চুরি নয়, জনগণ আমাদের স্বতস্ফূর্ত ভোট দেয়: শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৬, ২০২২, ০৩:২১ পিএম

ঢাকাঃ আওয়ামী লীগ কখনও ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যায়নি, জনগণের স্বতস্ফূর্ত ভোটে প্রতি বার ক্ষমতায় গিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে বলেও দাবি করেন সরকারপ্রধান। 

তিনি বলেন, ‘ভোট চুরি করলে মানুষ ছেড়ে দেয় না এটা খালেদা জিয়ার মনে থাকা উচিত। আমাদের অপবাদ দেওয়া হয়- ভোট চুরির। আমরা ভোট চুরি করতে যাবো কেন? জনগণ স্বতঃফূর্তভাবে আমাদের ভোট দেয়। ভোট চুরি, ভোট কারচুপি- এই কালচার কে দিয়েছে? জিয়াউর রহমান। হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে জনগণের ভোট ছিনিয়ে নিয়েছেন। ‘না’র ব্যালট পাওয়া যায়নি। সব ‘হ্যাঁ’ ভোটই ছিল।’

মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গত নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির কারণ ব্যাখ্যা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি জিতবে কীভাবে? ২০১৮ সালের নির্বাচন, এক সিটে যদি তিনজনকে নমিনেশন দেয়! একদিকে ফখরুল একজনকে দেয়, রিজভী একজনকে দেয়, আর লন্ডন থেকে তারেক দেয় আরেকজনকে। যে যত টাকা পায়! সেখানে হলো টাকার খেলা। তারপর নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে বলে আমাদের ইলেকশন করতে দিল না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির দুইজন নেতা আমার কাছে এসে নালিশ করে গেছেন। সিলেটের এনাম চৌধুরী আমার কাছে এসে বলে গেছেন, তারেক রহমান আমার কাছে টাকা চেয়েছে। টাকা দিতে পারি নাই। তাই আমার নমিনেশন বাতিল করে যার কাছ থেকে টাকা পেয়েছে তাকে দিয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মোরশেদ খান, তিনি নিজে বলেছেন, তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চেয়েছে। তিনি বলেছেন, আমি টাকা দিতে পারব না। তাহলে আপনার নমিনেশন ক্যান্সেল। এই হলো তাদের ২০১৮ নির্বাচন। যে টাকা দেবে, সেই প্রার্থী। যে দলের এই অবস্থা এরা গণতন্ত্র উদ্ধার করবে!’

বিএনপি আওয়ামী লীগের থেকে রাজনীতি শিখেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি কিছু রাজনীতি শিখেছে আমাদের সঙ্গে কিছু আন্দোলন করে। এরশাদবিরোধী আন্দোলন করে।’

বিএনপির শাসনামলে দেশের শিক্ষার হার কমে গিয়েছিল। বর্তমানে দেশের শিক্ষার হার ৭৫ শতাংশ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ সামনের দিকে আগায়। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ পেছনের দিকে যায়। কথায় বলে না, ভূতের পা পেছন দিকে!’

বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার পেটুয়াবাহিনী সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়। ঢাবিতে রাতের অন্ধকারে ভিসিকে সরিয়ে নতুন আরেকজনকে বসিয়ে ভিসির পদটাও দখল করে নেয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষকসহ বহু নেতাকর্মী হত্যা করে। তাদের অত্যাচারে বাংলাদেশ ছিল নির্যাতিত। শুধু ক্ষমতায় থাকলেই না, ক্ষমতার বাইরে থেকেও অগ্নিসন্ত্রাসের কথা সবার জানা। ২০১৩-১৪ সালে প্রায় তিন হাজার মানুষকে দগ্ধ করেছে তারা। বাস, লঞ্চ ও রেল কোনো কিছুই তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।’

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে ছাত্রদলই যথেষ্ট। এর প্রতিবাদে আমি ছাত্রলীগের হাতে বই-খাতা কলম তুলে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম- শিক্ষা শুধু নিজেরাই গ্রহণ করবে না, গ্রামে গিয়ে নিরক্ষর মানুষকে শিক্ষা দেবে। তারা সেটিই করেছি।’

বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের ‘বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীজীবী’ বলে আখ্যা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের বুদ্ধিজীবী, তারা আসলে বুদ্ধিজীবী না, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীজীবী। তারা একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাকে নেতা মেনে ২১ আগস্ট গ্রেনেন্ড হামলাকারী, মানিলন্ডারিংকারী, অর্থ চোরাকারবারী তাদের সাথে জড়ো হয় সরকার উৎখাতের জন্য।’

ব্যাংকে টাকার অভাব নেই জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘প্রত্যেক ব্যাংকেই টাকা আছে৷ গুজবে কান দেবেন না। মিথা কথা বলে মানুষকে ভাওয়াবাজি দিচ্ছে। এটার দিকে সকলের বিশেষ নজর দিতে হবে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অপরাধ কী? আওয়ামী লীগ দুই তৃতীয়াংশ মেজরিটি পেয়ে সরকার গঠন করে। সরকার গঠন করেই আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য কাজ শুরু করে। বাংলাদেশ আজকে আর সেই দুর্দশাগ্রস্ত বাংলাদেশ না।’

বিএনপি যে গণতন্ত্রের কথা বলে, সেটা গণতন্ত্র না। সেটি 'ক্যান্টমেন্টে বন্দি কারফিউতন্ত্র' উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করতে পারেন, সেটা ছিল কারফিউতন্ত্র, গণতন্ত্র না।’

বুইউ