ঢাকাঃ রোজাদার ব্যক্তি মাঝেমাঝে এমন সমস্যার সম্মুখীন হন যে, রোজা ভেঙে গেছে কি না—সে বিষয়ে দ্বিধায় পড়ে যান। রোজা সংক্রান্ত মাসায়েল জানা না থাকার কারণে এমন হওয়াটা স্বাভাবিক। তাদের জ্ঞাতার্থে এখানে সেরকম বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো, যেসব কারণে আসলে রোজা ভাঙে না।
১) ভুলে পানাহার বা স্ত্রীসম্ভোগ করা। (শামি: খ. ৩, পৃ. ৩৬৫); তবে ওই ভুলকারী লোকের যদি রোজা রাখার শক্তি থাকে, তাহলে কেউ তাকে রোজার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিত। আর যদি রোজা রাখার শক্তি না থাকে, তাহলে স্মরণ না করে দেওয়া উত্তম। (আল-ওয়াল ওয়ালিযিয়্যাহ: খ. ১, পৃ. ২০২)
২) অনিচ্ছাবশত গলার মধ্যে ধোঁয়া, ধুলাবালি, মশা, মাছি চলে গেলে রোজা ভঙ্গ হয় না। (শামি: খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৬)
৩) তেল, সুরমা ও শিঙা লাগালে যদি গলায় তার স্বাদ পাওয়া যায়, রোজা ভাঙে না। (শামি: খ. ৩, পৃ. ৩৬৬)
৪) স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙে না। (তিরমিজি: ৭১৯)
৫) শরীর, মাথা, দাড়ি-গোঁফে তেল লাগালে। (আলমগিরি: খ. ১, পৃ. ১৯৯)
৬) দাঁতের ফাঁকে আটকে যাওয়া চানাবুটের চেয়ে ছোট জিনিস খেয়ে ফেললে। (শামি: খ. ৩, পৃ. ৩৬৭)
৭) মেসওয়াক করলে রোজা ভাঙে না। সেটি কাঁচা হোক কিংবা শুষ্ক। (আলমগিরি: খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৯৯)
৮) কাঠি দিয়ে কান খোঁচানোর ফলে কোনো ময়লা বের হলে তারপর ময়লাযুক্ত কাঠি বারবার কানে প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হয় না। (শামি: খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৭)
৯) দাঁত থেকে অল্প রক্ত বের হয়ে যদি গলার ভেতর চলে যায়, তাহলে রোজা ভাঙবে না। যদি রক্তের চেয়ে থুতুর পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (শামি: খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৮)
১০) ফুল বা মৃগনাভির ঘ্রাণ নিলে। (শামি: খ. ৩, পৃ. ৩৯৯)
১১) কাঠি দিয়ে কান খোঁচানোর ফলে কোনো ময়লা বের হলে তারপর ময়লাযুক্ত কাঠি বারবার কানে প্রবেশ করালে। (শামি: খ. ৩, পৃ. ৩৬৭)
১২) মুখের থুথু গিলে ফেলা। (নাওয়াজিল: পৃ. ১৫০)
১৩) ইচ্ছাকৃতভাবে নাকের শ্লেষ্মা মুখের ভেতর নিয়ে নিলে। (বিনায়া: খ. ৪, পৃ. ২৯৪)
১৪) তিল পরিমাণ কোনো জিনিস বাইরে থেকে মুখে নিয়ে অস্তিত্বহীন করে দেওয়া ও গলায় তার কোনো স্বাদ অনুভব না হলে। (শামি: খ. ৩, পৃ. ৩৯৪)
১৫) কপালের ঘাম কিংবা চোখের দু-এক ফোঁটা অশ্রু কণ্ঠনালিতে পৌঁছে গেলে। রোজা ভাঙে না। (বিনায়া: খ. ৪, পৃ. ২৯৪)
১৬) রোজা শুরু হওয়ার আগেই যদি লজ্জাস্থানে কোনো ওষুধ রাখা হয়। তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (রহিমিয়া: খ. ৪, পৃ. ২৯৪)
১৭) যেকোনো ধরনের ইনজেকশন বা টিকা লাগানো। তবে এমন ইনজেকশন বা টিকা লাগানো মাকরুহ, যেগুলো দ্বারা রোজার কষ্ট বা দুর্বলতা দূরীভূত হয়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: খ. ১, পৃ. ৩৭৯)
১৮) ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্ত বের করা হলে রোজা নষ্ট হবে না। আর দুর্বলতার আশঙ্কা না থাকলে মাকরুহও হবে না।
১৯) ভেজা কাপড় শরীরে দেওয়া অথবা ঠাণ্ডার জন্য কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া অথবা গোসল করা মাকরুহ নয়। (শামি: খ. ৩, পৃ. ৩৯৪; দারুল উলুম: খ. ৬, পৃ. ৪০৫; বুখারি)
২০) স্বপ্নে কিংবা সহবাসে যদি গোসল ফরজ হয়ে থাকে এবং সুবেহ সাদিকের আগে গোসল না করে রোজার নিয়ত করে, তাহলে তার রোজার অসুবিধা হবে না। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: খ. ১, পৃ. ৩৮০)
২১) গলা খাঁকারি দিয়ে খাদ্যনালি থেকে মুখে কাশি বের করা, তারপর আবার গিলে ফেলা উচিত নয়। তবে, এটি মাকরুহও নয়। (শামি: খ. ৩, পৃ. ৩৭৩)
২২) মাথা অথবা চোখে ওষুধ দেওয়া। (এমদাদুল ফাতাওয়া: খ. ২, পৃ. ১২৭)
২৩) রোজা অবস্থায় নাকে ওষুধ ব্যবহার করার মাধ্যমে ব্রেনে না পৌঁছলে। (মাহমুদিয়া: খ. ১৫, পৃ. ১৬৯)
২৪) শরীরের কোনো ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বা রক্ত প্রবাহিত হলে বা রক্ত বের করলে রোজা নষ্ট হয় না। তবে রোজাদার থেকে বের করা মাকরুহ। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: খ. ১, পৃ. ২৮)
২৫) ডাক্তার যদি চিকিৎসার কোনো শুকনো যন্ত্র পেটে প্রবেশ করায়, অতঃপর তা বের করে ফেলে, তাহলে রোজা নষ্ট হবে না। (আল-ফিকহুল হানাফি)
২৬) পানিতে ডুব দেওয়ার পর কানের ভেতর পানি চলে গেলে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে পানি দিলে রোজা মাকরুহ হয় না। (বিনায়া: খ. ৪, পৃ. ২৯৪; আলমগিরি: খ. ১, পৃ. ২০৪)
২৭) জৈবিক উত্তেজনায় শুধু দৃষ্টিপাতের কারণে যদি বীর্যপাত হয়, তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না। (আহকামে জিন্দেগি, পৃ. ২৪৯)
২৮) হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ঘ্রাণ নিলে রোজা ভাঙে না। (মাহমুদিয়া: খ. ১৫, পৃ. ১৮০)
২৯) রোজা অবস্থায় পাইপের মাধ্যমে মুখে হাওয়া নিলে। (মাহমুদিয়া: খ. ১৫)
৩০) পান খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলি করা সত্ত্বেও যদি থুথুতে লালাভাব থেকে যায়, তাহলে রোজা ভাঙবে না; মাকরুহও হবে না। (এমদাদুল ফাতাওয়া: খ. ২, পৃ. ১৩১)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সহিহ সুন্নাহ মোতাবেক রোজা রাখার তাওফিক দান করুন এবং প্রত্যেকের রোজা কবুল করুন। আমিন।
এমএম