিতনা থেকেও সে নিরাপদ থাকবে। ’ (ইবনু হিব্বান : ৪৬২৪)

## প্রবাহিত পানির ব্যবস্থা করা:-
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে পানির ঝর্ণা তৈরী করল, তার জন্য জান্নাত রয়েছে। ’ (বুখারি: ২৭৭৮)

## আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া:-
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো আমি একজন মুসলমান ‘ (সুরা হামিম সিজদাহ, আয়াত : ৩৩)

রাসুল (সা.) তার সাহাবাদের বলেন, ‘মানুষকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের সাওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ৬৯৮০)

## বইপত্র/দিনী কিতাব রচনা করা;-
এমন বইপত্র কিংবা কিতাব রচনা করা, যার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ ও উপকার হয়। মানুষ সঠিক পথের দিশা পায়। হাদিসে এসেছে, ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ২৬৭০)
## দাতব্য চিকিৎসা সেবা চালু করা- সমাজের বিত্তবান মানুষ যদি দরিদ্র অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা চালু করে তার সাওয়াব অব্যাহত থাকে। হাদিসে এসেছে যে মানুষকে রহম করল আল্লাহ তাকে রহম করবেন। 
## মুসাফির বা পথিকের জন্য আশ্রয় ব্যাবস্থা চালু করা।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে মানবতার কল্যাণকর কাজে শামিল হওয়ার তাওফিক দান করুন।

মাওলানা মো: আবুল কালাম আজাদ
খতিব - বনানী কেন্দ্রীয় জামেমসজিদ, ঢাকা।

বুইউ