ঢাকাঃ রাজধানীর উত্তরায় ডাচ বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী আকাশসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। সেই সঙ্গে ছিনতাই হওয়া টাকার মধ্যে আরও ৫৮ লাখ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. হৃদয় (২১), মো. মিলন মিয়া (২৯) ও মাস্টারমাইন্ড আকাশ।
এর আগে গত রোববার (১২ মার্চ) দুই কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে তিন দফায় ৭ কোটি এক লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার হলো। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত মাস্টারমাইন্ড আকাশসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।
ডিবিপ্রধান বলেন, টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন গ্রুপ ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। কেউ ছিল পরিকল্পনাকারী, কেউ মোবাইল ও সিম সংগ্রহকারী, কেউ শুধু ঘটনার সময় ভাড়াটে হিসেবে কাজ করে।
মূলপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে কাজ করে ৪/৫ জন। তাদের মধ্যে আকাশ ও সোহেল রানা নামে দু'জন ডাকাতির ছক সাজায়।
তিনি বলেন, ডাকাতির মূলহোতা আকাশ টাকা লুটের পর মাইক্রোবাসে উঠতে না পারলেও সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আকাশ তার পূর্বপরিচিত ইমন মিলনের কাছে ডাকাতির বিষয়টি শেয়ার করে এবং তাকে এ কাজে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেয়। তাকে তারা জনবল সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়। ইমন মিলন তার পূর্বপরিচিত সানোয়াকে বিষয়টি অবগত করে এবং জনবল জোগান, সিম সংগ্রহ ও মোবাইল ফোন কেনার দায়িত্ব দেয়।
সানোয়ার আটটি নতুন সিম এবং মোবাইল সেট জোগাড় করে এবং তার নিজ জেলা সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা থেকে ডাকাতির কাজে মোট নয়জন সদস্য সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে তারা প্রত্যেকে ঘটনার দু’দিন আগে ঢাকায় জড়ো হয়। পরিকল্পনাকারীরা তাদের ঢাকায় এনে নতুন কাপড় ও জুতা কিনে দেন।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মাস্টারমাইন্ড আকাশ ও সোহেল রানা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা লুট করার বিষয়টি ইমন মিলন ও সানোয়ারের কাছে গোপন রাখে। তারা জানায়- হুন্ডির কিছু টাকা লুট করবে সেখানে প্রশাসনের লোক থাকবে। পরবর্তীতে ঘটনার দিন সবাই একত্রিত হয়ে মাইক্রোবাসে ওঠার পর বুঝতে পারেন বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ডাকাতির পর মূলহোতা আকাশ মাইক্রোবাসে উঠতে না পারায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের তুরাগ ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে ‘মানি প্ল্যান্ট লিঙ্ক’ নামে একটি বেসরকারি সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি থেকে টাকা ছিনতাই করা হয়।
সাভার ইপিজেড এলাকার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বিভিন্ন বুথে টাকা দেওয়ার জন্য রওনা হয়েছিল ‘মানি প্ল্যান্ট লিঙ্ক’। মিরপুর ডিওএইচএস থেকে রওনা হয়ে গাড়িটি তুরাগ এলাকায় পৌঁছালে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে।
পরে ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। থানা পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থা এ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনার ১০ ঘণ্টা পর রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে ছিনতাই হওয়া টাকা বহনকারী হাইয়েস গাড়িটি উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।
সে সময় গাড়িতে টাকাভর্তি তিনটি ট্রাংক পাওয়া যায়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) দিবাগত রাতে মানি প্ল্যান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসের বাদী হয়ে ডিএমপির তুরাগ থানায় মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়।
বুইউ