রমজানের শেষ দশ দিন যেসব আমল করবেন

ইসলাম ডেস্ক এপ্রিল ২৫, ২০২২, ১০:২১ এএম

ঢাকাঃ রমজান মাসের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ দিন হলো শেষ ১০ দিন। কেননা শবে কদর এ দশকেরই কোনো এক রাতে। রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ইবাদত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে— ‘যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, তখন নবী কারিম (স.) কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন।’ (বুখারি : ১০৫৩)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো’ (সহিহ বুখারি: ২০১৭)।

রাসুলুল্লাহ (স.) কদরের রাতে ইবাদত ও নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত জাগবে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (সহিহ বুখারি: ২০১৪; মুসলিম: ৭৬০)

সুতরাং যারা ইতেকাফে বসেছেন, তারা তো আমল করবেনই, যারা বসতে পারেননি, তাদেরও আমল কম করা উচিত নয়। শেষ দশকের সবরাতেই মুমিন মুসলমানকে যথাসম্ভব বেশি ইবাদত করা চাই। বিশেষত শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে রমজানের অন্যান্য রাতের তুলনায় বেশি বেশি ইবাদত, নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল ও কোরআন তেলাওয়াত করা প্রয়োজন।

অন্তত এশা ও ফজরের নামাজ যদি জামাতের সঙ্গে আদায় করা যায়, তবু সারা রাত নামাজ পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ল সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল।’ (মুসলিম: ৬৫৬)

এছাড়াও প্রতি রাতে তাহাজ্জুদ পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমল। আট রাকাত না পারলে চার রাকাত। তা-ও সম্ভব না হলে অন্তত দুই রাকাত তাহাজ্জুদ যেন আদায় করা হয়। মনে রাখা জরুরি, হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এই এক রাতেই এক এক নাগাড়ে ৮৪ বছর তাহাজ্জুদ আদায় করার পুণ্যলাভে ধন্য হবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের সালাতে (তাহাজ্জুদে) ১০টি আয়াত তেলাওয়াত করবে, তার নাম গাফেলদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে না। আর যে ব্যক্তি (রাতের) সালাতে ১০০ আয়াত পাঠ করবে, তার নাম অনুগত বান্দাদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে। যে ব্যক্তি সলাতে দাঁড়িয়ে এক হাজার আয়াত তেলাওয়াত করবে, তাকে অফুরন্ত পুরস্কার প্রাপ্তদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৩৯৮)

পাশাপাশি এই দশকে বেশি বেশি দোয়া করা ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি জানতে পারি লাইলাতুল কদর কোনটি, তাহলে আমি সে রাতে কী বলব? তিনি বলেন, ‘তুমি বলো— ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাটা আপনার পছন্দ। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫১৩; ইবনে মাজাহ: ৩৮৫০)

আবার দান-সদকা এমন এক আমল, যা রমজানের বাইরেও অধিক সওয়াব লাভের আমল। আর রমজানে তো এক টাকা দানও অনেক ফজিলতপূর্ণ। তাই শেষ দশকে প্রতিদিন ৫/১০ টাকা দান করা বড়ই নেয়ামক হয়ে ধরা দেবে। সম্ভব না হলে অন্তত ২/৪ টাকা হলেও দান করা যায়। ফলে প্রায় ৮৪ বছর ২/৪ টাকা করে দান করার প্রতিদান পাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ।

এছাড়াও দরুদ, ইস্তেগফার, মাসনুন দোয়া ও জিকিরগুলো বেশি বেশি করা উচিত। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শবে কদরে গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো বেশি বেশি এবং যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএম