ঢাকাঃ বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা সংকটে টিকা বা ভ্যাকসিন নেওয়া নিয়ে অনেকে দ্বিধায় থাকেন যে, টিকা নিলে রোজা ভেঙে যাবে কি না। একই সংশয় ইনসুলিন-ইনহেলারের ক্ষেত্রেও। তাই রোজার দিনে এসব বিষয়ে মাসআলা বা ইসলামি বিধান জেনে সংশয় দূর করা মুমিন মুসলমানদের জন্য খুবই জরুরি।
রোজায় টিকা নেওয়ার বিধান
রগে, চামড়া বা মাংসপেশিতে এমনকি পেটে ইনজেকশন দিলেও (যেমন কুকুর কামড় দিলে পেটে দেওয়া হয়), রোজা ভাঙবে না। কারণ, এসব রোজা ভাঙার কারণের মধ্যে পড়ে না। রোজা ভঙ্গের কারণ হচ্ছে, স্বাভাবিক প্রবেশপথ দিয়ে পেটে বা মস্তিষ্কে কোনো কিছু প্রবেশ করা। অস্বাভাবিক প্রবেশপথ দিয়ে শরীরের ভেতরে কোনো কিছু প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয় না।
করোনার টিকা-ইনজেকশন বা ইনসুলিনের ব্যাপারে জমহুর ওলামাদের রায় এটাই। এসব কোনোকিছু সরাসরি খাদ্যনালী অতিক্রম করে না। এ মাসআলায় মুসলিম বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আলেমরাও একই মত পোষণ করেছেন।
(তথ্যসূত্র: ইমদাদুল ফতোয়া: ২/১৪৪-১৪৭—৩/১৩৩-১৩৪; ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ: ৬/৪০-৪০৯; ফতোয়া রহিমিয়া: ৭/২৫৭; আহসানুল ফতোয়া: ৪/৪২২; ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৫/১৭৩-১৭৯; আপকি মাসায়িল আওর উনকা হল: ৩/২১২; ইমদাদুল ফতোয়া)
রোজায় ইনহেলার নেওয়ার বিধান
ইনহেলারের মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে বিশেষ পদ্ধতিতে মুখের ভেতরে স্প্রে করতে হয়। এতে শ্বাসরুদ্ধ জায়গাটি প্রশস্ত হয়ে যায়। ফলে শ্বাস চলাচলের কষ্ট দূর হয়। যদিও স্প্রে করার সময় ওষুধটি গ্যাসের মতো দেখায়, কিন্তু বাস্তবে এটি তরল ওষুধ। তাই মুখের ভেতরে স্প্রে করার কারণে রোজা ভেঙে যাবে এবং পরে ওইদিনের কাজা রোজা আদায় করে দিতে হবে।
অনেককে বলতে শোনা যায়— ইনহেলার অতি প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়, তাই এতে রোজা ভঙ্গ হবে না। তাদের এ উক্তিটি সঠিক নয়। কেননা কেউ যদি ক্ষুধার তাড়নায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে অতি প্রয়োজনে কিছু খেয়ে ফেলে, তাহলে অতি প্রয়োজনে খাওয়ার কারণে ভেঙে যাবে।
সুতরাং ইনহেলার অতি প্রয়োজনে ব্যবহার করলেও রোজা ভেঙে যাবে এবং পরে রোজার কাজা দিতে হবে। তবে, স্প্রে করার পর না গিলে যদি থুতু দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে রোজা ভাঙবে না। (তথ্যসূত্র: ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৫/৪৫৯; হেদায়া: ১/১২০)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের রোজার ব্যাপারে সকল সংশয় দূর করুন। সহিহ-শুদ্ধভাবে রোজা পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএম